অন্যান্য পেশার তুলনায় ক্রিকেট খেলাটা একটু ব্যতিক্রম। এখানে একজন ক্রিকেটার চাইলেও দীর্ঘদিন খেলা চালিয়ে যেতে পারেন না। সাধারণত ৩৫-৪০ বছর বয়সের পর তাদের শরীরটা বেঁকে বসে। যে কারণে অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেক ক্রিকেটারকে ব্যাট-প্যাড তুলে রাখতে দেখা যায়।
ক্রিকেটারদেরও একদিন না একদিন খেলা ছাড়তে হয়। তাই সব ক্রিকেটারই একটা ভালো অবস্থানে থেকে ক্যারিয়ারের ইতি টানতে চান। এক্ষেত্রে কেউ সফল হন তো কেউ হন ব্যর্থ। দুর্ভাগ্যবশত অনেক ক্রিকেটারই খেলাটি থেকে যথাযথভাবে বিদায় নিতে পারেন না। অনেক ক্রিকেট তারকার গৌরবময় ক্যারিয়ারের পরিণতি হয় দু:খজনক। সেরকম কয়েকজন ক্রিকেটারকে নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন।
- নভজ্যোৎ সিং সিধু (ভারত)
খেলোয়াড়ি জীবনে ছিলেন আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান। ডাকা হতো ‘সিক্সার সিধু’ নামে। প্রথম বল থেকে বোলারদের ওপর আধিপত্য বিস্তার করে খেলাই ছিল সিধুর স্বভাব। যদিও সাজঘরের রাজনীতিতে ক্যারিয়ারের শেষটা সুখকর হয়নি তাঁর। বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, দলের প্রধান কয়েকজন খেলোয়াড় ‘৯৯ বিশ্বকাপের ভারত দলে সিধুকে নিতে চাননি। তার কয়েকমাস পর খেলা ছাড়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন তিনি।
- বিনোদ কাম্বলি (ভারত)
শচীন টেন্ডুলকারের বাল্যবন্ধু বিনোদ কাম্বলি ছিলেন অত্যন্ত প্রতিভাধর একজন ব্যাটসম্যান। টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম ৮ ম্যাচে ২টি করে শতক ও দ্বিশতক হাকান তিনি। তবে সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেটে সাফল্য ধরে রাখতে যে লক্ষ্য ও ক্ষুধা প্রয়োজন তার ঘাটতি ছিল কাম্বলির মাঝে। তাই শীঘ্রই তাঁর পারফরম্যান্সে ভাটা পড়ে এবং দল থেকে বাদ পড়েন তিনি। তাতে মাত্র ১৭টি ম্যাচ খেলেই কাম্বলির টেস্ট ক্যারিয়ারের সমাপ্তি ঘটে।
- ভিভিএস লক্ষ্মণ (ভারত)
২০১১ সালে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ধবলধোলাই হওয়া ভারত দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন ভিভিএস লক্ষ্মণ। সফরে ৮ ইনিংসে ব্যাট করে মাত্র ১টি অর্ধশতকের দেখা পান তিনি। এতে তাকে কেন্দ্র করে চারদিকে তুমুল সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। সেসময় তিনি সমালোচনাগুলো অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নেন এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরে চলে যান।
- হেনরি ওলোঙ্গা (জিম্বাবুয়ে)
জিম্বাবুয়ের এই ফাস্ট বোলারের বেশ উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ছিল। তাঁর ছিল দৃঢ় রাজনৈতিক বিশ্বাস। ২০০৩ সালে বিশ্বকাপের সময় কঠোর ইঙ্গিত দিয়ে জিম্বাবুয়ের সরকারের সমালোচনা করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। সরকারের বিরুদ্ধে নিজের অসহযোগের কথা জানাতে বাহুতে কালো কাপড় বেঁধে ম্যাচ খেলেন ওলোঙ্গা। তাঁর দেশে গণতন্ত্রের মৃত্যু হয়েছিল বলে তিনি বিশ্বাস করতেন তখন। শেষ পর্যন্ত পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে এবং পরে মাঠের ক্রিকেটে আর দেখা যায়নি তাকে।
- মার্ক বাউচার (দক্ষিণ আফ্রিকা)
সামারসেটের বিপক্ষে একটি প্রস্তুতি ম্যাচে কিপিং করছিলেন বাউচার৷ ইমরান তাহিরের বলে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানের উইকেট ভেঙে গেল। ঠিক সেসময়ই বাধল বিপত্তি। দুর্ভাগ্যক্রমে স্ট্যাম্পের বেল উড়ে এসে বাউচারের বাম চোখে মারাত্মকভাবে আঘাত হানে।
মার্ক বাউচার তখন ক্যারিয়ার-সায়াহ্নে৷ কিন্তু তাহিরের ওই গুগলি তাঁর ক্যারিয়ারের শেষটা একটু এগিয়ে নিয়ে আসে।
- মোহাম্মদ কাইফ (ভারত)
ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসের কয়েকজন সেরা ফিল্ডারের তালিকার উপরের দিকের নাম মোহাম্মদ কাইফ। এমনকি ভারতের বিখ্যাত ন্যাটওয়েস্ট সিরিজ জয়ের নায়কও তিনি। তবে প্রাক্তন কোচ গ্রেগ চ্যাপল তাঁর আমলে কিছু সাহসী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। টানা বাজে খেলায় তিনি দল থেকে কাইফকে বাদ দেন। আশ্চর্যজনকভাবে আর কখনোই দলে ফিরতে পারেননি কাইফ৷ ফলে মাত্র ২৬ বছর বয়সে থেমে যায় তাঁর ক্যারিয়ারের চাকা।
- কেভিন পিটারসেন (ইংল্যান্ড)
ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা প্রতিভাবান এই খেলোয়াড় প্রায় এক দশক ধরে একজন অপরিহার্য সদস্য হিসেবে ইংল্যান্ডের হয়ে খেলেছেন। তবে ক্যারিয়ারটা যেভাবে শেষ হয়েছে তা নিশ্চয়ই তিনি মনে রাখতে চাইবেন না। অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত ২০১৩-১৪ অ্যাশেজে ধবলধোলাই হওয়ার পর বলির পাঁঠা বানানো হয় তাঁকে।
সিরিজে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহ করার পরেও দল থেকে বাদ পড়েন পিটারসেন। তার পর আর কখনোই ইংল্যান্ডের জার্সি গায়ে খেলতে দেখা যায়নি তাকে। ২০১৮ সালের মার্চে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসরে যান তিনি।
- জোনাথন ট্রট (ইংল্যান্ড)
তিন নাম্বারে ব্যাটিংয়ের জন্য তিনি ছিলেন ইংল্যান্ডের পরম নির্ভরযোগ্য একজন ব্যাটসম্যান। যদিও ২০১৩ সালের অ্যাশেজে মিচেল জনসনের ক্রমাগত বাউন্সারের সামনে সতীর্থদের মতো তিনিও মুখ থুবড়ে পড়েন। বাউন্সারে বিপর্যস্ত ট্রট চাপজনিত অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে সিরিজের মাঝখানেই দেশে ফিরে আসেন।
তখন দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ-সংক্রান্ত অসুস্থতায় ভোগায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নির্বাসনে যান তিনি। তারপর দীর্ঘ বিরতি কাটিয়ে ২০১৫ সালে উইন্ডিজ সফরের দলে পুনরায় ফিরলেও বাজে পারফরম্যান্সের দরুন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর সিদ্ধান্ত নেন ট্রট।
- জেমস টেলর (ইংল্যান্ড)
২০১১ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন জেমস টেলর। তাঁর ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের ওপর ভর করেই ২০১৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঐতিহাসিক সিরিজ জয় লাভ করে ইংল্যান্ড।
দুর্ভাগ্যক্রমে একই বছর দুরারোধ্য হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। রোগটির নাম অ্যারিথমোগেনিক রাইট ভেন্ট্রিকুলার কার্ডিওমায়োপ্যাথি (এআরভিসি)। তখন চিকিৎসকের পরামর্শে খেলা থেকে চিরতরে সরে দাঁড়ান এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। বর্তমানে তিনি ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচক কমিটিতে দায়িত্বরত আছেন।