জোর করে ক্রিকেট ক্যারিয়ার এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন মাশরাফি?

আচ্ছা বলুন তো, পেশাদার ক্রিকেটে মাশরাফি সবশেষ কবে মাঠে নেমেছিলেন? ২০২৪-এ এসে এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য ফিরে যেতে হবে গত বছরের মে মাসে। অর্থাৎ প্রায় ৮ মাস পেরিয়ে যাচ্ছে মাশরাফিকে মাঠের ক্রিকেটে দেখা যায়নি। এ সময়কালে মাশরাফি নিজ এলাকার এমপি হিসেবে এলাকার ভাগ্য বদলাতে ছুটে বেরিয়েছেন, পরবর্তী নির্বাচনের জন্য নিজের নির্বাচনী প্রচারণারও প্রস্তুতি নিয়েছেন। সবশেষে টানা দ্বিতীয় বারের মতো সাংসদও নির্বাচিত হয়েছেন। প্রশ্নটা হচ্ছে, এই মুহূর্তে এসে মাশরাফির প্রধান পরিচয়টা কি? এমপি নাকি ক্রিকেটার?

বয়স চল্লিশ পেরিয়েছে। ক্রিকেট ক্যারিয়ারে এতদিনে অনেকে শেষের অধ্যায় লিখে নতুন ক্যারিয়ারে প্রবেশ করেন। এই যেমন মাশরাফিরই একসময়কার সতীর্থ সৈয়দ রাসেল, আফতাব আহমেদ, তুষার ইমরানরা কোচিং জগতে প্রবেশ করেছেন। মাশরাফি নিজেও ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শেষ ভেবে রাজনীতির মাঠে নতুন সেনানী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। কিন্তু কোনো এক অদ্ভুত মায়ায় ক্রিকেটটা যেন এখন ছাড়তে পারেননি তিনি। আসন্ন বিপিএলেও তিনি একটি দলের আইকন ক্রিকেটার। এমনকি অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করারও বড় সম্ভাবনা রয়েছে।

অন্তত সিলেট রয়্যালস তাঁকে সেটি ভেবেই দলে ভিড়িয়েছে। সবশেষ প্লেয়ার্স ড্রাফটের পর তাঁকে কেন্দ্র করেই ফ্র্যাঞ্চাইজিটি দল সাজিয়েছে। কিন্তু ভাবনার ব্যাপারটি হচ্ছে, এবারের বিপিএল মাশরাফি খেলবেন কিনা, তা নিয়েই এখন পর্যন্ত ধোঁয়াশা কাটেনি। প্রশ্ন হচ্ছে, এভাবে ক্যারিয়ারটা টেনে মাশরাফি নিজের ক্ষতি তো করছেনই, দলের ক্ষতিটাও কি তাঁর দ্বারা হচ্ছে না? ক্যারিয়ারের সিংহভাগ সময়েই পা তাঁকে ভুগিয়েছে। কিন্তু তারপরও সেই সীমাবদ্ধতা নিয়ে খেলে গিয়েছেন। এ নিয়ে সাধুবাদও পান বেশ। কিন্তু পেশাদার ক্রিকেটার হয়ে মাশরাফি এখন যেটা করছেন, তা কতটুকু যৌক্তিক?

চল্লিশ পেরোনোর পরও অনেকে বাইশ গজের বৃত্ত থেকে বের হতে পারেননি, এমন ক্রিকেটারের ইতিহাস বহু রয়েছে। তবে মাশরাফি ক্রিকেটের মায়ায় যতটা জড়িয়ে রাখছেন, তার চেয়ে বরং বাস্তবতাটা মেনে নিতে কিংবা বোধোদয়ে বড্ড বেশি পিছিয়ে আছেন। একে তো এমপির মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন আছেন, তার উপর নিজের শরীরটাও আর আগের মতো কথা বলছেনা। এমতাবস্থায় ক্রিকেট থেকে বিদায় বলাটাই অনুমেয়। কিন্তু মাশরাফি তো সেটি করছেনই না। উল্টো যাকে ঘিরে দল পরিকল্পনা আটছে, তাদের ক্ষতি করছেন।

বিপিএল শুরুর আর বাকি দিন সাতেকের। অথচ নিকট সময়ে এসেও তিনি দাবী করছেন, মাঠে নামার আগে ডাক্তার দেখাতে হবে। অর্থাৎ অনিশ্চয়তায় ভরা মাশরাফির বক্তব্যে স্পষ্ট কোনো আশার বাণী নেই। এখন এই শেষ মুহূর্তে এসে মাশরাফি যদি ছিটকে যান, তাহলে সিলেট রয়্যালস কীভাবে তাঁর বিকল্প খুঁজে নিবে? সব মিলিয়ে মাশরাফির এমন স্বেচ্ছাচারিতা কোনো একটা দিক দিয়ে নির্দিষ্ট দলকেই বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। মাশরাফি শেষ পর্যন্ত যদি বিপিএলের মঞ্চে মাঠে নামেনও, তা কি চেনা ছন্দে পেস বোলিংটা করতে পারবেন? বিভিন্ন সময় দেখা গিয়েছে, মাশরাফি স্পিন বোলিংটাও করেন। যদিও এনসিএল, ডিপিএল বাদে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে কখনোই এমনটা দেখা যায়নি।

সবমিলিয়ে মাশরাফিকে ঘিরে এমন অনিশ্চয়তা অনেক ভাবনার জন্ম দেয়। আর সেই সব ভাবনার মাঝে অন্যতম অভিযোগ হয়ে দাঁড়াচ্ছে, চূড়ান্ত রকমের আনফিট থাকা স্বত্ত্বেও জোর পূর্বক মাশরাফি ক্রিকেট ক্যারিয়ার এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা। এর শেষ কোথায়? প্রশ্নের উত্তরটা হয়তো মাশরাফিই জানেন।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link