পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে ১৮৭ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে শেষ ৪ ওভারে চেন্নাই সুপার কিংসে তখন প্রয়োজন ৪৭ রানের। ব্যাকফুটে থাকা চেন্নাই তখন আম্বাতি রাইডুর ব্যাটে জয়ের স্বপ্ন দেখছে। ১৭ তম ওভারে আর্শদ্বীপ সিং আসলেন বল হাতে। পাঞ্জাবের জয় অনেকটাই নির্ভর করছে ডেথ ওভারে তাঁর এই দুই ওভার থেকে। অবশ্য কয়েক মৌসুম ধরেই ডেথ ওভারে তিনি আইপিএলের অন্যতম সেরা বোলার।
বাঁ হাতি এই পেসার নিজের নামের প্রতি সুবিচার করলেন। ১৭ তম ওভার থেকে দিলেন মাত্র ৬ রান! চাপ তখন চেন্নাইয়ের উপর। ১৮ তম ওভারে কাগিসো রাবাদা মাত্র ৬ রান দেওয়ার পর ১৯ তম ওভারে আবার গুরুদায়িত্ব আর্শদ্বীপের উপর। শেষ দুই ওভারে দরকার ৩৫ রানের।
একপ্রান্তে মহেন্দ্র সিং ধোনি, যিনি আগের ম্যাচেই ফিনিশিংয়ে মুম্বাইয়ের বিপক্ষে খেলেছেন দুর্দান্ত এক ক্যামিও। অপরদিকে, আরেকপ্রান্তে অধিনায়ক রবীন্দ্র জাদেজা। দু’জনই ফিনিশিংয়ে অন্যতম সেরা। আর্শদ্বীপের জন্য চাপটা তাই অনেকটাই বেশি। কিন্তু ১৯তম ওভারে এক বাউন্ডারিতে দেন মোটে আট রান! শেষ ওভারে ২৭ দরকার হলেও ১১ রানে হেরে যায় চেন্নাই।
ডেথে শেষ দুই ওভারে মাত্র ১৪ রান দেন এই বাঁ হাতি পেসার। ডেথ ওভারে কমপক্ষে পাঁচ ওভার করা বোলারদের মধ্যে এবারের আসরে ডেথ ওভারে সেরা ইকোনমি রেট আর্শদ্বীপের।
আসরের প্রথম ম্যাচে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর বিপক্ষে ১৮তম ওভারে দুর্দান্ত বোলিং করেন আর্শদ্বীপ। বিরাট কোহলি, দীনেশ কার্তিকরা যেখানে ওভারপ্রতি দশের বেশি রান তুলছিলেন সেখানে ডেথ ওভারে নীরবেই কিপটে বোলিং করেছেন তিনি। এরপর মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের যখন ১৮ বলে ৩৩ রান প্রয়োজন ছিল সেখানে ১৮ তম ওভারে বল করতে এসে মাত্র পাঁচ রান দেন তিনি। গুজরাট টাইটান্সের বিপক্ষেও ১৮ তম ওভারে বোলিংয়ে এসে হার্দিক পান্ডিয়ায় বিপক্ষে দুর্দান্ত বোলিং করেন আর্শদ্বীপ।
পাঞ্জাব কিংসে আর্শদ্বীপের আরেক সতীর্থ পেসার কাগিসো রাবাদা এক বার্তায় বলেন, ‘এবারের আসরের আইপিএলে ডেথ ওভারে বোলার আর্শদ্বীপ।’
ডেথ ওভারে এবারের আসরে মাত্র ৫.৬৬ ইকোনমিতে রান দিয়েছেন আর্শদ্বীপ। ডেথে কমপক্ষে পাঁচ ওভার করা বোলারদের মধ্যে পরিসংখ্যান বিচারে তিনি সেরা। ২০২০ সাল থেকে এখন অবধি আইপিএলে ডেথ ওভারে তাঁর ইকোনমি রেট গড়ে মাত্র ৮.৬৩। এই তালিকায় তাঁর সামনে আছেন শুধুমাত্র জাসপ্রিত বুমরাহ ও আনরিচ নর্কে।
গেল কয়েক বছরে সবচেয়ে বেশি ইয়র্কার ডেলিভারি করা সেরা দশজনের তালিকাতেও আছেন আর্শদ্বীপ। ২০২০ পরবর্তী সময়ে ১৪ ম্যাচে ৩২টি ইয়র্কার দিয়েছেন এই পেসার। এই লেন্থে বল করে ওভার প্রতি মাত্র ৩.৭৫ রান দিয়েছেন তিনি!
নামের পাশে হয়ত ভুরি ভুরি উইকেট নেই, গতির ঝড়ও তুলতে পারেন না। কিন্তু তিনি সবসময়ই সীমাবদ্ধতার মাঝেও নিজের সেরা পারফরমটাই করছেন। ডেথ ওভারের অন্যতম সেরা বোলার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। লাইমলাইটটা নেই তাঁর উপর। তবু তিনি প্রতিনিয়ত পারফরম করে চলেছেন। আপাতত অপেক্ষা জাতীয় দলের দরজা খোলার।
এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভারতীয় সমর্থকরা আওয়াজ তুলেছেন আসন্ন অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আর্শদ্বীপকে স্কোয়াডে রাখতে। যদিও এত এত তারকা ক্রিকেটারের ভীড়ে এই অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারেন কিনা সেটাই দেখার অপেক্ষা। তবে এর জন্য আসরের বাকি ম্যাচগুলোতেও দেখাতে হবে দুর্দান্ত সব পারফরম্যান্স।