সময়ের সাথে কত কিছুই না বদলায়! সম্ভবত বদলায় না শুধু বাংলাদেশের ক্রিকেটটাই। ক্রিকেট মানচিত্র সব সময় ‘সম্ভাবনাময়’ শব্দেই আঁটকে থাকে এ দেশের ক্রিকেট। বাংলাদেশ ওয়ানডে ক্রিকেটে ভাল খেলা শুরু করেছে বছর দশক আগেই। একইভাবে, বাকি দুই ফরম্যাটের দৈন্যদশার ধারাবাহিক চিত্রেরও কোনো পরিবর্তন নেই।
চলমান অপরিবর্তিত এই দশায় এবার প্রাক্তনকেই আবার মনে ধরেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি)। কোচ হিসেবে আবারো টাইগারদের ডেরায় চান্দিকা হাতুরুসিংহে। যার সাথে শেষটা ছিল তিক্ততায় পূর্ণ, সেই আবার তাঁকেই ফিরিয়ে এনেছে বিসিবি। বিসিবি’র বরাবরই ভাষ্য, এ ছাড়া আর উপায় ছিল না। সামনে বিশ্বকাপ। হাতুরু ছাড়া কেইবা ভাল অপশন হতেন।
কথাটা একদম সত্য। বাংলাদেশ ক্রিকেটে ভিন্ন এক জাগরণ এসেছিল তাঁর সময়েই। সেই যে তিনি বাংলাদেশ ছাড়লেন। এরপর বিচ্ছিন কিছু সাফল্য ছাড়া মনে রাখার মতো কিছুই আর হয়নি। অবস্থাদৃষ্টে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ে, নেদারল্যান্ডসকে হারানোয় বড় সাফল্যের মত মনে হয়েছে একটা সময়ে।
যাহোক, হাতুরুর ২.০ যাত্রা শুরু হচ্ছে ঘরের মাটিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে। হাতুরু নতুন কেউ নন। কিন্তু তাঁর দর্শনের আঁচটা অনেকেরই জানা। কথিত আছে, তাঁর প্রথম মেয়াদে তিনি কড়া হেডমাস্টারের ভূমিকায় ছিলেন। আবার এটাও অনেকে কোন দ্বিধা ছাড়াই স্বীকার করবেন যে, বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে কোচ হিসেবে সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করেছিলেন হাতুরুসিংহে। তো, সেই হাতুরু তো আর বছর চারেকের মধ্যে একেবারেই পাল্টে যাবেন না। নিজের ধরন, ভাবনা ঠিকই প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করবেন।
এখন সেই যাত্রায় সম্ভবত হাতুরুর চোখ থাকবে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপে। সবশেষ সিরিজে থাকা ব্যাটারদের মধ্যে তিনজন নেই। অথচ, এদের মধ্যে দুইজনই সে সিরিজের একাদশে ছিলেন। কিন্তু এবার স্কোয়াড থেকেই বাদ পড়েছেন। বুঝাই যাচ্ছে, ব্যাটিং লাইনআপে একটা রদবদল সামনে সিরিজেই হতে যাচ্ছে।
কেমন পরিবর্তন সেই গুলো? চলুন আলোচনার ডালপালা একটু ছড়িয়ে দেওয়া যাক। সবশেষ বাংলাদেশ সিরিজ খেলেছিল ভারতের বিপক্ষে। তো তিন ম্যাচের সেই ওয়ানডে সিরিজে তামিমের অনুপস্থিতিতে তাঁর জায়গায় খেলেছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত আর এনামুল হক বিজয়। টানা তিন ম্যাচে সুযোগ পেয়েও বড় কোনো ইনিংসের দেখা পাননি বিজয়। আর এ কারণেই আসন্ন ইংল্যান্ড সিরিজে তাঁর দলে জায়গা হয়নি।
অবশ্য বিপিএলে দুর্দান্ত পারফর্ম করা শান্ত ঠিকই স্কোয়াডে নিজের জায়গা ধরে রেখেছেন। তবে হাতুরুর একাদশে তিনি ওপেনারের বিবেচনায় সম্ভবত থাকছেন না। কারণ তামিম দলে ফেরায় লিটনের সাথে তিনিই ইনিংস শুরু করবেন। এটাই অনুমেয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তিনে খেলবেন কে? সবশেষ ওয়ানডে ম্যাচে এই পজিশনে খেলেছিলেন সাকিব। তবে তার আগের দুটি ম্যাচে আবার তিনি চারে ব্যাটিং করেছিলেন। তাই নাম্বার তিনে বিবেচনা করা হতে পারে শান্ত কিংবা প্রথমবারের মতো দলে ডাক পাওয়া তৌহিদ হৃদয়কে।
তিনে না খেললে চারে নিশ্চিতভাবেই খেলবেন সাকিব। আর পাঁচে মুশফিকুর রহিম। তবে এখানে একটা ‘কিন্তু’ আছে। গুঞ্জন আছে, আগের মেয়াদে মুশফিকের সাথে সম্পর্কে বেশ খানিকটা ফাটল ধরেছিল হাতুরুর। তবে সেই সময়ে মুশফিক ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে থাকাই হাতুরুর পক্ষে তেমন কিছুই করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু মুশফিক সেই সময় পেছনে ফেলে এসেছেন অনেক আগেই। অনেক দিন ধরেই রয়েছেন অফফর্মে।
এমনিতে মুশফিকের বয়স বেড়েছে, তার উপরে সাম্প্রতিক ফর্মও তাঁর হয়ে কথা বলছে না। তাই এটা নিঃসন্দেহে বলা যেতেই পারে, হাতুরু আগের রূপে বলবৎ থাকলে তাই মুশফিকের সামনে প্রতিকূল কিছুই অপেক্ষা করছে। একই কথা প্রযোজ্য, রিয়াদের ক্ষেত্রেও। কান পাতলেই শোনা যায়, সে সময়ে রিয়াদের সঙ্গেও নাকি হাতুরুসিংহের সম্পর্ক ততটা ভাল ছিল না। এই মুহূর্তে রিয়াদ শুধু ওয়ানডে ফরম্যাটেই সুযোগ পাচ্ছেন। তবে ফর্ম না থাকলে সে সুযোগটাও যে তিনি হারাবেন, তা বলাই বাহুল্য।
হাতুরুসিংহে বরাবরই তরুণদের নিয়ে পরিকল্পনার ছক কষতে পছন্দ করেন। আর এটাই আশীর্বাদ হয়ে আসতে পারে আফিফ হোসেন ধ্রুব কিংবা মেহেদি হাসান মিরাজের জন্য। কারণ দুজনই লোয়ার মিডল অর্ডারে ব্যাট করেন। অথচ আফিফ পুরোদস্তুর একজন টপ অর্ডার ব্যাটার। এখন হাতুরু চাইলেই আফিফকে উপরের অর্ডারে প্রতিষ্ঠা করতে পারেন। আর মিডল অর্ডারে সুযোগ পেতে পারেন মেহেদি হাসান মিরাজ।
আগের সিরিজে থাকা ইয়াসির আলী রাব্বি এবং নুরুল হাসান এই সিরিজের দলে নেই। তবে গুঞ্জন আছে, ১৫ তম সদস্য হিসেবে দলে যুক্ত হতে পারেন রাব্বি। কিন্তু স্কোয়াডে ঢুকলেও আফিফ, মিরাজদের টপকে একাদশে সুযোগ পাওয়া তাঁর জন্য কঠিনই হবে। সে হিসেবে আপাতত বাতিলের খাতাতেই তালিকাভূক্ত হতে পারেন রাব্বি।
অবশ্য এ সব কিছুই এখন পর্যন্ত সম্ভাব্যতার জালে আটকে রয়েছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দেখা মিলবে হাতুরুর রণকৌশল। এখন সে সব কৌশল কতটা ফলপ্রসু হবে কিংবা দলে কতটা রদবদল হতে পারে, তা বুঝতে আরো কিছু দিনের অপেক্ষা।