ভারতীয় টেস্ট হাসপাতাল

গতকাল থেকে কথাটা খুব বলা হচ্ছে।

অনেকেই বলেছেন, ভারতের হোটেলটা এখন হাসপাতালে পরিণত হয়েছে। এটা একেবারে আক্ষরিক অর্থেই সত্যি কথা।

২১ সদস্যের টেস্ট দল নিয়ে অস্ট্রেলিয়া এসেছিলো ভারত। এর মধ্যে শুধুমাত্র চোটে পড়ে গতকাল পর্যন্ত দেশে ফিরে গেছেন ৫ জন ক্রিকেটার। সবমিলিয়ে ৯ জন ক্রিকেটার গুরুতর চোটে আক্রান্ত। ভারতের মূল একাদশে থাকতে পারতেন এমন ৭ জন ক্রিকেটার ব্রিসবেন টেস্টের একাদশে থাকতে পারবেন না ইনজুরির জন্য। দু’জন সম্ভবত নিতান্ত বাধ্য হয়ে ব্যাথার ইনজেকশন নিয়ে মাঠে নামবেন।

এর বাইরে পারিবারিক কারণে প্রথম টেস্টের পর থেকেই নেই দলের নিয়মিত অধিনায়ক ও সেরা ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি। সবমিলিয়ে এই দলটাকে ভারতের ‘বি-টিম’ বললেও খুব অন্যায় হয় না।

আসুন দেখে নেওয়া যাক, সেই নিয়মিত খেলোয়াড়দের, যারা ব্রিসবেনে থাকছেন না।

১. জাসপ্রিত বুমরাহ

ইনজুরির সর্বশেষ শিকার ভারতের এই এক্সপ্রেস বোলার। গ্যাবার উইকেটে সব দলেরই প্রধান অস্ত্র হয়ে ওঠে ফাস্ট বোলাররা। সেখানেই নামতে হবে ভারতের ফ্রন্টলাইন সব পেসারকে ছাড়াই। সর্বশেষ বুমরাহ ছিটকে যাওয়ার ফলে মূল একাদশের কোনো ফাস্ট বোলার আর বাকি রইলেন না।

ক্রিকেট বিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকবাজ নিশ্চিত করেছে যে, তলপেটের মাংসপেশিতে ব্যাথা পাওয়া বুমরাহ ব্রিসবেনে খেলবেন না। সম্ভবত বুমরাহর কিছু মাংসপেশি ছিড়েও গেছে। তাঁকে খেলানোর ঝুকি নেবে না ভারতীয় দল।

২. রবীন্দ্র জাদেজা

দেশের বাইরের টেস্টে ভারতের অন্যতম বড় অস্ত্র হয়ে উঠেছেন রবীন্দ্র জাদেজা। ব্যাটে-বলে দারুণ ফর্মে ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এই সিরিজে। এই সিডনি টেস্টেও ৪ উইকেট নিয়েছেন। এর আগেই ফিফটি করে এসেছেন। কিন্তু সেই জাদেজাকে পাচ্ছে না ভারত।

সিডনি টেস্টেই তৃতীয় দিন ব্যাটিংয়ের সময় প্যাট কামিন্সের বলে চোট পান জাদেজা। ওই অবস্থায় ব্যাটিং চালিয়ে যান। পরে দেখা যায়, তাঁর আঙুল ডিসলোকেটেড হয়ে গেছে। ফলে সিডনিতেই দ্বিতীয় ইনিংসে আর ব্যাট করতে পারেননি। যদিও প্যাড পরে তৈরী ছিলেন। কিন্তু তারও পরের ম্যাচ আর খেলা হচ্ছে না।

৩. হনুমা বিহারি

হনুমা বিহারি এই সিরিজটাতে খুব একটা নিজেকে প্রমাণ করতে পারছিলেন না। তাকে নিয়ে একটু ফিসফাসও হচ্ছিলো। এই অবস্থায় ভারতের ইতিহাস তৈরি করা ইনিংসটা খেলা শুরু করলেন তিনি। আর এই ছোট্ট কিন্তু ভয়ানক গুরুত্বপূর্ন ইনিংসের পথেই পেলেন হ্যামাস্ট্রিংয়ে চোট।

ইনিংসটা খেললেন খুড়িয়ে খুড়িয়ে। এক পর্যায়ে আর হাটতেই পারছিলেন না। শেষমেশ ম্যাচ শেষ করানোর পর তার স্ক্যান করানো হয়েছে। স্ক্যানের খবর একদমই ভালো নয়। ব্রিসবেন টেস্ট তো বটেই; ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাটির সিরিজও মিস করতে যাচ্ছেন তিনি।

৪. লোকেশ রাহুল

লোকেশ রাহুল টেস্টে সুযোগ পাননি। অবশ্য তিনি কেনো সুযোগ পাচ্ছেন না, এ নিয়ে অনেক কথা হচ্ছিলো। মনে করা হচ্ছিলো, ভুল শোধরাতে সিডনিতে নামিয়ে দেওয়া হবে তাকে। কিন্তু তার আগেই নেটে ইনজুরিতে পড়েছেন তিনি।

মেলবোর্নেই অনুশীলন করার সময় কব্জিতে চোট পান তিনি। পরপরই স্ক্যান করে জানা যায়, এই সিরিজে আর তার খেলার সম্ভাবনা নেই।

৫. মোহাম্মদ শামি

ইশান্ত ও উমেশ না থাকায় টেস্ট অ্যাটাকের নেতৃত্বে ছিলেন শামি। কিন্তু তাকেও ছিটকে যেতে হয়েছে।

অ্যাডিলেডে ৩৬ রানে ভারতের ৯ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর ব্যাটে নেমেছিলেন তিনি। রান তো করতেই পারেননি। কামিন্সের শর্টপিচ বলে কনুইতে আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়েন। ভারতের ইনিংস ওই ৩৬ রানে শেষ হয়ে যায়। আর শামিরও অস্ট্রেলিয়া সফর ওখানে শেষ হয়ে যায়।

৬. ইশান্ত শর্মা

ইশান্ত তার চোট থেকে সেরে উঠতে না পারায় অস্ট্রেলিয়া সফরেই আসতে পারেননি। তিনি চোটে পড়েছিলেন আইপিএলের সময়। সেই চোট থেকে সেরে উঠে টেস্ট সফর করার যে ফিটনেস, সেটা ফিরে পাননি।

ভারতের এখনকার টেস্ট আক্রমণের প্রধান বোলার হলেন ইশান্ত শর্মা। তাকে ছাড়াই এই সফরটা শুরু করা কঠিন ছিলো ভারতের জন্য।

৭. উমেশ যাদব

এই সিরিজে ভারতের পেসার মানেই ইনজুরি। সেই তালিকায় উমেশ নাম লিখিয়েছেন মেলবোর্ন টেস্টে। তৃতীয় দিন বল করার সময় কাফ মাসলে টান লাগে। পরে স্ক্যান করিয়ে দেখা যায়, অবস্থা ভালো না। সিরিজই শেষ হয়ে যায় যাদবের। পরে তাকে দেশেও ফেরত পাঠানো হয়েছে।

৮. বিরাট কোহলি

এই ইনজুরি জর্জর তালিকায় বিরাট কোহলি একজন ব্যতিক্রম। তিনিও প্রথম টেস্টের পর দেশে ফেরত এসেছেন। তবে সেটা ইনজুরির জন্য নয়। তিনি ফিরে এসেছিলেন সন্তান সম্ভবা স্ত্রীর পাশে থাকার জন্য। ইতোমধ্যে তাদের একটা কন্যা সন্তান হয়েছে।

কোহলির এই ছুটি নিয়ে অনেক কথা হলেও এটা তাঁর প্রাপ্য ছিলো। কিন্তু বিপর্যয়ের মধ্যে বারবারই আলোচনায় এসেছে তাঁর অনুপস্থিতি। হাসপাতালের এই তালিকায় তাঁকে রাখা নিয়ে প্রশ্ন হতে পারে। তবে যেহেতু তাঁকে হাসপাতালেই স্ত্রীর পাশে থাকতে হয়েছে, তাই এখানে রেখে দিলাম কোহলিকে।

ইনজুরি নিয়ে খেলবেন

১. ঋষভ পান্ত

পান্ত ভারতীয় দলে কী করছেন, এ জাতীয় আলোচনা শুরু হয়েছিলো। এর মধ্যেই প্রথম ইনিংসে কামিন্সের বল হাতে লেগে ইনজুরিতে পড়েছিলেন। ফলে প্রথম ইনিংসে কিপিং করতে পারেননি। দ্বিতীয় ইনিংসে পেইন কিলার খেয়ে ব্যাটিং করেছেন। ভারতের ম্যাচটা বাচানোর প্রধান কাজ করে দিয়েছেন তিনি।

সম্ভবত পান্ত ছিটকে যাচ্ছেন না। তার যে অবস্থা, তাতে তাকে টিম ম্যানেজমেন্ট ব্রিসবেনে শেষ টেস্টে নামিয়ে দেবে। তবে পেইন কিলার নিয়েই খেলতে হবে তাঁকে। কিপিং করতে পারবেন না। ফলে একাদশে আসতে হবে ঋদ্ধিমান সাহাকে।

২. রবিচন্দ্রন অশ্বিন

আগে থেকেই কাঁধের চোটে ভুগছিলেন। এই চোট নিয়েই সফর চালিয়ে গেছেন। ব্যাটে-বলে দারুণ সময় কাটাচ্ছেন। কিন্তু সিডনিতে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করার আগের রাতে প্রবল ব্যাথা ফিরে আসে। সারা রাত তিনি ঘুমাতে পারেননি।

পরে পিঠে টেপ পেচিয়ে ব্যাট করেছেন। সিঙ্গেল নেওয়ার জন্য দৌড়াতে পারছিলেন না। বিহারি ও তিনি দু’জনই চোট নিয়ে একসাথে ব্যাট করেছেন। সম্ভবত শেষ টেস্টেও এই ব্যাথা নিয়েই মাঠে নামতে হবে অশ্বিনকে।

৩. মায়াঙ্ক আগারওয়াল

ভারতীয় ইনজুরি বন্যায় সর্বশেষ সংযোজন মায়াঙ্ক।

সাধারণ পরিস্থিতিতে ব্রিসবেনে দলে থাকার কথা ছিলো না তাঁর। কিন্তু হনুমা বিহারিসহ অনেকে এই ম্যাচে না থাকায় সম্ভবত একাদশে ফিরতে হবে তাকে। কিন্তু তিনিও নেটে ব্যাট করতে গিয়ে ব্যাথা পেয়েছেন হাতে। খুব গুরুতর নয় চোট। তবে ব্যাথা আছে। আর এই ব্যাথা নিয়েই খেলতে হবে সম্ভবত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link