আর্সেনাল থেকে আম্পায়ারিং!

তিনি স্বপ্ন দেখতেন আর্সেনালের গোলরক্ষক হবার। সামনে টনি উডকুক, অ্যালান সান্ডারল্যান্ডদের আক্রমণের পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে নিজে সামলাবেন রক্ষণ দুর্গ। কিন্তু আকারে ছোট হওয়াতে ট্রায়াল থেকেই বাদ পড়েন তিনি। ফুটবলকে তাই মুছে ফেলে মনোযোগী হন ক্রিকেটে।

পরে, উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলেছেন বিশ্বকাপ ক্রিকেট। যদিও এ প্রজন্মের মানুষ তাকে ক্রিকেটার কিংবা ফুটবলার হিসেবে মনে রাখেনি। মনে রেখেছে ক্রিকেট মাঠের পরিচালক তথা আম্পায়ার হিসেবে। ক্রিকেট মাঠের সদাহাস্য এই আম্পায়ার হলেন ইয়ান গোল্ড।

১৯৫৭ সালে বামিংহ্যামশায়ারে জন্ম গোল্ডের। মাত্র ১৩ বছর বয়সে স্থানীয় অপেশাদার ম্যাচ দিয়ে ক্রিকেটে যাত্রা শুরু তার। সেখানে টানা ভালো খেলতে শুরু করলে নজরে আসেন কাউন্টি দল কেন্টের। যদিও মাইক ব্রিয়ারলি, মাইক গ্যাটিং, ফিল এডমন্ডসের ভিড়ে প্রথম মৌসুমে তেমন ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি।

কিন্তু, পরের মৌসুম শুরুর আগে তরুণ ক্রিকেটারদের এক প্রোগ্রামে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে যান তিনি। সেখানে ব্যাটিং নিয়ে ডেভিড গাওয়ারের সাথে কাজ করেন। ফলাফলস্বরূপ ব্যাটিংয়ে রানের ফল্গুধারা, কেন্টের পাশাপাশি জাতীয় দলে ডাক পান। জাতীয় দলের পাশাপাশি ১৯৮০ সালে বিশ্ব একাদশের অংশ হয়ে মাইকেল হোল্ডিং, রোহান কানহাই, কলিন্স কিংদের সতীর্থ হিসেবে পাকিস্থান সফরে যান তিনি।

জাতীয় দলে ডাক পেলেও মূলত ব্যাকাপ উইকেটরক্ষক হিসেবেই দলে থাকতেন। তাই বারবার অভিষেকের খুব কাছে গিয়েও ফিরে আসতে হচ্ছিল। অবশেষে বেনসন এন্ড হেজেজ কাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক ঘটে তার। যদিও তেমন আলো ছড়াতে পারেননি সে ম্যাচে, ওপেনিং করতে নেমে আউট হন ১৫ রান করেই।

ম্যাচটি স্মরণীয় হয়ে আছে ডেভিড গাওয়ারের ১১৫ বলে ১৫৮ রানের অনবদ্য এক ইনিংসের সুবাদে। এরপর ১৯৮৩ বিশ্বকাপগামী ইংল্যান্ড দলের সদস্যও ছিলেন তিনি। জাতীয় দলের হয়ে ১৮ টি একদিনের ম্যাচে অংশ নেন তিনি।

বলার মতো রান করতে পারেননি কোনো ম্যাচেই, কেবল একবার মেলবোর্নে অজিদের বিপক্ষে ৪২ রান করেন। যদিও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে প্রায় ৯ হাজারের কাছাকাছি রান করেছেন তিনি। ১৯৯০ সালে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নেন তিনি।

ক্রিকেট থেকে অবসরের পর তিনি আম্পায়ার হিসেবে নতুন ক্যারিয়ার শুরু করেন। ২০০২ সালে তিনি আইসিসি আম্পায়ার হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ইংল্যান্ড এবং শ্রীলংকার মধ্যকার একদিনের ম্যাচ দিয়ে আম্পায়ারিংয়ের হাতেখড়ি ঘটে তার। দ্রুতই আম্পায়ার হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি।

বিলি বাউডেনের মতো আঙুল বাঁকানো কিংবা ডেভিড শেফার্ডের মতো মজার সব অঙ্গভঙ্গি না করলেও ক্রিকেটারদের মাঝে তিনি জনপ্রিয় ছিলেন তাঁর সদাহাস্য মুখভঙ্গিমার। খেলোয়াড়দের মধ্যে এজন্য তিনি দ্রুতই জনপ্রিয়তা পান।

আম্পায়াররা যে কেবল গুরুগম্ভীর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে না বরং হাসতেও জানে সেটা বোধহয় তার মাধ্যমেই প্রথম দেখেছিল পুরো বিশ্ব। ২০০৯ সালে আইসিসির এলিট আম্পায়ার প্যানেলে যুক্ত হন তিনি।

প্রায় দুই দশকের আম্পায়ারিং জীবনে বির্তকও কম ছড়াননি। একবার শচীন টেন্ডুলকারকে ৯৯ রানে ভুল সিদ্ধান্তে আউট দেন তিনি। তবে সবচেয়ে বড় বিতর্ক ছড়ান ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশ বনাম ভারত ম্যাচে। সেবারের বিশ্বকাপের ডার্কহর্স বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারতের ম্যাচে বেশ কিছু ভুল সিদ্ধান্ত দেন তিনি যার সবগুলোই যায় বাংলাদেশের বিপক্ষে।

প্রথমে রুবেল হোসেনের ফুলটস বলে ক্যাচ আউট হন রোহিত শর্মা। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে নো বল ডাকেন গোল্ড। পরে রোহিত শর্মার ঝড়ো ইনিংস ম্যাচের ফলাফলে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হয়ে দাঁড়ায়।

এরপর বাংলাদেশের ইনিংসেই তখনকার সেরা ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে বিতর্কিতভাবে ক্যাচ আউট দেন তিনি। এ কারণে এদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে ইয়ান গোল্ড হয়ে আছেন একজন খলনায়ক হিসেবেই।

২০১৯ বিশ্বকাপে ভারত বনাম শ্রীলঙ্কার ম্যাচ দিয়ে আম্পায়ারিং জীবনের ইতি টানেন গোল্ড। ১৩ বছরের ক্যারিয়ারে আম্পায়ার হিসেবে ৭৪টি টেস্ট এবং ১৪০টি ওয়ানডে পরিচালনা করেছেন তিনি।

কিছুটা বিতর্কিত হলেও আম্পায়ারিং জীবনে তিনি পরিচিত ছিলেন ‘খেলোয়াড়দের আম্পায়ার’ নামে। অভিনব কিছু ব্যাপার ছিল তাঁর মধ্যে। মাঠে ওভারের ছয়টা বল গুণতেন তিনি বাহরাইনের ছয়টি দিনার দিয়ে!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link