দ্য বিগ শিপ

দীর্ঘকায় এক ব্যক্তি। অপেক্ষমান ইতিহাসের পাতায় নিজের নামটি তুলে নেবার। সেবার কাজটি করতে বিন্দুমাত্র ভুল করেননি ওয়ারউইক আর্মস্ট্রম। দশম উইকেট জুটিতে তিনি রেজি ডাফকে নিয়ে করে ফেলেন ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম এক রেকর্ড। শেষ উইকেট জুটিতে শতরানের পার্টনারশীপের রেকর্ডের প্রথম মালিক ওয়ারউইক আর্মস্ট্রম।

দীর্ঘকায় এক ব্যক্তি। অপেক্ষমান ইতিহাসের পাতায় নিজের নামটি তুলে নেবার। সেবার কাজটি করতে বিন্দুমাত্র ভুল করেননি ওয়ারউইক আর্মস্ট্রম। দশম উইকেট জুটিতে তিনি রেজি ডাফকে নিয়ে করে ফেলেন ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম এক রেকর্ড। শেষ উইকেট জুটিতে শতরানের পার্টনারশীপের রেকর্ডের প্রথম মালিক ওয়ারউইক আর্মস্ট্রম।

শুধু এতটুকু দিয়ে আসলে আর্মস্ট্রমকে বোঝানো যাবেন না। কেননা ধারণা করা হয় তিনি অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়কদের মধ্যে অন্যতম সফল। সে ধারণা খুব একটা ভুল না। প্রথম বিশ্বকাপের ধাক্কা সামলে যখন গোটা বিশ্ব আবার নতুন করে খেলাধুলায় মত্ত হওয়া শুরু করেছে। ঠিক তখন আর্মস্ট্রম খানিক চমকে দেন ক্রিকেট দুনিয়াকে।

টানা আটটি টেস্ট ম্যাচ জিতেছিলেন তিনি। একজন অধিনায়ক হিসেবে দলকে টানা আট টেস্ট জয়ের রেকর্ড সেবারই প্রথম। ১৯২১ সালে তিনি অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়েই সে কীর্তি গড়েছিলেন। তবে সে যাত্রার একটু শুরুতে যাওয়া যাক। হুট করে এসেই তো আর তিনি বনে যাননি অন্যতম সেরা অধিনায়কদের একজন।

২২ মে ১৮৭৯ সালে জন্মেছিলেন আর্মস্ট্রম। আর ক্রিকেটের যাত্রা শুরু তাঁর ১৮৯৮-৯৯ মৌসুমে ভিক্টোরিয়ার হয়ে। আলোচনায় চলে আসতে খুব বেশি সময় নষ্ট করেননি আর্মস্ট্রম। বছর তিনেকে মাথায় নিজেকে তিনি আবিষ্কার করেন অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় দলে। তরুণ সম্ভাবনাময় একজন খেলোয়াড় হিসেবেই আগমন ঘটে তাঁর। এরপর থেকেই অপ্রতিরোধ্য এক সত্ত্বায় পরিণত হন তিনি।

মূলত একজন ব্যাটার হিসেবেই অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় দলের সাথে যাত্রা শুরু তাঁর। এরপর তাঁর ভেতর থাকা দুর্দান্ত বোলিং এবং দুরন্ত ফিল্ডিং প্রতিভা বিকশিত। তাছাড়া প্রতিবাদী এক সত্ত্বাও তাঁর মধ্যে বিরাজমান ছিল। ১৯১২ সালের এক সফরের আগে প্রতিবাদ করে সফরে যেতে অস্বীকৃতি জানান তিনি। বোর্ডের বিপক্ষে যাওয়ার পরও বোর্ড ঠিকই তাঁকে ১৯২১ সালে অধিনায়ক করেই পাঠিয়েছিল সফরে।

তিনি ছিলেন এমনই প্রতিভাবান একজন ক্রিকেটার। সে জায়গাটা অবশ্য তিনি অর্জন করে নিয়েছিলেন নিজের অলরাউন্ড পারফরমেন্স দিয়ে। সবচেয়ে  ইতিবাচক দিক হচ্ছে তিনি ছিলেন প্রচণ্ডরকম ধারাবাহিক। এক পঞ্জিকা বর্ষে তাঁর সবচেয়ে খারাপ ফর্মের সময়ও তাঁর ঝুলিতে ছিল ১৪৮০ রান ও ১২১ উইকেট। ১৯০৯ সালের সে মৌসুমে তিনি রান করেছিলেন ৪৬.৩৯ আর অন্যদিকে উইকেট নিয়েছেন ১৬.২৩ গড়ে।

আর যে মৌসুমে তিনি থাকেন ফর্মের তুঙ্গে সে মৌসুমে তো রীতিমত রানের বন্যা হয়। উইকেট যেন আমের মৌসুমে নুইয়ে পড়া গাছ। তেমন এক উদাহরণ হতে পারে ২০০৩ মৌসুম। সেবার তো রীতিমত রেকর্ড গড়া পারফরমেন্স। ইংল্যান্ডে গিয়ে এক মৌসুমে কেউ দুই হাজার রান ও শত উইকেট নিতে পারেনি তখন অবধি। কিন্তু সে কাজটাই করে দেখিয়েছিলেন ওয়ারউইক আর্মস্ট্রম।

সে মৌসুমে তাঁর নামের পাশে যুক্ত হয়েছিল ২০০২ রান ও ১৩০ উইকেট। রানের গড় ৪৮.৮২ ও উইকেটের গড় ১৭.৬০। এমন দূর্দান্ত সব পারফর্মেন্স করেই আর্মস্ট্রম হয়ে উঠেছিলেন অস্ট্রেলিয়া দলের অন্যতম ভরসার স্তম্ভ। ব্যাট-বলে পারফর্ম করার পাশাপাশি তিনি দারুণ ফিল্ডিংও করতেন। স্লিপ আর শর্ট লেগ কিংবা অফ পজিশনে ছিলেন তিনি অসাধারণ।

সব মিলিয়ে তিনি অস্ট্রেলিয়ার হয়ে পারফরম করেই অধিনায়কের ব্যাটনটা হাতে পেয়েছিলেন। প্রায় দুই দশকের অভিজ্ঞতা নিংড়ে দিয়ে তিনি হয়েছিলেন অপ্রতিরোধ্য। তাছাড়া প্রথম শ্রেণি ক্রিকেট ছাড়াও তিনি ৫০টি টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে। সেখানটায় তাঁর ২৮৬৩। আর উইকেটের সংখ্যা ৮৭টি। তাঁর দীর্ঘকায় শরীর ও এমন দানবীয় পারফরমেন্সের জন্যে তিনি পেয়েছিলেন ‘বিগ শীপ’ তকমা।

অস্ট্রেলিয়ার প্রতিভার ভাণ্ডার থেকে উঠে আসা একজন উজ্জ্বল নক্ষত্রে ওয়ারউইক আর্মস্ট্রম প্রথম শ্রেণি ম্যাচ খেলেছেন ২৬৯। ১৯২১-২২ মৌসুমে নিজের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের ইতি টেনে নেন ১৬৪০৫ রান ও ৮৩২ উইকেট নিয়ে। কিংবদন্তি হয়েই তিনি অমর হয়ে রয়ে গেলেন অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট ইতিহাসে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...