সাকিব ফ্লপ তো বাংলাদেশও ফ্লপ!

৭০ বা তার কম রানে ৬ উইকেট হারিয়ে কখনোই ম্যাচ জেতেনি বাংলাদেশ। ডাচদের বিপক্ষে আজ বাংলাদেশ ষষ্ঠ উইকেট হারিয়েছিল সেই ৭০ রানেই। ম্যাচ জিততে হলে তাই বদলাতে হতো ইতিহাস। ইতিহাসের বদল ঘটেনি, ম্যাচটাও তাই জেতা হয়নি বাংলাদেশের।

টপ অর্ডার থেকে মিডল অর্ডার— ডাচদের বিপক্ষে মাঠে দাঁড়াতে পারেনি কেউই। শেষ দিকে তাসকিন, মুস্তাফিজুর ব্যাটিং নেদারল্যান্ডসের জয়োল্লাসে কিছুটা বিলম্বিতই করেছে শুধু। ২৩০ রানের লক্ষ্যে ৮৮ রান দূরে থেকেই শেষ হয়েছে বাংলাদেশের ইনিংস।

নিশ্চিতভাবেই ব্যাখ্যাতীত এক পরাজয়। ২০০৩ বিশ্বকাপে দুই সহযোগী দেশ কানাডা আর কেনিয়ার কাছে হেরেছিল বাংলাদেশ। পরের বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ডসের কাছে হারের পর শেষ ৩ আসরে কখনোই সহযোগী দেশের বিপক্ষে হারেনি বাংলাদেশ। প্রায় ১৬ বছর বাদে, আবারো সেই তিক্ত স্বাদ নিতে হলো সাকিব, মুশফিকদের।

নেদারল্যান্ডস ম্যাচের আগে দেশে ফিরেছিলেন সাকিব আল হাসান। টুর্নামেন্ট চলাকালীন কোনো কারণ ব্যতিত দেশে ফেরার ঘটনা বিশ্ব ক্রিকেটে বিরলই বটে। তবে এমন বিরল ঘটনা নিজের মতো করে ‘নিয়মিত’ই বানিয়ে ফেলেছেন সাকিব।

অবশ্য এবারে দেশে ফেরার উদ্দেশ্যটা ক্রিকেট কেন্দ্রিকই ছিল।  মিরপুরের শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের ইনডোরে কাজ করেছেন শৈশবের কোচ নাজমুল আবেদীনের সঙ্গে। কারণ সময়টা মোটেই ভালো যাচ্ছিল না বাংলাদেশ দলপতির।

তবে ব্যক্তিগত অনুশীলনের মাঝেই আবার ঘটলো অনাকাঙ্খিত ঘটনা। মিরপুরে অনুশীলন করতে গিয়ে জনরোষের মুখে পড়লেন সাকিব। সাকিবের অবশ্য তাতে প্রত্যুত্তর মেলেনি। তবে সমালোচনা যখন ঘিরে ধরে, মাঠের সাকিবকে ঠিক তখনই পাওয়া যায় সেরা রূপে। এমন এক সম্ভাব্যতায় নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচের সাকিবের দিকে চোখ ছিল সবার।

কিন্তু যেন কোনো কিছুতেই ‘কিছু’ হল না। ভারতে গিয়ে নিজেকে রাঙাতে পারলেন না সাকিব। দলের বাজে পরিস্থিতিতে যখন হাল ধরার গুরুদায়িত্ব তাঁর কাধে, ঠিক তখনই আউট হয়ে দলের বিপদ বাড়িয়ে দিলেন সাকিব। রানের দেখা পেলেন না বাংলাদেশ অধিনায়ক।

ভ্যান মিকেরেনের লাফিয়ে ওঠা বলটা কাট করার মতো জায়গা ছিল না। কিন্তু সে বলটিই কাট করতে গিয়েছিলেন তিনি। সেটির মাশুলও দিতে হয় তাঁকে। তবে বড় মাশুলটা বোধহয় দিতে হয়েছে বাংলাদেশকে। সাকিব ফ্লপ, ফল্প বাংলাদেশও।

ব্যাটার হিসেবে অবশ্য সাকিব আল হাসানের বিশ্বকাপ এখন পর্যন্ত দুঃস্বপ্নের মতোই চলছে। ৫ ম্যাচে ১২.২০ গড়ে করেছেন মোটে ৬১ রান। যেখানে তাঁর স্ট্রাইকরেট মাত্র ৬২.৮৮!

বল হাতে সাকিব মন্দ করেননি। তবে সেটাকে দুর্দান্ত বলারও উপায় নেই। ৫ ম্যাচে ৭ উইকেট নিয়েছেন। যেখানে প্রথম ম্যাচেই নিয়েছিলেন ৩ উইকেট। কিন্তু আফগানিস্তানের বিপক্ষে ঐ ম্যাচের পর সাকিব যেমন বোলার হিসেবেও পথ হারিয়েছে, পথ হারিয়েছে বাংলাদেশও।

২০১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ জিতেছিল ৩ টা ম্যাচ। বলাই বাহুল্য, ঐ তিনটা ম্যাচই জিতিয়েছিলেন সাকিব। ৬০৬ রানের সাথে ১১ উইকেট, এমন দুর্দান্ত একটা আসর পার করার পর সাকিব থেকে গিয়েছিলেন ব্যর্থ এক শিবিরেই। ২০১৯ বিশ্বকাপের পর ৪ বছর বাদে আরেকটা বিশ্বকাপে যখন বাংলাদেশ খেলছে, তখন পাল্টায়নি কিছুই। দল হিসেবে বাংলাদেশ আটকে থেকেছে শুধু দ্বিপক্ষীয় সিরিজের সাফল্যেই।

এবারের বিশ্বকাপ মিশনে সাকিব ব্যর্থ। কিন্তু ব্যর্থ সাকিবের জায়গায় আরেকজন কি সাফল্যের পথে হাটছেন? কিংবা বাংলাদেশকে একা টেনে নিয়ে যাচ্ছেন? দুটির উত্তরই-না। দুই যুগের বাংলাদেশের পুরো দলটা যেন এখনও সাকিব কেন্দ্রিক। সাকিব ফ্লপ তো বাংলাদেশও ফ্লপ।

আগের বিশ্বকাপে যেমন পুরো দলের ব্যর্থতার একটা অংশ হতে হয়েছিল ক্যারিয়ারের সেরা বিশ্বকাপ খেলা সাকিবকে। এবার তাঁর ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে বিশ্বকাপের সাদৃশ্যতা লেপ্টে নিতে হচ্ছে পুরো দলকে। আর এ দুইয়ের মিশেলে বৈশ্বিক আসরে দল হিসেবে বাংলাদেশের ব্যর্থতার যাত্রা চলছেই।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link