ঠিক এক বছর আগে ফিরে যাওয়া যাক, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের পয়েন্ট টেবিলটা মনে করতে পারছেন? টেবিলের সবচেয়ে নিচের দলটার নাম মনে পড়ছে? আচ্ছা বলে দেয়া যাক – গত মৌসুমের তিন ম্যাচ শেষে টেবিলের সবার নিচে ছিল আর্সেনাল। নামের পাশে কোন পয়েন্ট ছাড়াই তালিকার বিশ নম্বরে ছিল ক্লাবটি।
এবার বর্তমান সময়ে ফিরে আসি, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের তিন সপ্তাহ ইতোমধ্যে শেষ। পয়েন্ট টেবিলে চোখ বুলিয়ে নিলে দেখা যাবে সবার উপরের দলটা ম্যানচেস্টার সিটি, লিভারপুল কিংবা চেলসি নয়। গত মৌসুমের এই সময়ে তলানিতে থাকা আর্সেনাল আছে শীর্ষে। তিন ম্যাচের সব কয়টি ম্যাচ জিতে নিয়েছে গানাররা।
মাত্র তো তিনটা ম্যাচ গেল – এমনটা ভাবনায় আসতেই পারে। কিন্তু দুই মৌসুমের শুরুটা তুলনা করলে যেকোনো কিছুর উর্ধ্বে উপলব্ধি হবে আর্সেনালের উত্থান। ক্লাবের ইতিহাসে সবচেয়ে বাজেভাবে মৌসুম শুরু করেছিল ২০২১ সালের আগস্টে, আর এবার কোন রকম পয়েন্ট না খুইয়ে হয়েছে টেবিল টপার।
২০০৪ সালের পর থেকে এতটা ভালভাবে কোন মৌসুম শুরু করতে পারেনি আর্সেনাল। তাছাড়া আর্সেনাল লিগের একমাত্র দল যারা চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত কোন পয়েন্ট হারায়নি। শুধু জয়-পরাজয় নয়; দুই মৌসুমের প্রথম ভাগ তুলনার মাপকাঠিতে তুলে আনলে স্পষ্ট হবে আরো কিছু পার্থক্য। দেখা যাবে কতটা গুছিয়ে উঠেছে উত্তর লন্ডনের ক্লাবটি। আক্রমণ থেকে রক্ষণ সর্বত্র সবচেয়ে সেরা পারফরম্যান্স উপহার দিচ্ছে একাদশের সবাই।
গত মৌসুমের প্রথম তিন ম্যাচ কোন গোলই করতে পারেনি আর্সেনাল। এই তিন ম্যাচে প্রতিপক্ষের গোলপোস্টে মাত্র সাতটি শট নিয়েছে। অথচ এবারের তিন ম্যাচে গোলই করেছে নয়টি, আর অন টার্গেট শট পনেরোটি। আবার ২০২১/২২ মৌসুমের শুরুর তিন দ্বৈরথে আর্সেনালের গোলমুখে ১৮টি শট নেয়া হয়েছিল, অন্যদিকে চলতি সিজনে মাত্র পাঁচটি শট নিতে সক্ষম হয়েছে প্রতিপক্ষ।
বিশাল এই পার্থক্যের মূল কারন স্কোয়াডে নতুন মুখ। ২০২১ সালের ২৮ আগস্ট ম্যানচেস্টার সিটির সাথে ৫-০ গোলে হেরে গিয়েছিলো আর্সেনাল। সেই দলটার মাত্র তিনজন বর্তমান একাদশে সুযোগ পেয়েছেন, তারা বুকায়ো সাকা, গ্রানিত জাকা, এবং মার্টিন ওডেগার্ড। নিজেদের বাজেটের মধ্যেই কার্যকরী ফুটবলার দিয়ে দল গুছিয়ে নিয়েছে গানাররা।
বিশেষ করে ম্যানচেস্টার সিটির কাছ থেকে কেনা গ্যাব্রিয়েল জেসুস এবং অলেক্সান্দার জিনচেঙ্কো আর্সেনালের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড তো এখন দলটির আক্রমণভাগের মূল ভরসা। অন্যদিকে জিনচেঙ্কো ডিফেন্স লাইনে যোগ করেছেন বাড়তি নির্ভরতা।
তাছাড়া মার্শেইতে লোনে থাকা উইলিয়াম স্যালিবাকে ফিরিয়ে এনেছে আর্সেনাল বোর্ড। এই ডিফেন্ডারও নিজের কাজটা করে যাচ্ছেন দারুণ ভাবে। ইতোমধ্যে আর্সেনাল যে দুইটি ক্লিনশিট পেয়েছে তার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে এই তরুণের।
৩০ মিলিয়ন ইউরোতে দলে ভেড়ানো ফ্যাবিয়ো ভিয়েরা এখনও মাঠে নামেননি। এছাড়া ট্রান্সফার উইন্ডো শেষ হওয়ার আগে আরো এক-দুইজন খেলোয়াড় কিনতে আগ্রহী আর্সেনাল। সবমিলিয়ে তাই এই স্কোয়াডের ডেপথ অনেক বেশি। একেক পজিশনে খেলানোর জন্য রয়েছে একাধিক অপশন।
শুধু যে মাঠের খেলায় গোছানো ফুটবল উপহার দিয়েছে আর্সেনাল তা নয়, মাঠের বাইরেও এই দলটি অনেক বেশি একতাবদ্ধ। সাম্প্রতিক কয়েক বছরে গানারদের এভাবে ‘টিম গেম’ খেলতে দেখেনি ভক্ত-সমর্থকরা। পূর্বের বড় নামধারী ফুটবলারকে ছেঁটে ফেলা হয়েছে স্কোয়াড থেকে, সেই সাথে ড্রেসিং রুমে ফিরে এসেছে ভারসাম্য। একাদশের প্রায় সবাই কাছাকাছি মানের খেলোয়াড় হওয়ায় ‘টিম’ হয়ে ওঠার কাজটাও সহজ হয়েছে।
আর এসব কিছুর কৃতিত্ব আর্সেনালের কোচ মিকেল আর্তেতার। দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে নীরবে নিভৃতে দল গুছিয়েছেন, ভক্তদের বলেছেন, ‘ট্রাস্ট দ্য প্রসেস’। গত দুই বছরের নড়বড়ে পারফরম্যান্স স্বত্তেও মিকেল আর্তেতার উপর ভরসা করার প্রতিদান এখন পাচ্ছে আর্সেনাল।
লিগ শেষ হওয়ার এখনো বহু বাকি, তাই এখনই অনেক কিছু অর্জিত হয়েছে এমনটা ভাবার কোন কারন নেই। তারপরও যেভাবে দল ঘুরে দাঁড়িয়েছে, তাতে নতুন করে ইউরোপে পরাশক্তি হয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখতেই পারে আর্সেনাল ভক্তরা।