নিউজিল্যান্ডের রাজধানী ওয়েলিংটনে জন্ম হলেও রাচিন রবীন্দ্রর শিকড় যে ভারতে, সেটা অনেকেরই জানা। নব্বই দশকের দিকে ভারতের ব্যাঙ্গালুরু থেকে নিউজিল্যান্ডে পাড়ি জমিয়েছিলেন রবীন্দ্রর বাবা রবি কৃষ্ণমূর্তি ও মা দীপা কৃষ্ণমূর্তি। এর সেখানেই তাদের জীবন যাপন, রাচিনের জন্ম এবং বেড়ে ওঠা।
ভারতীয় বংশোদ্ভুত এ ক্রিকেটার যে একদিন নিউজিল্যান্ডের জার্সিতে সেই ভারতের মাটিতে এসেই বিশ্বকাপ রাঙাবেন, তা কে-ইবা ভেবেছিল। তবে বাইশ গজের ক্রিকেট মিলিয়ে দিয়েছে সেই কল্পনার সাথে বাস্তব চিত্র।
নিউজিল্যান্ডের হয়ে রীতিমত এবারের বিশ্বকাপে রানবন্যা বইয়ে দিচ্ছেন রাচিন রবীন্দ্র। আর তাতে একে বিশ্বকাপের বেশ কিছু রেকর্ডের মালিক বনেও যাচ্ছেন তিনি। এই যেমন পাকিস্তানের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেই বিশ্বকাপের অভিষেক আসরে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছেন রবীন্দ্র।
মজার ব্যাপার হলো, যে ব্যাঙ্গালুরুতে তাঁর বাবা মা বেড়ে উঠেছিলেন, যে শহরে রাচিন নিজে টেলিভিশনের পর্দায় গত বিশ্বকাপের ফাইনালে কিউইদের হৃদয় বিদারক হার দেখেছিলেন, সেই ব্যাঙ্গালুরুর মাঠেই তিনি এ রেকর্ড গড়লেন।
তবে শুধু এই রেকর্ডই নয়, রাচিনের নাম জড়িয়ে গেছে আরো বেশ কয়েকটি কীর্তিতে। বিশ্বকাপের মঞ্চে তৃতীয় শতক নিউজিল্যান্ড ব্যাটারদের মধ্যেও সর্বোচ্চ। এর আগে কিউইদের ৬ ব্যাটার বিশ্বকাপে দুটি করে সেঞ্চুরি করেছিলেন।
এছাড়া সবচেয়ে কম বয়সে বিশ্বকাপে তিন সেঞ্চুরির কীর্তিও এখন রবীন্দ্রর। ২৩ বছর ৩৫১ দিনে রাচিন পেয়েছেন বিশ্বকাপে তৃতীয় সেঞ্চুরি। এর আগে সর্বনিম্ন ২২ বছর ৩১৩ দিন বয়সে ভারতীয় কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকার পেয়েছিলেন দ্বিতীয় সেঞ্চুরি।
এ ছাড়া আরো দুটি রেকর্ড হাতছানি দিচ্ছে রাচিন রবীন্দ্রর সামনে। ১৯৯৬ বিশ্বকাপে ৫২৩ রান করেছিলেন শচীন টেন্ডুলকার। যা ২৫ বছরের কম বয়সী ব্যাটারদের মধ্যে ছিল সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডে। ৮ ম্যাচে এবারের বিশ্বকাপে রাচিন এখন পর্যন্ত করেছেন শচীনের মতোই ৫২৩ রান। আর এক রান করলেই গত ২৭ বছর ধরে টিকে থাকা শচীনের এ রেকর্ডটাকে ভেঙে দিবেন রাচিন।
তবে আর ১০ রান করলে অভিষেক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান করার রেকর্ডটাও নিজের করে নিবেন রাচিন। বিশ্বকাপে নিজের অভিষেক আসরে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটা এখন পর্যন্ত রয়েছে জনি বেয়ারস্টোর দখলে। ২০১৯ বিশ্বকাপে তিনি ৫৩২ রান করেছিলেন।
অবশ্য রাচিনের এ রেকর্ডযাত্রায় এখন পর্যন্ত অম্লমধুর স্মৃতিই সঙ্গী হয়েছে। কেননা টানা ৪ জয়ে বিশ্বকাপ জিতলেও তাঁর দল এরপর হেরেছে টানা ৪ টা ম্যাচ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শেষ ম্যাচে না জিততে পারলে সেমি থেকেই ছিটকে যেতে পারে নিউজিল্যান্ড। দারুণ ছন্দে থাকা রাচিন নিশ্চয়ই সেটা চাইবেন না। রানবন্যায় আবারো সবাইকে রোমাঞ্চিত করাই দিকে চোখ থাকবে কিউই ক্রিকেটের এ ভবিষ্যৎ স্তম্ভের।