তারকা অভিনেতা অক্ষয় কুমারের হিট ছবি ‘এয়ারলিফট’ অনেকেই দেখেছেন, মুভিটা যেমন সারা ফেলেছে, গানগুলোও তেমনই ভালো ছিল। এর মধ্যে একটি গান, ‘সোচ না সাকে’ শ্রোতাদের মাঝে ক্রেজ তুলে ফেলেছিল।
সেই গানের মূল গায়ক ছিলেন হার্ডি সান্ধু। তাঁর গানটাই একটু ভিন্ন ভাবে উপস্থাপন করা হয় ছবিটিতে। এসময়ের একজন উদীয়মান প্লেব্যাক গায়ক এই হার্ডি। সোচের পর ব্যাকবোন, বর্ন ব্লো, জোকারের পর একের পর এক হিট হট গান উপহার দিয়ে গেছেন এই গায়ক। তাই তাকে বর্তমানে পাঞ্জাবের সেরা গায়ক বললে খুব একটা বেমানান হবে না। সম্প্রতি ‘গুড নিউজ’ ছবিতে ‘চন্ড্রিগড় মে’ গানটাও বেশ জনপ্রিয়তটা পায় তাঁর কণ্ঠে।
কিন্তু, খেলার খবরে হঠাৎ তাঁর নাম কেন? কারণ, এই পাঞ্জাবি প্লেব্যাক সিঙ্গারের ক্যারিয়ারের প্রথমাংশ সংগীত দিয়ে নয়, ক্রিকেট দিয়ে শুরু হয়েছিল। যেনতেন ভাবে নয়, রীতিমত পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবেই।
আরো বড় মজার ব্যাপার হচ্ছে, তাঁর গানের জগতে আসারই ইচ্ছা ছিল না! তাঁর ধ্যানজ্ঞান ছিল ক্রিকেটই। তাঁর পুরো নাম হারভিন্দর সিং সান্ধু। ১৯৮৬ সালের সেপ্টেম্বরে জন্ম নেওয়া সান্ধু খেলেছেন চেতেশ্বর পূজারা, শিখর ধাওয়ানের মত বর্তমান ভারতীয় দলের তারকা ক্রিকেটারদের সঙ্গে। এমনকি সেই ২০০৪ সালে বাংলাদেশের মাটিতে যে অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় সেই দলেও ছিল সান্ধু।
রঞ্চি ট্রফিও খেলেছেন। শুরুটা ছিল দারুণ, ২০০৫ সালে অভিষেক। ছিলেন ফাস্ট বোলার। তিনটা ম্যাচ খেলেছেন। তিন ম্যাচে ১২ উইকেট। এই পারফরম্যান্সের পর তাঁরও স্বপ্ন ছিল ভারতের জার্সি গায়ে চাপানোর, কিন্তু ২০০৬ থেকে ভুগতে থাকা ইনজুরি সে সুযোগটি দেয়নি।
একটা স্বপ্ন ধুলিস্যাত হলেও সান্ধুর স্বপ্ন দেখা বন্ধ হয়নি। নতুন এক স্বপ্নের বীজ বুনেছেন তিনি নিজের মধ্যে। গলার স্বর ছিল মোলায়েম, গানের চর্চা ছিল মোটামুটি আর ছিল গানের প্রতি ভালবাসা।
এদের সঙ্গী করে ঢুকে পড়েন গানের জগতে। তিনি বলছিলেন নিজের কথা, ‘আমি ১০ বছর ধরে ক্রিকেট খেলেছি, অনুর্ধ্ব-১৬ জাতীয় দলে খেলেছি, শিখর ধাওয়ান ছিল আমার রুমমেট, এরপর পূজারার সাথেও খেলেছিলাম। দেখছিলাম একসাথে জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন। কিন্তু ২০০৬ সালের কনুইতে ইনজুরি আমাকে আমার পথ থেকে ছিটকে দেয়। আমি ছিলাম ফাস্ট বোলার। আমি কিছুতেই ফিরতে পারছিলাম না। ডানহাতে তখনো ব্যথা থাকায় পুরোটা ছন্দ কখনোই পেতাম না।’
ইনজুরির জন্য ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগেও (আইপিএল) সুযোগ পাননি। তিনি বলেন, ‘যখন আইপিএল শুরু হলো, আমার জুনিয়ররা চান্স পেয়ে যাচ্ছিলো, কিন্তু আমার কোথাও ঠাই হচ্ছিল না। আমার মনের অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যাচ্ছিল। তারপর চিন্তা করলাম, অস্ট্রেলিয়া যাব, ডাক্তার, ফিজিওথেরাপিস্টদের দেখাব, ট্রিটমেন্ট করিয়ে ভারত ফিরে আরেকবার ভাগ্যপরীক্ষা করব। কিন্তু আমি সেখানে প্রায় ১১মাস ধরে নামীদামী প্রায় সবাইকে দেখানো সত্ত্বেও কোন লাভ হলো না। আমার হাতে টাকা কমে এলো, আমি সেখানে ট্যাক্সি চালিয়ে উপার্জন করেছি। দু:সময় যেন পিছুই ছাড়ছিল না।’
শোনালেন সঙ্গীতের রঙিন দুনিয়ায় নিজের প্রবেশের গল্প, ‘আমি গান ভালবাসতাম। ২০১০ সালে ফিরে এসে আবার রেওয়াজ শুরু করলাম। ২০১১ অবধি আমি শিখতে লাগলাম, যখন ভারত বিশ্বকাপ জিতে গেল। আমি তখন বেশ বুঝে গেছি এবং মেনে নিয়েছি যে, আমার হয়তো কোনদিন ভারতের হয়ে খেলা হবেনা। আমি সঙ্গীতেই ডুবে গেলাম।’
সঙ্গীতাঙ্গনে পরিচিতি পাওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘২০১২ সালে রিলিজ হলো আমার প্রথম অ্যালবাম। ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পেয়ে এই পথেই রয়ে গেলাম।’
আসলে যা ঘটে ভালোর জন্যই ঘটে। সিন্ধু যদি খেলার মাঠে থাকতেন, আমরা অমন একজন গায়ককে পেতাম না! সিন্ধুও জানতে পারতেন না, তাঁর এই অপ্রকাশিত প্রতিভার কথা।
নিয়তির কাছে তিনি হারেননি, মেসেজ দিয়েছেন হতাশায় নিমজ্জিত যুবকদের, ‘হাল ছেড়ো না বন্ধু, জেগে ওঠো!’
তিনি মনে করিয়ে দেন আমাদের পরিচিত গানের একটি লাইন, ‘হাল ছেড়ো না বন্ধু, বরং কণ্ঠ ছাড়ো জোরে!’