জন্ম ইংল্যান্ডের লিডসে। বেড়ে ওঠা সেখানেই। ক্রিকেটের আনুষ্ঠানিক পাঠ ইয়র্কশায়ারের একাডেমিতে। ছেলেবেলায় ইয়র্কশায়ারের বয়সভিত্তিক নানা দলে চার মৌসুম খেলার অভিজ্ঞতা। তার পরও জশ ইংলিস আর ইংলিশ নন। তিনি এখন অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ দলে।
তার বাবা-মা প্রায়ই ঘুরতে পেতেন অস্ট্রেলিয়ায়। দেশটাকে তাঁরা এতটা ভালোবেসে ফেলেন যে, পরে সেখানেই থিতু হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ইংলিসের বয়স তখন ১৪। ইংলিশ ইংলিস ক্রমে হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়ান।
কিন্তু ইংল্যান্ডের সঙ্গে এই কিপার-ব্যাটসম্যানের ভাগ্যটা এমনভাবে বাঁধা, অস্ট্রেলিয়া দলে সুযোগ পেলেন তিনি ইংল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেটে ঝড় তোলার পরই।
চলতি টি-টোয়েন্টি ব্লাস্টে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি রান ইংলিসের। ১৪ ইনিংসে ৫৩১ রান। সেঞ্চুরি ২টি। গড় ৪৮.২৭, স্ট্রাইক রেট ১৭৫.৮২। দল ঘোষণার আগের দিন দ্য হানড্রেড-এ খেলেন ৪৫ বলে ৭২ রানের ইনিংস।
বিশ্বকাপ দিয়ে প্রথমবার দলে সুযোগ পেলেও তার ডাক পাওয়া চমক নয় মোটেও। বেশ কিছুদিন থেকেই অস্ট্রেলিয়া দলের দুয়ারে কড়া নাড়ছিলেন তিনি। গত মৌসুমে অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া মৌসুমে সব সংস্করণেই তাঁর পারফরম্যান্স ছিল দুর্দান্ত।
বিগ ব্যাশে ১৪০ স্ট্রাইক রেটে ৪১৩ রান। ওয়ানডে টুর্নামেন্ট মার্শ কাপে ১২৩ স্ট্রাইক রেটে ২০৯ রান। শেফিল্ড শিল্ডে ৩ সেঞ্চুরিতে ৫৮৫ রান। গড় ৭৩.১২। যথারীতি এখানেও দারুণ আগ্রাসী, স্ট্রাইক রেট ৮৫.০২।
বিগ ব্যাশে বা ব্লাস্ট-হানড্রেডে যারা ইংলিসের ব্যাটিং দেখেছেন, তারা জানেন যে দারুণ স্ট্রোকমেকার তিনি। মাঠের চারপাশে শট খেলেন। হাতে জোর আছে বেশ। স্কুপ, রিভার্স স্কুপ, রিভার্স ফ্লিকের মতো শটও খেলেন নিয়মিত।
সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের পাশাপাশি তাকে বিশ্বকাপ দলে নেওয়ার আরও দুটি কারণ আছে। তার ব্যাটিং অর্ডার একটা কারণ। টি-টোয়েন্টিতে মূলত টপ অর্ডারে ব্যাট করলেও মিডল অর্ডারের যে কোন জায়গায়ও ব্যাট করতে পারেন, এমনকি ফিনিশার হিসেবেও খেলতে পারে। প্রধান নির্বাচক জর্জ বেইলি, তাঁকে দলে নিয়ে ফিনিশিং সামর্থ্যের কথা বলেছেন আলাদা করে।
দ্বিতীয়ত, তাঁর স্পিন খেলার দক্ষতা। স্পিনটা খুব ভালো খেলেন বলে রিকি পন্টিং আরও মাস তিনেক আগেই বলেছিলেন, বিশ্বকাপের দলে তিনি ইংলিসকে চান।
অবশ্য অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডে স্পিন খেলার ব্যাপার এরকম, আরব আমিরাতে স্পিন খেলার দক্ষতা লাগবে আরেকরম, উপমহাদেশে আরেকরকম। তবে স্পিন সামলানোর সহজাত কিছু ব্যাপার তার আছে।
ও হ্যাঁ, তার কিপিং দুর্দান্ত। অস্ট্রেলিয়ান সংবাদমাধ্যমে তাঁর কিপিংয়ে স্তুতি হয়েছে অনেক। ব্র্যাড হাডিন, টিম পেইনরাও তার কিপিংয়ের প্রশংসা করেছেন। বিশ্বকাপে অবশ্য কিপিং শুরুতে ম্যাথু ওয়েডই করবেন বলে মনে হচ্ছে।
ফিঞ্চ, ওয়ার্নার, স্মিথ, ম্যাক্সি, স্টয়নিস, ওয়েড, মার্শ, অ্যাগার, স্টার্ক, জ্যাম্পা, কামিন্স … এটাকে যদি সম্ভাব্য একাদশ ধরি অস্ট্রেলিয়ার, তাহলে ইংলিসের জায়গা হয় না। তবে ওয়েডের আপাতত যা অবস্থা, তাতে ইংলিসকে বাজিয়ে দেখাই যায়!
বাংলাদেশে হেরে যাওয়া দলের কেবল ৭ জন আছেন অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ দলে। সেটা অনুমিতই ছিল। একটু অবাক হয়েছি জাই রিচার্ডসনকে না দেখে। অবশ্য কেন আর জাই রিচার্ডসনের মধ্যে কেবল একজনকে নিতে হতো, কেন রিচার্ডসন হয়তো অভিজ্ঞতার ভোট পেয়ে গেছেন।
কাগজে-কলমে দারুণ দল। ফিঞ্চ-কামিন্স ছাড়া অন্য বেশ কজন আইপিএলে খেলবেন বলে প্রস্তুতিও খারাপ হবে না। তবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া একবার মোটে ফাইনাল খেলেছে, আগের দুই আসরে সেমিতেও খেলতে পারেনি। এবার কেমন করবে, কে জানে!
তাদের জন পজিটিভ ব্যাপার: স্পিনাররা দুর্দান্ত ফর্মে আছেন। তাদের জন্য ভাবনার ব্যাপার: ফিঞ্চ-ওয়ার্নার-স্মিথরা পার্থক্য গড়ার মতো ইনিংস কতটা খেলতে পারবেন, ম্যাক্সি কতটা ধারাবাহিক হতে পারবেন, স্টয়নিস আদৌ সেরা চেহারায় থাকবেন কিনা।
- অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ দল
অ্যারন ফিঞ্চ (অধিনায়ক), অ্যাশটন অ্যাগার, প্যাট কামিন্স (সহ-অধিনায়ক), জশ হেইজেলউড, জশ ইংলিস, মিচেল মার্শ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, কেন রিচার্ডসন, স্টিভেন স্মিথ, মিচেল স্টার্ক, মার্কাস স্টয়নিস, মিচেল সোয়েপসন, ম্যাথু ওয়েড, ডেভিড ওয়ার্নার, অ্যাডাম জ্যাম্পা।
সফরসঙ্গী অতিরিক্ত: ড্যান ক্রিস্টিয়ান, ন্যাথান এলিস, ড্যানিয়েল স্যামস।
– ফেসবুক থেকে