চল্লিশ। একটা সংখ্যা। কিন্তু কেবলই সংখ্যা? আরো একভাবে এই সংখ্যাটার বিবরণ দেওয়া যায়। একজন খেলোয়াড়ের সাথে যুক্ত করে। খেলোয়াড় বিরাট কোহলি। নিজের অধিনায়কত্বের দীর্ঘ সাত বছরের সময়কালে বিরাট ৬৮ টেস্ট ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ভারতকে। সেই ৬৮ টেস্টের মধ্য থেকে ৪০টি ম্যাচে বিরাট তাঁর দল নিয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন জয় নিয়ে।
এমন অসাধারণ পরিসংখ্যানের একজন অধিনায়ক সম্প্রতি ছেড়ে দিয়েছেন সে দায়িত্ব। বেশ একটা লম্বা সময় ধরে তিনি ভারত ক্রিকেট দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিন ফরম্যাটেই। একে একে ছেড়েছেন সেসব দায়িত্ব। কিন্তু এই যে টেস্ট ক্রিকেটে তাঁর সাফল্য যে ম্যাচ জেতানোর দিক নির্দেশনা দেওয়া পর্যন্ত খ্যান্ত ছিল তা কিন্তু নয়। তাঁর সময়কালে বহু খেলোয়াড় নিজেকে নতুন করে খুঁজে পেয়েছিলেন। সেই সকল খেলোয়াড়দের মধ্যে বর্তমান ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক রোহিত শর্মাও রয়েছেন।
- রোহিত শর্মা
রোহিত শর্মা বিরাট পরবর্তী ভারতীয় সাদা বলের ক্রিকেটকে নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্বভার নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। হয়ত তাঁর কাঁধে টেস্টের ভারও এসে পড়তে পারে। সম্ভাবনা অত্যন্ত প্রখর। তবে ২০১৯ সালের আগে রোহিত শর্মা টেস্ট দলের নিয়মিত মুখ ছিলেন না। আসা-যাওয়ার মাঝে দিন পাড় করছিলেন তিনি।
তবে বাকি সাদা বলের দুই ফরম্যাটের নিয়মিত ওপেনার ছিলেন। ২০১৯ সালে তাঁকে টেস্ট দলের ওপেনিং পজিশনে সুযোগ দেওয়া হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সুযোগ পেয়েই দ্বিশতক হাঁকান রোহিত। সেই থেকে টেস্টের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ওপেনিং করে আসছেন রোহিত শর্মা। রোহিত শর্মার নতুন করে টেস্ট ওপেনার হিসেবে আবির্ভূত হওয়া ঘটনা ঘটেছিলো বিরাট কোহলির অধিনায়কত্বকালীন সময়েই। সুতরাং রোহিতের এই নতুন পরিচয়ের ক্রেডিট বিরাট কোহলিকে দিতেই হয়।
- জাসপ্রিত বুমরাহ
অধিনায়ক বিরাটের সময়কালেই টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিলো জাসপ্রিত বুমরাহের। অধিনায়ক বিরাট ও তৎকালীন কোচ রবি শাস্ত্রী পরিকল্পনা করেই বুমরাহকে টেস্ট ক্রিকেটে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করেন। যেহেতু ভারতের পিচগুলো খুব একটা পেস বান্ধব নয় তাই তাঁকে বিদেশের পেস সহায়ক কন্ডিশনে অভিষেক ঘটানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
পরিকল্পনামাফিক ২০১৮ সালে প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ দিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে পদার্পণ করেন জাসপ্রিত বুমরাহ। সেই সিরিজ ২-১ ব্যবধানে ভারত হেরে গেলেও বুমরাহ নিয়েছিলেন ১৪টি উইকেট। এক ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেওয়ার কৃতীত্বও আছে তাঁর। সুতরাং জাসপ্রিত বুমরাহও বিরাটকে একটা ধন্যবাদই জানাতেই পারেন।
- লোকেশ রাহুল
নবাগত সুভমান গিলের দারুণ পারফর্মেন্সের পর ভারত টেস্ট দলের ওপেনিং এ নিজের জায়গাটা যেন হারাতেই বসেছিলেন লোকেশ রাহুল। ২০২১ সালে অস্ট্রেলিয়ার ট্যুর শেষে দল থেকে ছিটকে যান রাহুল। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন গিল।
এরপর ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ ও টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে খেলেছেন গিল। কিন্তু অভিজ্ঞ রাহুলকে আরো সুযোগ দেওয়ার স্বপক্ষে ছিলেন অধিনায়ক বিরাট। তিনি রাহুলকে ব্যাক করে সুযোগ দিলেন ইংল্যান্ড ট্যুরে। সেখানে আস্থার প্রতিদান দিয়ে নিজের জায়গা পুনঃরায় পোক্ত করে নেন লোকেশ রাহুল।
- ঋষাভ পান্ত
বা-হাতি উইকেট কিপার ব্যাটার ঋষাভ পান্ত তাঁর ব্যাটিং এপ্রোচের জন্যে বেশ কয়েকবার সমালোচনার স্বীকার হতে হয়েছে। কিন্তু তাঁকে সবসময়ই ব্যাক করেছেন অধিনায়ক বিরাট কোহলি। ভারতের টেস্ট একাদশে ঋদ্ধিমান সাহা ছিলেন অটো চয়েজ। কিন্তু বিরাট ঋষাভের উপর ভরসা রেখে তাঁকে দলে সুযোগ দিয়েছেন এবং ঋষাভ সেই সুযোগের সদ্বব্যবহারও করেছেন।
অস্ট্রেলিয়ার গ্যাবায় ঐতিহাসিক টেস্ট জয় ঋষাভের অবদান তাঁকে বন্দনায় ভাসিয়েছিলো। সদ্য সমাপ্ত হওয়া দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের ২য় ম্যাচে বাজে শট খেলে আউট হওয়ার পরও বিরাট ও ম্যানেজমেন্ট ভরসা হারাননি ঋষাভের উপর থেকে। ঋষাভ প্রতিদানও দিয়েছেন শেষ ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ এক শতক হাঁকিয়ে।
- মায়াঙ্ক আগারওয়াল
২০১৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে মায়াঙ্ক আগারওয়ালের অভিষেক হয়। সেই সিরিজের মাঝপথে ঝুঁকি নেওয়া সিদ্ধান্ত নেন সেই সময়ের ভারতীয় কোচ রবি শাস্ত্রী। ওপেনার পরিবর্তন করার সেই পরিকল্পনায় সম্মতি জানিয়েছিলেন অধিনায়ক বিরাট কোহলি। সেই সুবাদেই মায়াঙ্ক আগারওয়াল সুযোগ পান দলে।
সেই সিরিজে দারুণ সব ইনিংস খেলে সবার নজর কাড়তে সক্ষম হন মায়াঙ্ক। এরপর জাতীয় দলের টেস্ট স্কোয়াডে প্রায়শই দেখা মিলেছে তাঁর। সুতরাং মায়াঙ্কও হয়ত কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবেন বিরাট কোহলির প্রতি। মায়াঙ্কের আন্তর্জাতিক ব্রেকথ্রু তো এসেছে বিরাটের কল্যাণেই।