মহানায়করাও কাঁদে

একটা ষাট বছর বয়সী লোক কাঁদছে। অথচ আমরা তো জানি ছেলেরা কাঁদে না। তবে কেন জীবনের শেষভাগে চলে আসা একজন অমন করে কাঁদবেন? আর সেই কান্নার ভিডিও মুহূর্তে ছড়িয়ে যাবে পুরো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, সবাই তাঁকে নিয়ে আলোচনা করবে, সবাই তাঁর প্রশংসা করবে, কেন করবে? কে সে লোক?

একটা ষাট বছর বয়সী লোক কাঁদছে। অথচ আমরা তো জানি ছেলেরা কাঁদে না। তবে কেন জীবনের শেষভাগে চলে আসা একজন অমন করে কাঁদবেন? আর সেই কান্নার ভিডিও মুহূর্তে ছড়িয়ে যাবে পুরো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, সবাই তাঁকে নিয়ে আলোচনা করবে, সবাই তাঁর প্রশংসা করবে, কেন করবে? কে সে লোক?

তিনি আর কেউ নন ‘দ্য স্পেশাল ওয়ান’ হোসে মরিনহো। নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার বোধকরি আর বিশেষ কোন প্রয়োজন নেই। আমি, আপনি, আমরা সবাই তো তাঁকে কম বেশি চিনি। আমরা তো রাত জেগে ইউরোপিয়ান ফুটবলে মত্ত থাকা জনগোষ্ঠী। আমরা হোসে মরিনহোকে ভুলে যাই কি করে?

তবুও তিনি কেন কাঁদলেন? সে প্রশ্নের উত্তরও বোধকরি অজানা না। তাঁর দল রোমা উঠেছে উয়েফা কনফারেন্স কাপের ফাইনালে। আবার প্রশ্ন জাগতে পারে এতে কাঁদার কি এমন আছে? আছে মশাই আছে। থাকবে না কেন বলুন। সবাই তো আর নিজেকে প্রমাণ করতে পারে না। সবাই তো আর হোসে মরিনহো না।

বর্ণাঢ্য এক কোচিং ক্যারিয়ার। সেই নব্বই দশকে শুরু। এখন অবধি তিনি ইউরোপিয়ান ফুটবলের অন্যতম সেরা কোচদের একজন সেটা তো আর এমনি এমনি হয়নি। কতশত শিরোপা তাঁর ঝুলিতে। কতশত অর্জন তাঁর। আর সে কোচের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি সহ্য করবেন কি করে বলুন। গত দুই মৌসুমের ইংল্যান্ডে কি এক বাজে সময় কাটিয়েছেন তিনি।

টটেনহাম হটস্পার্সের হয়ে তিনি ছিলেন শিরোপাশূন্য। অথচ তিনি কি না ট্রেবেল জয়ী কোচ। যিনি ইন্টার মিলানকে জিতিয়েছিলেন এক মৌসুমে তিন তিনটি ট্রফি। সে কি না ছুঁয়ে দেখেননি কোন শিরোপা। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের খারাপ সময়ে তিনি তাঁদের নিয়ে জিতেছেন উয়েফা ইউরোপা কাপ। আর তিনি স্পার্সদের হয়ে উঠতে পারেননি কোন ফাইনালে। এমনকি লিগেও তেমন জম্পেশ লড়াইয়ের ছিটেফোঁটাও ছিল না।

সে মরিনহো আবার তাঁর নতুন দলকে নিয়ে পৌঁছে গেছেন আরও একটি শিরোপার দ্বারপ্রান্তে। তবে তিনি এবার নিজের জন্যে না যতটা কেঁদেছেন তাঁর থেকেও বেশি কেঁদেছেন রোমা ক্লাবটির জন্যে, সে শহরে প্রতিটি ফুটবল পাগল মানুষের জন্যে। তিনিও যে একজন বদ্ধ উন্মাদ, তিনিও তো পাগলের মত করে ভালবাসেন ফুটবলকে। তিনি তো ঠিক নিজের সন্তান ভাবেন ফুটবলকে।

ক্লাবটির ইতিহাসে কখনোই তাঁরা যেতেনি ইউরোপের কোন শিরোপা। বেশ কয়েকবার তাঁরা উঠেছিল ফাইনালে। তবে শিরোপা যেন চির অধরা। সে শিরোপা জয়ের আরেকটু কাছে নিয়ে গেলেন মরিনহো। ক্লাবটার সাথে তিনি এতটাই সম্পৃক্ত যে তিনি গোটা মাঠ ভরা দর্শকদের সামনে হয়েছেন অশ্রুসিক্ত। তাইতো তিনি ফুটবল ভক্তদের মনের মণিকোঠায় জায়গা করে নেন বারংবার।

তিনি রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়েছেন বহুকাল হয়। তবুও এখনও মাদ্রিদ সমর্থকরা তাঁকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে। মাদ্রিদের এই সাফল্যগাঁথা দলের ভীতটা তো তিনিই গড়ে দিয়ে গিয়েছিলেন। তাছাড়া ইন্টার সমর্থকরা কি করে তাঁকে ভুলে যাবে এত সহজে? তাঁকে ভুলে থাকা তো যায় না।

হয়ত ফুটবলীয় ট্যাকটিসের দিক থেকে তিনি খুব বেশি পরিপূর্ণ নন। যদিও তাঁর অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তিনি অনেক সময় নেতিবাচক ফুটবল খেলান। এসব কিছুই হয়ত সত্য। তবে একথাও সত্য যে তিনি ফুটবলকে ভালবাসেন। নিজের একটা অংশ মনে করেন, তিনি যেখানেই যান সেখানটায় তিনি সবাইকে বড্ড আপন করে নেন। তাকেও হয়ত আপন করে নিতে কারও কোন সমস্যা হয়না।

তাই তো তিনি আবেগতারিত হয়ে কান্না করতেও দ্বিধাবোধ করেন না। ফুটবলটা তো আসলে আবেগের। এই আবেগটাই তো আমাদের আবার নতুন করে ভালবাসতে শেখায়। আমরা তাই তো ফুটবলকে ভালবাসি। আমরা ফুটবলেই বাঁচি।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...