বয়সভিত্তিক দলে থাকতেই পেয়ে গিয়েছিলেন আয়ারল্যান্ড ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ তারকার তকমা। এবারে জাতীয় দলের হয়ে ব্যাট হাতে নিয়মিত পারফর্ম করে জানান দিচ্ছেন নিজের প্রতিভার।
হ্যারি টেক্টরের পুরো পরিবারই যেন ক্রিকেটময়। জ্যাক, হ্যারি, টিম তিন ভাইই ছোটদের বিশ্বকাপে জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এমনকি ছোট বোন অ্যালিসও আয়ারল্যান্ডের বয়সভিত্তিক দলের নিয়মিত সদস্য। সবমিলিয়ে তাই আয়ারল্যান্ডে ক্রিকেটের অবকাঠামো উন্নত না হলেও বেড়ে উঠতে অসুবিধা হয়নি হ্যারি টেক্টরের।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যাটসম্যান হিসেবে খ্যাতি কুড়োলেও বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে ব্যাপারটা ছিল উল্টো। সেই সময়টাতে টেক্টর মূলত মনোযোগী ছিলেন বোলিংয়ে, ব্যাটিং করতে নামতেন নিচের দিকেই। ছোটদের বিশ্বকাপে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ আট উইকেট শিকার করেন ডানহাতি অফস্পিনে।
কিন্তু জাতীয় দলে আগমণের পর থেকেই ধীরে ধীরে ব্যাটিংয়ে উন্নতি আনেন এই তারকা। শুরুতে স্পিনের বিপক্ষে খানিকটা দুর্বল থাকলেও ক্রমেই শটের পরিধি বাড়িয়েছেন। খানিকটা ধীরস্থির শুরু করলেও সময় গড়ানোর সাথে সাথে খোলস ছেড়ে বেরোন দারুণভাবে। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকানো নয়, জাতীয় দলের জার্সিতে মুগ্ধতা ছড়িয়ে গেছেন টেক্টর।
জাতীয় দলের হয়ে ভারতের বিপক্ষে টি টোয়েন্টি সিরিজ দিয়েই মূলত গোটা বিশ্ববাসীর নজর কাড়েন টেক্টর। সেবারে ভারতীয় বোলারদের উপর দিয়ে রীতিমতো ঝড় বইয়ে দেন এই তরুণ। ২০২২ সালে ওয়ানডেতে রীতিমতো স্বপ্নের মতো এক বছর কাটান টেক্টর। ছয় ম্যাচে মাঠে নেমে পাঁচবারই খেলেন পঞ্চাশোর্ধব রানের ইনিংস।
২০২৩ সালে অবশ্য বাংলাদেশ সফরটা ভালো কাটেনি। ব্যাটে তেমন রান পাননি, গোটা সিরিজে বড় ইনিংস খেলতে পারেননি একবারো। সেই কারণেই কিনা খানিকটা জেদ চেপে বসেছিল তাঁর উপর। মাসখানেক পেরিয়ে যখন বাংলাদেশকে পেলেন নিজেদের ডেরায়, রীতিমতো ঝড় তুললেন ব্যাট হাতে।
প্রথম ম্যাচটা বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ায় সরাসরি বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্নে ইতি টানতে হয়েছে টেক্টরদের। সেই কারণেই কিনা দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশি বোলারদের নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা করলেন এই তারকা। হাসান মাহমুদের ঝড়ে দুই আইরিশ ওপেনার সাজঘরে ফিরলেও পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন টেক্টর।
এরপরের গোটা ইনিংসজুড়েই কেবল টেক্টর বন্দনা। শরীফুল কিংবা তাইজুলরা, একবারো চেপে বসতে পারেননি। বরং আক্রমণাত্নক ব্যাটিংয়ে রানের গতিটা ক্রমশই বেড়েছে। কখনো সাকিবকে লেগ সাইডে সীমানার বাইরে পাঠিয়েছেন, আবার কখনো ইবাদতের ডেলিভারি আছড়ে ফেলেছেন সোজা গ্যালারীতে। শেষপর্যন্ত সাত চার এবং দশ ছক্কায় ১১৩ বলে ১৪০ রানে ইনিংস খেলে যখন সাজঘরে ফিরছেন ততক্ষণে সর্বনাশ হয়ে গেছে বাংলাদেশের। এই ইনিংস দিয়েই ওয়ানডেতে গড়টা পঞ্চাশ পেরোলেন এই তারকা।
সবাই ভেবেছিলেন ইয়ন মরগ্যান, এড জয়েসদের পথ ধরে হয়তো ইংল্যান্ড জাতীয় দলেই নাম লেখাবেন প্রতিভাবান এই ব্যাটার। কিন্তু টেক্টর যেন অন্য ধাতুতে গড়া। তাঁর ধ্যানজ্ঞান পুরোটা জুড়েই কেবল আয়ারল্যান্ড ক্রিকেট। শুরুটা আলো ঝলমলে হলেও ক্যারিয়ারে এখনো অনেক পথ পাড়ি দেয়া বাকি টেক্টরের।