গ্লেন ফিলিপস আসলে যা চান, তাই পারেন। তিনি তরল পদার্থের মত, যখন যে পাত্রে রাখা হয় তারই আকার ধারণ করেন। কখনো তাঁর মধ্যে ভর করেন ল্যান্স ক্লুজনার বা আব্দুর রাজ্জাক, কখনো বা মুত্তিয়া মুরালিধরনের ছায়া পড়ে তাঁর শরীরে।
আর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রথম দিনে করাচিতে তিনি হয়ে উঠলেন জন্টি রোডস! করাচির মাটিতে যেন এককালের সেই সুপারম্যানকেই ফিরিয়ে আনলেন কিউই অলরাউন্ডার। তাতে কপাল পুড়ল মোহাম্মদ রিজওয়ানের, পাকিস্তানের, সম্ভবত গোটা দলের শিরোপার আশাও শেষ হয়ে গেল।
ক্রিকেট শুধুই ব্যাট-বলের খেলা নয়, সেখানে ম্যাজিক লাগে। আর সেই ম্যাজিকটাই যেন করে দেখালেন গ্লেন ফিলিপস। কাভার পয়েন্ট অঞ্চলে শিকারী পাখির মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে যা করলেন, তা হয়তো আসরের সেরা ক্যাচ হয়েই থেকে যাবে।
রিজওয়ানের ব্যাট থেকে আসা বলটা যখন গ্যালারির দিকে ছুটছিল, তখনো কেউ ভাবেনি, মুহূর্তের ঝলকে একটা হাত এসে সেটা থামিয়ে দেবে। কিন্তু, ফিলিপসের ভাবনা আলাদা। তাঁর চাই অসম্ভবকে সম্ভব করার আনন্দ, আর সেই ম্যাজিকে তিনি খাঁচা বন্দী করলেন রিজওয়ানের শট।
এমনিতেই পাকিস্তানের ওপর চাপ বাড়ছিল। ৩২১ রান তাড়া করতে নেমে প্রথম ১০ ওভারে ৪৮ টা ডট বল! রান নেই, স্রেফ দম বন্ধ করা একটা পরিস্থিতি। সেই দেয়াল ভাঙতে চাইলেন রিজওয়ান, কিন্তু ফিলিপস চাইলেন অন্য কিছু।
উইলিয়াম ও’রুকের শর্ট অ্যান্ড ওয়াইড ডেলিভারি, কাট করেছিলেন রিজওয়ান—নির্ঘাত চার! কিন্তু, ফিলিপসের কাছে ‘নির্ঘাত’ বলে কিছু নেই। তিনি আকাশে ভেসে উঠলেন, এক হাতে বল লুফে নিলেন, যেন লং জাম্পের অ্যাথলেট! যেন উড়ন্ত এক বাঁজপাখি।
সম্ভবত টুর্নামেন্টের প্রথম দিনেই দেখা হয়ে গেল আসরের সেরা ক্যাচ! গ্লেন ফিলিপস আসলেই ‘ফ্রিক’। যে ব্যাট হাতে মাঠ গরম করেন, বোলিংয়ে কখনো পার্ট-টাইম মুরালিধরন হয়ে যান, সেই তিনিই এবার ফিল্ডিংয়ে দেখালেন অকল্পনীয় শৈলী। করাচির গ্যালারিতে তখন স্তব্ধতা, পাকিস্তানি ডাগআউটে হতাশার ছায়া। ফিলিপস নিজের ম্যাজিক দেখিয়ে চলে গেলেন নিজের ফিল্ডিং পজিশনে, আর পেছনে রেখে গেলেন পাকিস্তানের স্বপ্নভঙ্গের গল্প।
ওভার দুয়েক বাদে ওই জায়গাটা দিয়ে আবারও চার মারতে চাইলেন বাবর আজম। কিন্তু, আবারও সামনে গ্লেন ফিলিপস। ভাগ্যিস এবার ক্যাচ ওঠেনি!