হাতুরুসিংহে রেসিপির টি-টোয়েন্টি দল

রনি তালুকদার সেই ২০১৫ সালে শেষ ও ক্যারিয়ারের একমাত্র টি-টোয়েন্টি ম্যাচটা খেলেছিলেন। তখন বাংলাদেশে চান্দিকা হাতুরুসিংহের যুগ। এবারও তাই। তবে, রনি অবশ্য পারফর্ম করেই আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারটা পুনরুদ্ধার করেছেন। গেল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪২৫ রান করেন তিনি ৩৫.৪১ গড় ও ১২৯.১৭ স্ট্রাইক রেটে।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের জন্য ঘোষণা করা দলে চমক এই রনি-সহ মোট পাঁচটা। প্রথমবার দলে জায়গা পেলেন তৌহিদ হৃদয়, তানভির ইসলাম ও রেজাউর রহমান রাজা। সেই ২০২১ সালের পাকিস্তান সিরিজের পর আবারও জাতীয় দলে ফিরেছেন শামিম হোসেন পাটোয়ারি।

এতগুলো চমকের কারণেই কি না দলে এক গাদা রদবদল হয়েছে। ১৫ জনের স্কোয়াড থেকে জায়গা হারিয়েছেন ইয়াসির আলী চৌধুরী রাব্বি, মোসাদ্দেক হোসেন, শরিফুল ইসলাম, এবাদত হোসেন ও সৌম্য সরকার। দল ঘোষণার পরই বোঝা গেল, টি-টোয়েন্টিতে নিজের স্বভাবত পরীক্ষা-নিরীক্ষাটা হাতুরুসিংহে চালিয়ে যাবেন।

টি-টোয়েন্টিতে লঙ্কান এই কোচ কেমন এক্সপেরিমেন্ট করতে পারেন – সেটা বোঝা গিয়েছিল ২০১৬ সালে – জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। সেবার এক ম্যাচেই তিনি চার জনের অভিষেক করিয়ে দিয়েছিলেন। সেই চার জন মানে – আবু হায়দার রনি, মোহাম্মদ শহীদ, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত কিংবা মুক্তার আলী কেউই বাংলাদেশের জন্য অবশ্য বড় কোনো সম্পদ হতে পারেননি।

তবে, এখানে হাতুুুরুসিংহের থিওরি একদম পানির মত সহজ। ক্রিকেটের সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত এই ফরম্যাটটিতে এখনও বাংলাদেশের কোনো কিছু হারানোর ভয় নেই। ফলে, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার এটাই আদর্শ সময়।

আর যারা বাদ গেছেন, তাদের কেউই সাম্প্রতিক সময়ের বিবেচনার ‘প্রমাণিত’ কোনো পারফর্মার নন। আর যারা দলে এসেছেন তারা বিপিএলে পারফর্ম করে এসেছেন। তাই, আপাতত ভরসাটা রাখাই যায়।

এই যেমন তৌহিদ হৃদয়ের টি-টোয়েন্টি দলে থাকাটা ছিল অনুমিতই। এবারের বিপিএলে ৩৬.৬৩ গড় ও ১৪০.৪১ স্ট্রাইক রেটে ৪০৩ রান করেন তিনি, টুর্নামেন্টের যা তৃতীয় সর্বোচ্চ। ম্যাচ সেরা হন তিনি চার বার। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে দলেও আছেন তিনি।

এবারের বিপিএলে তানভীর ইসলাম ওভার প্রতি ৬.৩৬ রান দিয়ে ১৭ উইকেট নেন। আসরে যা পেসার হাসান মাহমুদের সাথে যৌথভাবে সর্বোচ্চ। গত বিপিএলেও ১৬ উইকেট নিয়ে তিনি ছিলেন যৌথভাবে তৃতীয় উইকেট শিকারি। ফলে, তাঁর ডাক পাওয়াটা খুবই প্রত্যাশিত।

আগেই টেস্ট স্কোয়াডে ডাক পাওয়া রেজাউর রহমান রাজাও স্মরণীয় বিপিএল কাটিয়েছেন। ম্যাচ-সেরা হয়ে এবারের আসর শুরু করেছিলেন তিনি। পরে নিয়মিত একাদশে না থাকলেও শেষ পর্যন্ত তার শিকার ৮ ম্যাচে ১৩ উইকেট।

অন্যদিকে, শামিম পাটোয়ারি আট ইনিংস ব্যাট করে ১৭৫ রান করেন তিনি। ম্যাচ জেতানো একটি ইনিংসেই করেন ৭১ রান। টুর্নামেন্টে তার স্ট্রাইক রেট ছিল ১৩৫.৬৫। শামিমের সামগ্রিক পারফরম্যান্স খুব বড় কিছু না হলেও, তাঁর সামর্থ্যটা কারোই অজানা নয়। শামিম সাহসী ও স্মার্ট ক্রিকেটার। স্রেফ ভরসা রেখে খেলাতে হবে। সেই ভরসাটা হাতুরুসিংহে রাখতে জানেন। এবার টিম ম্যানেজমেন্টও হাতুরুর মতটা মেনে নিলেই হয়।

সবচেয়ে বড় কথা হল – ২০ ওভারের এই ফরম্যাটটা এখনও বাংলাদেশের জন্য বড় একটা রহস্যের নাম। কখনওই এই ফরম্যাটে বড় কোনো সাফল্য পায়নি সাকিব-তামিমরা। তাই, আক্ষরিক অর্থেই অচলায়তন ভাঙতে দলকে অনেক ভাঙা-গড়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।

হাতুরুসিংহে আসায় এবার অন্তত সেই প্রোসেসটা শুরু হল। একবার সিস্টেমটা দাঁড় করানো গেলেই রক্ষা এবার।

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link