বিপদে আমি না যেন করি ভয়

৩৪ বলে ৬৮! একের পর এক মারকাটারি শটে ছয়টা ছক্কা আর চারটা চার দিয়ে শেষ হয় জাকেরের ইনিংস। এমন বিধ্বংসী ইনিংস বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রেক্ষাপটে দেখা যায় না বললেই চলে। তবে জাকের আলী তা দেখিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা সিরিজের প্রথম ম্যাচে। নিজের পরিচয়টা জানান দিলেন দানবীয় এক ইনিংস খেলে।

সিলেটের সন্তান ২৬ বছর বয়সী জাকের উইকেট কিপার-ব্যাটার জাতীয় লিগে খেলেন সিলেটের হয়ে। সিলেট আর্ন্তজাতিক স্টেডিয়ামেই প্রথম বিভাগ ক্রিকেটে অভিষেক হয় তার। জাতীয় লীগ কিংবা বিপিএলে, দারুণ কিছু ইনিংস রয়েছে সিলেটের মাটিতে।

গত বছর অক্টোবরেই কাগজে কলমে জাতীয় দলে অভিষেক হয় তার। মূল দলের হয়ে অভিষেকটা হলো নিজ মাটি সিলেটেই। লংকানদের সাথে পাহাড় সমান রান তাড়া করতে গিয়ে যখন দলের নড়বড়ে অবস্থা, তখনই জয়ের দূত হিসেবে তার আগমন। দল না জিতলেও বীরত্ব দেখিয়ে সবার নজর কাড়েন জাকের।

শ্রীলংকা সিরিজের জন্য বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দলে ছিলেন না জাকের। কোচ সালাউদ্দীনের বিস্ফোরক মন্তব্যের পর টনক নড়ে নির্বাচকদের। আলিস আল ইসলামের চোট জাকেরকে এনে দেয় সুবর্ণ সুযোগ। তবে দলে ঢোকার মূল ভূমিকা হিসেবে কাজ করে সদ্য সমাপ্ত বিপিএলে তার ফিনিশিং। ‘ক্রাইসিস ম্যান’ হিসেবে তিনি এখন বেশি পরিচিত।

২০১৬ সালে অনুর্ধ্ব -১৯ বিশ্বকাপে খেলা জাকের আলী আর বর্তমান জাকের আলীর মধ্যে রয়েছে বিস্তর ফারাক। সবচেয়ে বেশী লক্ষণীয় তার ব্যাটিং ধরণ। ঠান্ডা মাথায় অনায়াসে খেলতে পারেন বিধ্বংসী সব ইনিংস। তেমনই একটি উদাহরণ জাতীয় দলের জার্সিতে সৃষ্টি করলেন ডানহাতি এই ব্যাটার।

সাধারণ দর্শকদের মন জয় করেছেন জাকের তার খেলা ২০০ স্ট্রাইকরেটের ইনিংস দিয়ে। এমনকি বড় বোনকেও সুযোগ করে দিয়েছেন গর্ব করবার। জাকেরের বড় বোন স্থানীয় সাংবাদিক শাকিলা ববি। তিনি তার স্বামী ও সন্তানকে নিয়ে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা সিরিজের প্রথম ম্যাচের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

পেশাদারিত্বের জায়গা থেকে ভাইকে প্রশ্নও করেন, ‘আপনি সিলেটের ছেলে। ঘরের মাঠে পারর্ফম করলেন, মানুষ আপনার পক্ষে ছিল। কতটা উপভোগ করেছেন?’ প্রতি উত্তরে জাকের বলেন, ‘আমি সব সময় সিলেটের মাঠে খেলতে পছন্দ করি। আমার প্রথম শ্রেণির অভিষেকও এখানে। আমি আগেও বলেছি এই মাঠের কন্ডিশন সর্ম্পকে আমার ধারণা আছে। উইকেট আলহামদুলল্লিাহ খুবই ভালো ছিল। গুড টু ব্যাট অন।’

মনে রাখার মত একটা দিনই পার করেছেন জাকের। কেননা নিজের অলিখিত অভিষেকের ম্যাচে দলের জয়ের সম্ভাবনা তিনিই যে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। ১০ ওভারে বাংলাদশের সংগ্রহ ছিল ৪ উইকেটে ৭৮ রান। জয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০৭। সেখান থেকে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবং জাকের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প লিখতে শুরু করেন।

যদিও রিয়াদ ৫৪ করে ফিরে যান, তবুও শেখ মাহেদিকে নিয়ে ৬৫ রানের আরেকটি জুটিতে ম্যাচ বাংলাদেশের আয়ত্ত্বে নিয়ে এসছেলিনে তিনি। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদশের হয়ে এক ইনিংসে র্সবোচ্চ ৬ ছক্কার রেকর্ডের মালিকও বনে গেছেন জাকের।

শেষ ওভারের স্নায়ুবিক উত্তেজনায় পরিণত হয় ম্যাচটি। তবে দুভার্গ্যজনকভাবেই ম্যাচটি হেরে যেতে হয়েছে বাংলাদেশকে। জাকেরের আপ্রাণ চেষ্টাতেও ফলাফল আসেনি টাইগারদের পক্ষে। তাইতো নিজের খেলার দারুণ ইনিংসের দিনেও অতৃপ্তি ঝড়েছে জাকেরের কণ্ঠে।

তিনি বলেন, ‘যদি ম্যাচটা জিততে পারতাম, ১০-১২ রান করেও যদি ম্যাচ জিততে পারতাম আমার কাছে বেশি খুশি লাগত। ভালো খেলেছি, আলহামদুলল্লিাহ। ম্যাচ জিতলে আরও খুশি হতাম।’

দলের প্রয়োজনে নিজের পুরোটা উজাড় করে দিয়েছেন জাকের। তবুও আত্মতুষ্টি যেন ছুঁয়ে যেতে পারেনি।মাহমুদুল্লাহর অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশের সাত নম্বর জায়গাটা বেশ নড়বড়ে। জাকের যেন জাগালেন আশা, জাকের দিলেন ভরসা। তবে কি দলের সাত নম্বর ব্যাটারের সমাধান খুঁজে পেল বাংলাদেশ? এই প্রশ্নের উত্তর সময়ের হাতেই তোলা থাক। জাকেরের যে এখনও অনেকটা পথ হাঁটা বাকি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link