রবিন মিঞ্জ, আইপিএল ইতিহাসের প্রথম আদিবাসী ক্রিকেটার

ভারত-ইংল্যান্ডের চতুর্থ টেস্ট রাঁচির মাঠে। রাজকোট থেকে তাই রাঁচির পথে বিমানযোগে টিম ইন্ডিয়ার যাত্রা। রাঁচি বিমানবন্দরে জাভিয়ার মিঞ্জ নামের এক সিকিউরিটি গার্ড গোটা দলটাকেই বরণ করে নিতে প্রস্তুত। রাঁচি বিমানবন্দর থেকে একে একে ভারতীয় ক্রিকেটাররা বেরিয়ে যাচ্ছিলেন, শুভমান গিলও পেরিয়ে গেলেন। কিন্তু তাঁর কাছে অজানাই থেকে গেল, আগামী আইপিএলে তাঁর দলেরই এক সদস্যের বাবাকেই তিনি পাশ কাটিয়ে এসেছেন।

হ্যাঁ। ঠিকই শুনেছেন। প্রথম আদিবাসী ক্রিকেটার হিসেবে আইপিএলে এবারই ডাক পেয়েছেন রবিন মিঞ্জ। ঝাড়খণ্ডের এই উইকেটরক্ষক ব্যাটারকে ৩.৬ কোটিতে কিনেছে শুভমান গিলের গুজরাট টাইটান্স। রবিন মিঞ্জ সেই সিকিউরিটি গার্ডেরই ছেলে। যিনি একসময় সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন। অবসরের পরে নিজের কর্মস্থল হিসেবে বেছে নিয়েছেন রাঁচির বিমানবন্দর।

আইপিএল নিলামের আগে পর্যন্ত রবিন মিঞ্জ নামটা অচেনাই ছিল ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে। তবে প্রথম আদিবাসী ক্রিকেটার হিসেবে আইপিএলে জায়গা করে নেওয়ার পরই আলোচনায় আসেন তিনি। রবিনকে গুজরাট পেলেও তাঁর জন্য নিলামের টেবিলে লড়াই গড়িয়েছিল অনেকদূর। তাঁর জন্য নিলামের টেবিলে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করেছিল চেন্নাই সুপার কিংস ও মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের মতো দলও। শেষ পর্যন্ত দিল্লি ক্যাপিটালসকে নিলামে হারিয়ে রবিনকে দলে নিয়ে নেয় গুজরাট।

২০২৩ সালের আগস্টে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স দল  একটি আন্তর্জাতিক ট্রেনিং ক্যাম্পের আয়োজন করেছিল। সেখানে সুযোগ পেয়েছিলেন রবিন মিঞ্জও। রবিনের পাওয়ার হিটিং সক্ষমতা নজরে পড়ে সেখানেই। এমনকি তাঁর পরিচিতিও হয়ে যায় রাঁচির ক্রিস গেইল হিসেবে। যদিও এখনও ঝাড়খণ্ডের হয়ে খেলা হয়নি এ ক্রিকেটারের। তবে বাঁ-হাতি ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি উইকেটকিপিংটা ভালই পারেন তিনি। এ ছাড়া পার্ট টাইমার হিসেবে বাঁ-হাতি স্পিন বোলিং করেন তিনি।

রবিন মিঞ্জের ক্রিকেটে হাতেখড়ি ধোনির কোচ চঞ্চল ভট্টচার্যের কাছে। তাঁর অধীনেই ঝাড়খণ্ডের হয়ে অনূর্ধ্ব ১৯ এবং ২৫ দলের হয়ে দাপটে খেলেছেন এ ক্রিকেটার। তবে আদিবাসী এ প্রতিভাকে সবার সামনে এনেছিলেন আরেক রবিন, রবিন উথাপ্পা। মূলত মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের ক্যাম্পে তাঁর হিটিং এবিলিটি নজর এড়ায়নি উথাপ্পার। আর এই উথাপ্পাই সর্বপ্রথম তাঁকে রাঁচির ক্রিস গেইল হিসেবে সবার সামনে উপস্থাপন করেছিলেন। আর এরপর তো ইতিহাস। ২০২৪ আইপিএল দিয়ে শীর্ষ পর্যায়ের ক্রিকেটে অভিষেক হতে যাচ্ছে তাঁর।

ছেলে আইপিএল খেলার সুযোগ পাওয়ার পরে অনেকেই রবিন মিঞ্জে পিতাকে বলেছিলেন যে, এখন আর তাঁর কাজ করার কী দরকার। তবে জাভিয়ার মিঞ্জ এই কাজটাই করে যেতে চান। কারণ গোটা জীবনে তিনি বহু ক্রিকেটারকে বিমানে আসতে দেখেছেন। তাঁর ছেলেও একদিন জাতীয় দলের সঙ্গে বিমানে চড়বে, সেই স্বপ্ন পূরণের আশাতেই তিনি এই চাকরি করে যাবেন আরো অনেক দিন।

 

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link