শান্তদের এত চাপ কোথা থেকে আসে!

‘ক্রিকেটে আবার কীসের চাপ! চাপ কাকে বলে, আমার কাছে শোনেন। চাপ হল, শব্দের গতিতে পশ্চাদদেশে বোমারু বিমান নিয়ে ওড়া।’ কথাগুলো বলেছিলেন কিংবদন্তি অলরাউন্ডার কিথ মিলার। রয়্যাল অস্ট্রেলিয়ান বিমান বাহিণীর হয়ে বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি ক্রিকেটারের। ফাইটার পাইলট হিসেবে জার্মানিতে বেশ কয়েকটি মিশনেও অংশ নিয়েছিলেন তিনি।

তার কাছে ক্রিকেটের চাইতেও বেশি চাপ মনে হয়েছে যুদ্ধ-বিমান পরিচালনা। হবেই না কেন? যুদ্ধ বিমানের ককপিটে বসা মাত্রই মৃত্যুর সাথে দূরত্ব নেমে আসে কয়েক হাতে। আবার যদি হয় তা যুদ্ধের ময়দানে। তার চাইতেও তো ঢের পিছিয়ে ক্রিকেট ময়দানের লড়াই। এখানে অন্তত জীবননাশের কোন শঙ্কা নাই। ম্যাচ হারলেও হতে হবে না বন্দী। তবুও যেন এক পাহাড়সম চাপ অনুভব করেন নাজমুল হোসেন শান্তরা।

বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়ক তাই এবার অনুরোধ করে বসলেন, তাদের উপর যেন চাপিয়ে দেওয়া না হয় প্রত্যাশার চাপ। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক বিশ্বকাপের আগে আমাদের নিয়ে অনেক প্রত্যাশা থাকে। এটা করব, সেটা করব, অনেক কথাবার্তা হয়। আপনাদের কাছে আমার একটা অনুরোধ, এই প্রত্যাশা খুব একটা করার দরকার নেই।’

শুধু সেই অনুরোধেই ক্ষান্ত হননি তিনি আরও বলেন, ‘প্রত্যাশা সবার মনের ভেতরেই থাক। বাংলাদেশ দল কী চায় আপনারাও জানেন, আমরাও জানি। সবাই চায় আমরা অনেক বড় কিছু করি। কিন্তু এটা নিয়ে খুব বেশি মাতামাতি আমার ভালো লাগে না। আসলে দরকার নেই। ফলাফল হলে এমনিতেই বোঝা যাবে।’

অর্থাৎ সমর্থকদেরকে বাংলাদেশ দলের উপর কোন ধরণের আশা রাখতেই যেন বারণ করে দিলেন টাইগার দলপতি। তাতেই বোধহয় চাপ বাড়ে তাদের। আদোতেই কি এত চাপের মুখে পড়তে হয় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে? চাপটা ঠিক কতটুকু? কেন ই বা তারা চাপের ভাড়ে নুইয়ে পড়েন?

পাশের দেশ ভারতের উদাহরণই টেনে নিয়ে আসা যায়। বাংলাদেশ খারাপ করলে সমালোচনা হয়, ট্রল হয়। ভারতে নিশ্চয়ই তা কম হয় না। বরং ভারতে খেলোয়াড়দের আরও বেশি সইতে হয় ব্যক্তিগত আক্রমণ। এমনকি খেলোয়াড়দের বাড়িতে সমর্থকদের হামলার মত ঘটনার নজিরও রয়েছে দেশটিতে।

তাছাড়া ভারত দুই বারের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন। একবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শিরোপা রয়েছে তাদের দখলে। স্বাভাবিকভাবেই তাদের কাছে সমর্থকদের প্রত্যাশা থাকে প্রতিবারই শিরোপা জয়ের। সেই চাপটা শান্তরা ঠিক কখনো টের পেয়েছেন? সম্ভবত নয়। বাংলাদেশের সমর্থক থেকে শুরু করে গণমাধ্যমে তেমন আকাশ-কুসুম স্বপ্ন দেখে না।

বাস্তবতা মাথায় রেখে মাটিতেই থাকে সকলের পা। তবুও শান্তরা সেই চাপকে কয়েকগুণ ঘনিভূত করে নিয়ে নেন নিজেদের মাথায়। সব দায়ভার স্রেফ সমর্থকদের। বিশ্বমঞ্চে বারবার নিরাশ করবার পরও যে দর্শকরা নতুন করে স্বপ্ন দেখে, উজ্জীবিত করে চলে দলকে- সেসব যেন থেকে যায় আড়ালে। শান্তরা সেই দর্শকদেরকেই চাপ হিসেবে ধরে নেন।

আদোতে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের মাঝারি মানের পারফরমেন্সেও যারা ঢেঁকুর তুলে ফেলে তারা আবার কি এমন চাপ অনুভব করাবে? ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো বা লিওনেল মেসির মত চাপ অন্তত অনুভূত হয় না নাজমুল হোসেন শান্তদের। ফুটবলের দুই কিংবদন্তির বিশ্বজোরা রয়েছে সুখ্যাতি। ক্যারিয়ারের অন্তিম লগ্নেও তাদের কাছ থেকে দারুণ কিছুই প্রত্যাশা করে তাদের সমর্থকরা। সেই প্রত্যাশা মেটাতে যে রোনালদো বা মেসি সমর্থ হন সবসময়, তাও না।

তবুও তারা জানেন তাদের দিকে তাকিয়ে আছে কোটি কোটি চোখ। প্রতিটা চোখই চায় আরও বেশি। তাদের ক্যারিয়ার জুড়ে সে চাহিদা মাথায় রেখেই খেলে গেছেন দুই কিংবদন্তি। পাশাপাশি দলের চাহিদাও মিটিয়ে গেছেন প্রতিটা মেসি-রোনালদো। শান্তরা দলের প্রত্যাশাও মেটাতে পারেন? কঠিন মুহূর্তে দলের হাল ধরতে পারেন? পারেন, তবে তা কালেভদ্রে, অগুরুত্বপূর্ণ কোন এক ম্যাচে।

তবুও চাপের ভাড়ে নুইয়ে পড়েন শান্তরা। তবুও তারা সামান্য ভাল করবার প্রত্যাশার ভার বয়ে নিতে পারেন না। অল্পতেই সন্তুষ্ট হয়ে যাওয়া সমর্থকদেরকেও সন্তুষ্টি দিতে পারেন না। স্বল্প চাপে ভেঙে যান শান্তরা। তাইতো এখনও জেতা হয়ে ওঠেনি কোন শিরোপা। তবুও বেশ মার্জিত ভঙ্গিমায়, শান্তদের আগলে রেখে করা হয় সমালোচনা। সেটুকু না হলে যে কচ্ছপ গতির উন্নতিও হবে না সাধিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link