স্যাম কন্সটাস এবং ক্রীড়া মনস্তত্ব

একজন এলিট অপজিশন কখনোই ভয়ে পিছিয়ে যাবে না, তারা ভয় ভাঙানোর জন্য শব্দ করবে, লাফাবে, গান করবে। যেমন বাঘকে দেখলে মানুষ করে। এই খেলার ছোট ছোট বিষয় গুলো আমরা না বুঝলে সেই আমরা-ওরা তেই আটকে থাকতে হবে। বাকি আনন্দটা আর নেওয়া হবেনা।

আমরা একমুখী ক্রীড়া আলোচনা কাগজে দেখতে দেখতে এতটাই অভ্যস্ত হয়ে গেছি যে আমাদের যেকোনো বিষয়ে প্রতিক্রিয়া সব সময় রক্ষণাত্মক হয়। স্যাম কন্সটাসকে প্রতিক্রিয়াটা ও সেটার ই ফল।

যখন পার্থ টেস্ট শেষ হলো, তখন অজি ড্রেসিং রুম এ বুমরাহ-তঙ্ক চলছে। যার সামনেই বুম ধরা হচ্ছে, তার মুখেই বুমরাহ’র নামে সমীহ। কোনো প্লেয়ার, ব্যাটার হোক বা বোলার, তার সম্পর্কে ভয় মনে ঢুকে গেলে যে কোনো ক্রিকেটার বল বা পরিস্থিতি কে ছেড়ে সেই নাম কে খেলতে শুরু করে। এরকম অবস্থাতে ভুল হওয়া খুব স্বাভাবিক হয়ে যায়। কাজেই অস্ট্রেলিয়ান থিঙ্ক ট্যাঙ্ক একটা জিনিসই ভাবছিল, কিভাবে এই বুমরাহতঙ্ক দূর করা যায়।

একটা টিমে প্রেসার এ কেমন রিয়াক্ট করবে, তার অধিকাংশ নির্ভর করে টিমে কেমন ক্যারেক্টার আছে। মার্নাস লাবুশেন বা স্টিভ স্মিথ যেমন ফার্স্ট বেঞ্চের ছাত্র। তাঁরা দেখবে, ট্রিগার মুভমেন্ট কেমন হওয়া উচিত, হাতের পজিশন কেমন হবে, কোন লেন্থ খেলবো, কোনটা ছাড়বো ইত্যাদি।

ট্রাভিস হেড অকুতোভয়। ও জানে কিভাবে মুহূর্তে বাঁচতে হয়। আগের বল মিস হলো বা আউট হোলো, সেটা ওখানেই ইতিহাস হয়ে গেলো। কিন্তু সবথেকে বড় সমস্যা খাওয়াজা বা কেরির মতো প্লেয়ার দের যারা সিচুয়েশন এর ওপর নির্ভরশীল ভালো পারফরম্যান্স করার জন্য। যদি একটা প্লেয়ারের ভয় ড্রেসিং রুম এ মনস্তাত্বিক চাপ তৈরী করতে থাকে, এঁরা কখনোই সেটা ভাঙতে পারবেনা।

হিয়ার কামস কন্সটাস। এমন একজন প্লেয়ার যে কোনো অভিজ্ঞতা নিয়ে আসছেনা। পরিস্থিতি অনুযায়ী রিয়াক্ট করছে, এবং তাঁকে শুধু এটাই দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হচ্ছে যে বুমরার ওপর চাপ তৈরী করো। তুমি তাঁকে লাফিয়ে মারো, স্কুপ মারো, এমন ভাবে মারার চেষ্টা করো যাতে সে পাল্টা প্রেসার অনুভূতি করে। ডাক করলেও সমস্যা নেই কারণ আমাদের রান করার প্লেয়ার আছে, পাল্টা চাপ তৈরী করার প্লেয়ার নেই।

সবাই কিন্তু এই ক্যাজরা করার কাজ টা করতে পারেনা। অনেকের মনো:সংযোগ নষ্ট হয়। কেউ কেউ সুইচড অন হয়। যেমন বিরাট কোহলি । সুইচড অন হওয়া মানে এই উত্তেজনার জন্য অ্যাড্রেনালিন ক্ষরণ হয়ে ভাসোডায়ালেশন হওয়া, মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বাড়া, নিউরোট্রান্সমিটার ক্ষরণ, বল আরো ভালো দেখা, পা আরো ভালো চলে, মাসেল মেমোরি আরো ভালো কাজ করা। কোহলি র ক্ষেত্রে ব্যাপারটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ন্যাচারাল লাগে।

সিরাজের ক্ষেত্রে, সিরাজ ঝামেলা পাকাতে গিয়ে সেই ঝামেলা মন এ লাগিয়ে ফেলে তারপর অনিয়ন্ত্রিত বোলিং করে। তাই এটা নির্ভর করে সেই মানুষ টা র চরিত্রের ওপর। প্যাট কামিন্সের ইন্টারভিউ দেখুন। কন্সটাসের এনার্জি নিয়ে কথা বলছে।

যত বয়সই হোক। ওর এই ছটফটানি টা, ভারতীয় দল কে বিরক্ত করা, খাওয়াজা-কেরি দের মতো অন্তরমুখী দের ওপর থেকে চাপ কমাচ্ছে। এই যে যারা আমি একটা কাজ করলে সেটা র কনসিকোয়েন্স হিসেবে কি হবে সেটা ভাবেনা, তারা বড়ো ম্যাচের প্রেসার এ চোক করেনা। এরা বিপক্ষের সেরা বোলারকে ফাইনালে ডোমিনেট করতে জানে। যেমন ডেভিড ওয়ার্নার, শেন ওয়াটসন, ট্র্যাভিস হেড, রিকি পন্টিং।

ক্রীড়া মনস্তত্ব নিয়ে একটা গল্প বলে শেষ করবো। ২০১৮-১৯ এর সিরিজ। সিডনি টেস্ট এর আগে বুমরাহ বেঁকে বসেন। সিরিজ জিতে গেছি, বৃষ্টি হবে, সিডনি তে পছন্দ পাটা পিচ, আমি এই ম্যাচে জোর লাগাবো না।

তখন ভরত অরুন তাঁকে বলেন, তুমি এটা করতেই পারো। কিন্তু আজ যখন অস্ট্রেলিয়ান রা তোমার ১২৫ এর বল টা খেলবে, ওরা মনে রাখবে যে আমি বুমরা কে ডোমিনেট করেছিলাম, এই একই ফিলিংটা ক্যারি করে পরের বার তুমি যখন এখানে আসবে, ওরা তোমার বেস্ট এ তোমাকে ডোমিনেট করবে। তুমি কি সেটা চাও?

বুমরাহ সেদিন নিজের সেরা টা দিয়েই বোলিং করেছিলেন।

একটা টিমের ভক্ত হিসেবে এটা মনে হতেই পারে বিপক্ষে আমাকে সমীহ করুক, সাহস কি করে হয়। কিন্তু একজন এলিট অপজিশন কখনোই ভয়ে পিছিয়ে যাবে না, তারা ভয় ভাঙানোর জন্য শব্দ করবে, লাফাবে, গান করবে। যেমন বাঘকে দেখলে মানুষ করে। এই খেলার ছোট ছোট বিষয় গুলো আমরা না বুঝলে সেই আমরা-ওরা তেই আটকে থাকতে হবে। বাকি আনন্দটা আর নেওয়া হবেনা।

Share via
Copy link