ক্লাসেনের রুদ্রমূর্তিতে ভষ্ম বাংলাদেশ

বাংলাদেশের বিপক্ষে ক্লাসেনের এই ইনিংসটি আরও খানিকটা মহিমান্বিত হতে পারত, যদি তিনি সেঞ্চুরি পেতেন। অবশ্য তাতেই বা কি এসে যায়! তার রুদ্রমূর্তিতে তো বাংলাদেশ হয়েছে ছাই। 

আগের ম্যাচে ঠিক যেখানে শেষ করেছিলেন ক্লাসেন, বাংলাদেশের বিপক্ষে ঠিক সেখান থেকেই যেন শুরু করলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার তাণ্ডবে বিন্দুমাত্র ভাটা পড়তে দেননি এনরিখ ক্লাসেন। বিধ্বংসী এক ইনিংসে বাংলাদেশের বোলারদের দুমড়ে-মুচড়ে দিয়েছেন।

এনরিখ ক্লাসেনকে দৈত্য বললেও যেন ভুল বলা হয় না। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৬৭ বলে ১০৯ রানে থেকেছিলেন অপরাজিত। মুম্বাইয়ের তীব্র গরমে পেশিতে টান লেগেছে। তবুও দমানো যায়নি তাকে। বাংলাদেশের বিপক্ষে তাও অপেক্ষাকৃত কমই ছিল গরমের তীব্রতা। তাতে যেন মনখুলেই তাণ্ডব নৃত্য করলেন তিনি। ৪৯ বলে ৯০ রান করে ফিরতে হয়েছে তাকে।

একটা আফসোস নিয়েই হয়ত ফিরলেন তিনি। একটুর জন্যে টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরির মুখ দেখা হলো না তার। তবে ক্ষতি যা করার তিনি করে দিয়েই ফিরেছেন বাংলাদেশের। দ্রুতগতির সেই ইনিংসটির সাহস অবশ্য জুগিয়ে দিয়েছিলেন কুইন্টন ডি কক ও এইডেন মার্করাম।

এদিন দক্ষিণ আফ্রিকার শুরুটা খুব একটা আগ্রাসী হয়নি। প্রথম পাওয়ার প্লে-তে রেজা হেন্ড্রিকস ও ফর্মে থাকা রসি ভ্যান ডান ডুসেনকে হারায় প্রোটিয়ারা। ঠিক সে কারণেই শুরুর দশ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার রান তোলার গতি খানিকটা স্লথ ছিল।

তবে সেই পরিস্থিতি বদলে যেতে সময় নেয়নি। ডি কক ও মার্করামের ১৩১ রানের জুটি দক্ষিণ আফ্রিকাকে আরও একটি সুবিশাল সংগ্রহের দিকেই এগিয়ে নিয়ে গেছে। আর ৩৮২ রানের পুঁজি এনে দিতে আগ্রাসনের চূড়ান্ত রুপই দেখিয়েছেন এনরিখ ক্লাসেন। প্রায় ১৮৪ স্ট্রাইকরেটে খেলা ক্লাসের ইনিংসটি অস্বস্তির তীব্র যন্ত্রনায় পুড়িয়েছে সাকিব আল হাসানদের।

কোন বোলারই ক্লাসেনের ধ্বংসলীলা থেকে ছাড় পাননি বিন্দুমাত্র। ৩৪ বলে ফিফটি করেছিলেন ক্লাসেন। ৯০ রান অবধি যেতে তার পরবর্তীতে লেগেছে মাত্র ১৪ বল। তিনি যখন আউট হয়ে ফিরলেন, তখন দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ বাংলাদেশের ব্যাটারদের কল্পনার বাইরে। দলীয় ৩৭৪ রানের মাথায় ক্লাসেনকে কাভার অঞ্চলে ক্যাচ আউটে পরিণত করেন হাসান মাহমুদ।

মাহমুদউল্লাহর হাতে বন্দী হওয়ার আগে ক্লাসেন ছক্কা হাঁকিয়েছেন গুণে গুণে ৮টি। তিনি যেন এদিন মাটিতেই পা রাখতে চাননি। সেই ধারায় বাউন্ডারি মেরেছেন মাত্র ২টি। বাংলাদেশের বোলারদের নির্বিষ বোলিংটা উপভোগ করেছেন নিজের সবটুকু দিয়ে। অন্যপ্রান্তে থাকা কুইন্টন ডি ককও ছিলেন নিষ্ঠুর। বিন্দুমাত্র ছাড় দেননি তিনি।

এই দুই ব্যাটারের কল্যাণেই শেষের দশ ওভারে স্কোরবোর্ডে ১৪৪ রান যুক্ত করতে পারে দক্ষিণ আফ্রিকা। ১৭৪ রানের ধ্বংসযজ্ঞ চালালো ডি ককের সাথে ক্লাসেনের জুটি ছিল ১৪২ রানের। কুইন্টনের আগ্রাসনটা শেষ অবধি অব্যাহত রেখেছিলেন এনরিখ ক্লাসেন। তাতে এবারের বিশ্বকাপে অন্যতম দ্রুত হাফ সেঞ্চুরি আদায় করে নিয়েছেন ক্লাসেন।

ধারাবাহিক দানবীয় পারফরমেন্সে দক্ষিণ আফ্রিকাকে অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছেন ক্লাসেন। প্রোটিয়া ব্যাটিং তাণ্ডবের ধারাও তাই থাকছে অক্ষুন্ন। আরও একটি ৩০০ পেরোনো সংগ্রহ তাই ক্লাসেনদের সঙ্গী। বাংলাদেশের বিপক্ষে ক্লাসেনের এই ইনিংসটি আরও খানিকটা মহিমান্বিত হতে পারত, যদি তিনি সেঞ্চুরি পেতেন। অবশ্য তাতেই বা কি এসে যায়! তার রুদ্রমূর্তিতে তো বাংলাদেশ হয়েছে ছাই।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...