মাঠে থাকুন, চাই না থাকুন, বিরাট কোহলি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতেই থাকেন সব সময়। তবে, সেই আলোচনার ইতি হয়তো খুব শিগগিরই হতে চলেছে। কোনো বাড়তি হইচই নয়, কোনও মিডিয়া ঝলক নয়, আস্তে আস্তে সব ফরম্যাট থেকেই নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছেন কিং কোহলি।
২০২৫ সালের মে মাসে যখন তিনি হঠাৎ টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিলেন, সবাই হতভম্ব হয়ে গেল। কেউ ভাবেনি, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আসন্ন টেস্ট সিরিজের আগে এমন সিদ্ধান্ত আসবে। কোহলির কাছে টেস্ট ক্রিকেট ছিল সর্বোচ্চ শিখর, কিন্তু মনের গভীরে তাঁর আরেকটা স্বপ্ন ছিল—নিজের দল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুকে (আরসিবি) আইপিএল চ্যাম্পিয়ন করা।
আঠারো বছরের লম্বা যাত্রায় বারবার ব্যর্থ হয়েছেন, কিন্তু হাল ছাড়েননি। অবশেষে ২০২৫ সালে সেই স্বপ্ন পূরণ হলো—আরসিবি পেল তাদের প্রথম আইপিএল ট্রফি, আর বিরাট কোহলির চোখে এল বহু প্রতীক্ষিত প্রশান্তির হাসি। কিন্তু আইপিএল জয়ের পরই উঠেছে নতুন প্রশ্ন—এ কি তবে বিরাট কোহলির আইপিএল যাত্রার শেষ অধ্যায়?

শোনা যাচ্ছে, একটি নামী ব্র্যান্ডের সঙ্গে নতুন করে চুক্তি নবায়নের প্রস্তাব তিনি ফিরিয়ে দিয়েছেন। এমনকি আরসিবি ব্যবস্থাপনাকেও নাকি বলেছেন নতুন দিকনির্দেশনা ভাবতে। সবকিছু মিলিয়ে গুঞ্জন ছড়িয়েছে, হয়তো কোহলি এবার আরসিবিকেও বিদায় জানাবেন।
এই গুঞ্জনের পেছনে যুক্তিও আছে। কারণ তাঁর আইপিএল ক্যারিয়ারে যা যা অর্জন করার ছিল, তা তিনি ইতিমধ্যেই করে ফেলেছেন। বহুবার রান সংগ্রহের রেকর্ড গড়েছেন, ফিটনেস ও ফোকাস দিয়ে প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করেছেন, আর শেষ পর্যন্ত শিরোপাও জিতেছেন। এখন হয়তো তিনি মনে করছেন, সময় এসেছে পথ ছেড়ে দেওয়ার, নতুন মুখদের জন্য জায়গা করে দেওয়ার।
তবে কোহলি যদি সত্যিই বিদায় নেন, তাহলে সেটি শুধু আরসিবির নয়, পুরো আইপিএলের জন্যই এক যুগের সমাপ্তি হবে। কারণ বিরাট কোহলি মানেই আরসিবি। ফ্র্যাঞ্চাইজিটির ব্র্যান্ড ভ্যালু, জনপ্রিয়তা, এমনকি আইপিএলের গ্ল্যামার—সব কিছুর কেন্দ্রেই ছিলেন তিনি।

শিরোপা না জিতেও আরসিবি সবসময় ছিল আইপিএলের সবচেয়ে আলোচিত দলগুলির একটি, আর এর পেছনে একমাত্র কারণ—বিরাট কোহলি নামটাই যথেষ্ট। তাঁর প্রভাব এতটাই গভীর যে, অনেক সময় পুরো দলের প্রচারণার চেয়ে একা তাঁর নামেই স্পনসরশিপ এসেছে বেশি।
তবে শুধু জনপ্রিয়তা নয়, পারফরম্যান্সেও এখনও তিনি দলের সেরা। শেষ তিন মৌসুমের পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে, কোহলি এখনও কতটা ধারালো। ২০২৩-এ ১৪ ম্যাচে ৬৩৯ রান, ২০২৪-এ ১৫ ম্যাচে ৭৪১ রান, আর ২০২৫-এ ১৫ ম্যাচে ৬৫৭ রান—প্রতিবারই ৬০০ রানের ওপরে, সঙ্গে স্ট্রাইক রেটও বেড়েছে প্রতি বছর। ৩৬ বছর বয়সেও এমন ধারাবাহিকতা বিরল।
তাই কোহলি যদি সত্যিই সরে দাঁড়ান, আরসিবি হারাবে শুধু তাদের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ও সফল ব্যাটসম্যানকেই নয়, হারাবে এক প্রতীককে—যার নামে গ্যালারি গর্জে ওঠে, যার উপস্থিতিই দলের প্রাণ।

আরসিবির একাংশ ভক্ত হয়তো দলটিকে সমর্থন জারি রাখবে, কিন্তু বাস্তবতা হলো, ভারতের ক্রিকেট সংস্কৃতি অনেকটাই ব্যক্তিনির্ভর। কোহলি এখানে কেবল একজন খেলোয়াড় নন, তিনি সকল আবেগের অনেক ওপরে।
তাই যদি তিনি বিদায় নেন, আরসিবির ভক্তসংখ্যা ও আবেগ, দুটোই বড় ধাক্কা খাবে। যদি সত্যিই ২০২৫-এর ট্রফিই তাঁর শেষ হয়, তাহলে সেটাই হবে এক নিখুঁত সমাপ্তি—এক রাজা অবশেষে নিজের রাজত্ব জয় করে মাথা উঁচু করে মঞ্চ ছাড়লেন।










