ফিনিশার রিয়াদ: মিথ বনাম বাস্তবতা

সমস্যাটা এখানে দু’টি জায়গায় - প্রথমত ফিটনেসের ঘাটতি, দ্বিতীয়ত ফিটনেসের ঘাটতি। প্রায় প্রতিটা ডেলিভারিতেই লেগ সাইডের ছোট বাউন্ডারি লক্ষ্য করে মারতে চাচ্ছিলেন রিয়াদ, সেটা যেরকম ডেলিভারিই হোক। ডাউন দ্য উইকেটে গিয়ে খেলতে গিয়েও ব্যাটে বলে হয়নি। আফগানরা এই মাইন্ড সেট বুঝে ফেলে ক্রমাগত স্লোয়ার ছাড়তে থাকে।  রিয়াদের এই বাস্তবতা আগেই বুঝে ফেলে সিঙ্গেল নিয়ে খেলাটা দরকার ছিল সেটা তিনি পারেননি।

৪৭ তম ওভারের দ্বিতীয় ও তৃতীয় ডেলিভারি। পরপর দুই বলে সাজঘরে ফিরে গেলেন সেঞ্চুরিয়ান লিটন দাস ও হাফ সেঞ্চুরিয়ান মুশফিকুর রহিম। তিন উইকেটে ২৮৫ থেকে হঠাৎ করেই পাঁচ উইকেটে ২৮৫ হয়ে যায় বাংলাদেশ দলের।

উইকেটে তখন নতুন দুই ব্যাটসম্যান। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও আফিফ হোসেন ধ্রুব। শেষ ২১ বল থেকে বাংলাদেশ দল রান করল মাত্র ২১ রান। অথচ, ম্যাচের যে গতি বিধি ছিল তাতে দিব্যি ৫০ রান তোলা যেত।

কেন হয়নি? খুঁজে বের করা যাক।

মূল সমস্যাটা হল বাউন্ডারি একদমই বের করতে পারেনি বাংলাদেশ দল। শেষ ২১ বলে মাত্র একটা বাউন্ডারি এসেছে আফিফের ব্যাট থেকে। আফিফ ১২ বলে ১৩ রান করেছেন। তিনি কখনোই ক্লাসিক স্লগার নন। বরং ইনিংস গড়ে তুলতে পারেন, যেটা গত ম্যাচই প্রমাণ করেছেন। তাঁর যে আরো ওপরের দিকে মানে পাঁচে বা চারে ব্যাট করার উচিৎ – সেই কথাটা বারবারই বলা হচ্ছে।

এবার আসা যাক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের প্রসঙ্গে। টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক নয় বল খেলে তুলেছেন ছয় রান। নিজের ‘ফিনিশার’ তকমার প্রতি একদমই সুবিচার করতে পারেননি রিয়াদ।

সমস্যাটা এখানে দু’টি জায়গায় – প্রথমত ফিটনেসের ঘাটতি, দ্বিতীয়ত ফিটনেসের ঘাটতি। প্রায় প্রতিটা ডেলিভারিতেই লেগ সাইডের ছোট বাউন্ডারি লক্ষ্য করে মারতে চাচ্ছিলেন রিয়াদ, সেটা যেরকম ডেলিভারিই হোক। ডাউন দ্য উইকেটে গিয়ে খেলতে গিয়েও ব্যাটে বলে হয়নি। আফগানরা এই মাইন্ড সেট বুঝে ফেলে ক্রমাগত স্লোয়ার ছাড়তে থাকে।  রিয়াদের এই বাস্তবতা আগেই বুঝে ফেলে সিঙ্গেল নিয়ে খেলাটা দরকার ছিল সেটা তিনি পারেননি।

এবার একটা মজার স্ট্যাট শোনাই।

২০১৭ সালের শুরু থেকে এখন অবধি, ৩০ ওভারের পরে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ব্যাটিং পারফরম্যান্স খুবই হতাশাজনক। এই সময়ে ৫ বা তার পরবর্তী পজিশনে নামা রিয়াদের সালভিত্তিক ব্যাটিং স্ট্রাইক রেট অনেকটা এমন।

  • ২০১৭- ৯৭.৮ (১০ ইনিংস)
  • ২০১৮- ৮৮.৬ (১৩ ইনিংস)
  • ২০১৯- ৯৩.৪ (৮ ইনিংস)
  • ২০২০- ৮৬.৫ (২ ইনিংস)
  • ২০২১- ৯৮.৬ (১০ ইনিংস)

এই সময়ে রিয়াদের ডট খেলার পরিমাণ যদি বলি তাহলে সেগুলি অনেকটা এমন, মোট খেলা বলগুলির মধ্যে ৩০ ওভারের পরে ৫ বা তার পরের পজিশনে ব্যাট করতে নেমে তিনি ২০১৭ সালে ৪৫.২%, ২০১৮ সালে ৪৮.৪%, ২০১৯ সালে ৪৩.৯% , ২০২০ সালে ৩৯.২% আর ২০২১ সালে ৪১.৪% বলই তিনি ডট খেলেছেন।

রিয়াদের দলে থাকার সবচাইতে বেশি যে যুক্তি দেওয়া হয়, নিচের দিকে নেমে তিনি রান করেন, এখনও নাকি নিচের দিকে তিনি দলের সেরা ব্যাটসম্যান। এখন একটা দলের ৫ এর পরে নামা ব্যাটসম্যান যদি কোন সালেই ১০০ স্ট্রাইক রেট ওঠাতে না পারেন, প্রচুর ডট খেলেন, তাহলে সেই ব্যাটসম্যান আসলেই স্লগ ওভারে নামার জন্যে দলে থাকার উপযুক্ত কিনা সেই প্রশ্নটা থেকেই যায়।

আর প্রশ্নটা আরো বাড়ে যখন ডাগ আউটে ইয়াসির আলী চৌধুরী রাব্বির মত একজন ব্যাটসম্যান বসে থাকেন। সর্বশেষ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) ইয়াসির বড় শট খেলতে পারার সক্ষমতার জানান দিয়েছেন। তারপরও কেন রিয়াদেই আস্থা?

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...