বর্তমান ফুটবল দুনিয়ায় একটা কথার প্রচুর চল আছে, সাফল্য পেতে হলে দলের পেছনে প্রচুর পরিমাণে অর্থ ব্যয় করতে হবে। টাকা খরচ করলেই যে দল সাফল্য পাবে সে নিশ্চয়তা নেই, কিন্তু প্রতিনিয়ত সাফল্য পেতে হলে দলবদলের বাজারে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ না করে এখন আর উপায় নেই । এক্ষেত্রে একমাত্র ব্যতিক্রম হল ইউর্গেন ক্লপের লিভারপুল।
সাম্প্রতিক সময়ে ক্রীড়া পরিচালক মাইকেল এডওয়ার্ডের অধীনে দলবলের বাজারে অল রেডরা বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছে। প্রতি মৌসুমেই তারা এমন সব খেলোয়াড়দের দলে ভিড়িয়েছে যাদের দেখে প্রথমে অনেকেরই চোখ কপালে উঠেছে। কিন্তু দিন শেষে অল রেডদের হয়েছে পয়সা উশুল। হাল আমলের এই সাফল্যে ঢাকা পরে গেছে আগের ম্যানেজারদের আমলের ব্যর্থতাগুলো। দলবদলের বাজারে লিভারপুল ফুটবল ক্লাবের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ১৫জন খেলোয়াড় নিয়েই আজকের এই আয়োজন।
- থিয়াগো আলকান্তারা
২০২০ সালের গ্রীষ্মকালীন দলবদলের বাজারে প্রায় ২৭ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে বায়ার্ন মিউনিখ থেকে লিভারপুলে যোগদান করেন মাঝমাঠের এই খেলোয়াড়। বাভারিয়ানদের হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ী এই স্প্যানিশ ফুটবলার অল রেডদের জার্সি গায়ে তোলার আগে থেকেই তারকা খেলোয়াড় হিসেবে ফুটবল দুনিয়ায় পরিচিত। থিয়াগো লিভারপুলের কেনা একমাত্র প্রতিষ্ঠিত তারকা ফুটবলার বলাই যায়।
- রবার্তো ফিরমিনো
২৯ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে ২০১৫ সালের গ্রীষ্মকালীন দলবদলের বাজারে জার্মান ক্লাব হফেনহাইম থেকে লিভারপুলে যোগদান করেন এই ব্রাজিলিয়ান। ক্লপের দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ আক্রমণভাগের এই খেলোয়াড়কে দলে ভিড়িয়েছিলেন বিদায়ী ম্যানেজার ব্রেন্ডান রজার্স।
ইউর্গেন ক্লপের খেলার কৌশলকে মাঠে রুপান্তর করতে তার অবদান অনেক। নিজে নয় নম্বর হিসেবে খেললেও দুই উঙ্গার সালাহ এবং মানের জন্য প্রতিপক্ষের গোলমুখে ফাঁকা জায়গা তৈরি করাই তার মূল কাজ। দলের জন্য নি:স্বার্থভাবে খেলেন আক্রমণভাগের এই খেলোয়াড়।
- ক্রিশ্চিয়ান বেন্টেকে
৩২.৫ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে অ্যাস্টন ভিলা থেকে লিভারপুলে যোগদান করেন দীর্ঘদেহী এই ফুটবলার। রর্জাস তাকে দলে এনেছিলেন দলের আক্রমনভাগে শারীরিক উপস্থিতি যোগ করতে এবং তার বিদায়ের পর ক্লপের দলে বেন্টকে কখনই ঠিকমত জায়গা করে নিতে পারেননি।
- সাদিও মানে
মারিও গোটজেকে দলে ভেড়াতে ব্যর্থ হওয়ার পর সাউথ হ্যাম্পটনের সাদিও মানের দিকে হাত বাড়ায় লিভারপুল। ২০১৬ সালে ৩৪ মিলিয়ন পাউন্ড ইউরোর বিনিময়ে তাকে দলে ভেড়াতে সক্ষম হয় অল রেডরা। এই মৌসুমে বায়ার্নে যোগদান করা এই সেনেগালিজ যে আজকের তারকা ফুটবলার হবেন তৎকালীন সময়ে তা কেও কল্পনাও করেনি।
- অ্যালেক্স অক্সালেড চেম্বারলিন
২০১৭ সালে ৩৫ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে চেম্বারলিন যখন মার্সিসাইডের ক্লাবটিতে যোগদান করেন তার প্রতি সকলের আকশচুম্বী প্রত্যাশা ছিল, কিন্তু ইনজুরির কারণে নিজেকে লিভারপুলের জার্সিতে পুরোপুরি মেলে ধরতে পারেননি এই ইংলিশ মাঝমাঠের খেলোয়াড়। তবে যখনই দলে জায়গা পেয়েছেন ঢেলে দিয়েছেন নিজের ১০০ ভাগ।
- অ্যান্ডি ক্যারল
এই দলবদলের কথা ভুলে যেতে চায় সকল অল রেড সমর্থকরা। লিভারপুলের ইতিহাসের অন্যতম বাজে চুক্তি হিসেবে একে অবহিত করা হয়।
ফার্নান্ডো টরেসকে চেলসির কাছে খুইয়ে দলবদলের বাজারের শেষ দিনে নিউ ক্যাসল থেকে ৩৫ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে অ্যান্ডি ক্যারলকে দলে ভেড়ায় লিভারপুল, যা ছিল তৎকালীন ক্লাব রেকর্ড। নিজের দামের প্রতি সুবিচার করতে না পারা এই ফুটবলার খুব দ্রুতই হারিয়ে যান অল রেডদের দৃশ্য পট থেকে।
- ইব্রাহিম কোনাটে
এই বছর ফ্রান্স জাতীয় দলে ডাক পাওয়া কোনাটেকে আর বি লাইপজিগ থেকে ২০২১ সালে ৩৬ মিলিয়ন পাউন্ডে দলে ভেড়ায় লিভারপুল। অল রেডদের জার্সি গায়ে দুর্দান্ত খেলা রক্ষন ভাগের এই খেলোওয়াড়ের প্রতি ভবিষ্যতেও অল রেড সমর্থকদের প্রত্যাশা অনেক।
- ফ্যাবিনহো
২০১৮ সালে রিয়াল মাদ্রিদের কাছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে হেরে যাওয়ার পর দলের মাঝ মাঠ এবং রক্ষনের মধ্যকার সংযোগকারী হিসেবে ফ্রেঞ্চ ক্লাব মোনাকো থেকে ৪০ মিলিয়ন পাউন্ডে ফ্যাবিনহোকে দলে ভেড়ায় লিভারপুল। দলে থিতু হতে একটু সময় নিলেও খুব দ্রুতই নিজেকে দলের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিনত করেন। ট্যাকল, পাসিং এবং প্রতিপক্ষের খেলোয়াড় থেকে বল কেড়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি বরাবরই দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।
- মোহাম্মদ সালাহ
২০১৭ সালে ৪৩ মিলিয়ন পাউন্ডের রোমা থেকে সালাহ যখন লিভারপুলে যোগ দেন অনেকেই তখন তাকে চেলসি রিজেকট হিসেবে আখ্যায়িত করে। নিজেকে ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে প্রমানের তীব্র বাসনা নিয়ে লিভারপুলে আসা সালাহ নিজেকে নিয়ে যান এক অন্য উচ্চতায়।
ইজিপশিয়ান আক্রমণভাগের এই খেলোয়াড় লীগে গোল করাকে ছেলেখেলা বানিয়ে ফেলেছেন । সম্প্রতি নতুন চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়া এই ফুটবলার যখন অ্যানফিল্ড ছাড়বেন নিঃসন্দেহে সবাই তাকে লিভারপুলের কিংবদন্তি হিসেবে বিবেচনা করবে ।
- ডিয়েগো জতা
২০২০ সালে উল্ভস থেকে ৪৫ মিলিয়ন পাউন্ডে লিভারপুলে যোগদান করার পর থেকেই অল রেড দের জার্সিতে নিয়মিতই জ্বলে উঠেছেন জতা। ডি বক্স এর ভিতর দুর্ধর্ষ ফিনিশার হিসেবে নিজেকে পরিচিত করে তুলতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি তাকে। দলের প্রয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ সব গোল করেছেন। ২০২১-২২ মৌসুমে মানে এবং সালাহ যখন আফ্রিকান কাপ অফ নেসন্স খেলতে চলে যায় তখন লিভারপুল তার কাধে ভর করেই এগিয়ে যায়।
- লুইস ডিয়াজ
টটেনহাম ডিয়াজকে দলে ভেড়াতে তোড়জোড় করছে এই খবর পাওয়া মাত্র লিভারপুল ৫০ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে ২০২২ মৌসুমের শীতকালীন দলবদলের বাজারে পোর্তো থেকে এই কলম্বিয়ানকে নিজেদের দলে নিয়ে আসে। যদিও এই আক্রমণভাগের খেলোয়াড়কে অল রেডরা ২০২২-২৩ মৌসুমের গ্রীষ্মকালীন দল বদলের বাজারে কেনার পরিকল্পনা করেছিল। দলে আসার সাথে সাথেই ক্লপের সিস্টেমে মানানসই হয়ে যান এই কলম্বিয়ান।
- নাবি কেইটা
২০১৮ সালে জার্মান ক্লাব লাইপজিগ থেকে ৫২ মিলিয়ন পাউন্ডে লিভারপুলে আসেন গিনিয়ান মাঝমাঠের এই খেলোয়াড়। অল রেডরা জার্মান ক্লাবটির সাথে এই চুক্তির ব্যাপারে ২০১৭ সালেই সব কর্মকাণ্ড সম্পন্ন করে রেখেছিল। বার বার ইনজুরির কবলে পরে নিজেকে ঠিক মত মেলে ধরতে পারেননি এই ফুটবলার। বুন্দেসলিগা থেকে যেই সুখ্যাতি নিয়ে এসেছিলেন আসা করা যায় ভবিষ্যতে তিনি তার প্রতি সুবিচার করবেন এবং মাঠে তার জাদু দেখাবেন।
- অ্যালিসন বেকার
২০১৮ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রিয়ালের বিপক্ষে কারিউসের অবিশ্বাস্য রকমের বাজে গোলকিপিং করার পর রোমা থেকে ৬৫ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে অ্যালিসন বেকারকে দলে ভেড়ায় লিভারপুল যা তৎকালীন সময়ে গোলরক্ষকদের জন্য রেকর্ড ফি ছিল। ঠাণ্ডা মাথায় বুদ্ধিদীপ্ত ভাবে দলের গোলবার আগলে রেখেছেন সবসময়, অনেক সময়ই নিশ্চিত গোল খাওয়ার হাত থেকে অল রেডরা রক্ষা পেয়েছে তার কারণে।
- ভার্জিল ভ্যান ডাইক
দলের রক্ষণকে ঢেলে সাজাতে ২০১৮ সালে সাউথ হাম্পটন থকে তৎকালীন ক্লাব রেকর্ড ৭৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে ভার্জিল ভ্যান ডাইকে লিভারপুলে নিয়ে আসেন ক্লপ। এই ডাচ ফুটবলার দলে আসার পর রাতারাতি লিভারপুলের রক্ষণে উন্নতি পরিলক্ষিত হয়।
- ডারউইন নুনেজ
এই মৌসুমের বেনফিকা থেকে ৮৫ মিলিয়ন পাউন্ডে লিভারপুলে যোগদান করেছেন ডারউইন নুনেজ যা তাকে অল রেডদের ইতিহাসের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড়ে পরিণত করেছে। লিভারপুলের অক্রমনভাগ সামলানোর দায়িত্ব এখন এই ২৩ বছর বয়সী উরুগুয়ের খেলোয়ারের কাঁধে।