কলম্বো টেস্ট, ২০১৭। বাংলাদেশের ইতিহাসের শততম টেস্ট। সেবার শ্রীলঙ্কান মাটিতে প্রথমবারের মত তাঁদের হারিয়ে ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশ দল। সেই ম্যাচে অভিষেকেই ৭৫ রানের এক ঝাঁ-চকচকে ইনিংস খেলেন এক বাংলাদেশি তরুণ। সেটাও আবার লঙ্কান গ্রেট রঙ্গনা হেরাথকে পিটিয়ে ছাতু বানিয়ে।
আবার যখন মিরপুরে সেই বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা মুখোমুখি হচ্ছে, তখন কেটে গেছে পাঁচটি বছর। যদিও, এবারও আছেন সেদিনের সেই তরুণ মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। আছেন, সেবার প্রতিপক্ষের অধিনায়ক রঙ্গনা হেরাথ।
রঙ্গনা হেরাথের ভূমিকাটা পাল্টে গেছে আমূল। তিনি এখন বাংলাদেশের স্পিন বোলিং কোচ। পাঁচ বছর আগে তিনি যেমন শ্রীলঙ্কার জয় ছাড়া অন্য কিছু ভাবতেই নারাজ ছিলেন, আজো তাই। তবে, শ্রীলঙ্কার জায়গায় এবার তাঁর চাওয়াটা বাংলাদেশের জন্য।
মোসাদ্দেক হোসেন অনেক দিন বাদে ফিরেছেন টেস্ট দলে। আর এখানে তাঁর পরিচয়টাও বেশ খানিকটা পাল্টে গেছে। এক গাদা স্পিনারের ইনজুরির কারণে তাঁকে একাদশে দেখা যাবে পুরোদস্তর স্পিনিং অলরাউন্ডার হিসেবে। সেখানে চ্যালেঞ্জ আছে খোদ হেরাথেরও। সেজন্যই কি না, দু’জন এক সাথে লম্বা ও ব্যস্ত সময় কাটালেন মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে।
মোসাদ্দেককে ভাবা হতো ব্যাট হাতে তিনি হয়ে উঠবেন বাংলাদেশের ফিনিশার। ব্যাট হাতে ম্যাচ শেষ করে আসার ক্ষমতা যে তাঁর আছে সেটার প্রমাণও পাওয়া গিয়েছিল। তবে এবার মিরপুর টেস্টে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের চরিত্র একেবারেই ভিন্ন। স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথের কাছ থেকে নিলেন গুরুত্বপূর্ণ টোটকা।
ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে এসে টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক বলেন, ‘মোসাদ্দেকের খেলার সম্ভাবনাই হয়তো বেশি। তবে সে খেললে রোলটা হয়তো একটু ভিন্ন হবে। আর আমারো খেয়াল রাখতে হবে যে কীভাবে তাঁকে ভালো ভাবে ব্যবহার করা যায়।’
ভিন্ন রোল বলতে মুমিনুল আসলে বোঝাতে চেয়েছেন মিরপুর টেস্টে স্পিন বোলারের দায়িত্বটাই সামলাতে হবে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে। এতদিন ব্যাটিং অলরাউন্ডার হিসেবে খেলা মোসাদ্দেকের চরিত্র এই টেস্টে হতে যাচ্ছে একেবারেই উলটো। সাকিব, তাইজুলদের সাথে তাঁকেও সামলাতে হবে স্পিন আক্রমণের দায়িত্ব।
চট্টগ্রাম টেস্টের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি নাঈম হাসান আঙুলের ইনজুরির কারণে ছিটকে গিয়েছেন ঢাকা টেস্ট থেকে। এর আগে মেহেদী হাসান মিরাজও ইনজুরির কারণে পুরো সিরিজ থেকেই ছিটকে গিয়েছিলেন। যদিও আজ মিরপুরের ইনডোরে হাত ঘোরাতে দেখা যায় এই স্পিনারকে। তবে পুরো দমে বোলিং করতে পারেননি ইনজুরি থেকে সেরে উঠতে থাকা এই স্পিনার।
এছাড়া এই মুহূর্তে বাংলাদেশ দলের স্কোয়াডে আছেন মাত্র দুইজন স্পিনার। সাকিব আল হাসান ও তাইজুল ইসলাম। মিরপুরের উইকেটে অন্তত তিনজন স্পিনার নিয়েই খেলতে চাইবে বাংলাদেশ দল। তাই পার্টটাইম স্পিনার মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতই এখন বাংলাদেশের ভরসা। ওদিকে নাঈম হাসানের ইনজুরির পরেও অন্য কোন অফ স্পিনারকে স্কোয়াডে ডাকেনি বাংলাদেশ।
তাই ঢাকা টেস্টে মোসাদ্দেকের খেলাটা নিশ্চিতই বলা যায়। বোলার হিসেবে ঢাকা টেস্ট খেলতে নামার অপেক্ষায় থাকা মোসাদ্দেককে নিয়ে তাই আজ মিরপুরে ব্যস্ত সময় পার করেন স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথ। শ্রীলঙ্কান ব্যাটারদের কীভাবে আটকাতে হয় সেই মন্ত্রই যেন শিখিয়ে দিচ্ছিলেন মোসাদ্দেককে।
এছাড়া পাশাপাশি নেটে বোলিং করছিলেন ইনজুরিতে থাকা মেহেদী হাসান মিরাজও। মূলত মিরাজের ইনজুরির কারণেই দলে ডাক পেয়েছিলেন এই অলরাউন্ডার। আজ নেটে মিরাজের সাথেও বেশ কয়েকবার পরামর্শ করতে দেখা যায় সৈকতকে। নিজে খেলতে না পারলেও মোসাদ্দেককে দেখিয়ে দিচ্ছিলেন ঠিক কোথায় বল ফেলতে হবে। না থেকেও তাই কোনো না কোনো ভাবে ঢাকা টেস্টে থাকছেন মিরাজ।
ওদিকে মিরপুরের স্পিন বোলিং উইকেটে বাংলাদেশ চাইলেও চারজন স্পিনার নিয়ে মাঠে নামতে পারবেনা। কেননা পুরো স্কোয়াডেই আছে মাত্র এই তিনজন স্পিনার। এরমধ্যে মোসাদ্দেক আবার পার্টটাইম স্পিনার। ঠিক কেন অন্য কোন স্পিনারকে স্কোয়াডে ডাকা হলো না সেই প্রশ্নও করা যেতে পারে।
ওদিকে ঘরোয়া ক্রিকেটে অনেকদিন ধরেই ভালো পারফর্ম করে যাচ্ছিলেন মোসাদেক হোসেন সৈকত। এই অলরাউন্ডার সর্বশেষ টেস্ট ম্যাচ খেলেছিলেন ২০১৯ সালে। ফলে প্রায় তিন বছর পর আগামীকাল আবার সাদা পোশাকের ক্রিকেটে মাঠে নামতে যাচ্ছেন তিনি। তবে এবার তাঁর কাছে দলের চাওয়া একেবারেই ভিন্ন। মোসাদ্দেক পারবেন তো সেই চাওয়া পূরণ করতে?