জিম্বাবুয়ে থেকে ‘কাউন্টির কিংবদন্তি’

গ্রায়েম অ্যাশলি হিক; ইংলিশ ব্যাটসম্যান গ্রায়েম হিক হিসেবে সবাই চেনেন। ইংল্যান্ডের হয়ে খেলেছেন ৬৫ টেস্ট এবং ১২০ ওয়ানডে।

হিক মূলত ছিলেন জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটার। কিন্তু ১৯৮৪ সালে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট ইউনিয়নের মাধ্যমে ক্রিকেটের উপর বৃত্তি নিয়ে আসেন ইংল্যান্ডে। ইংল্যান্ডে এসে যোগ দেন কাউন্টি দল উস্টারশায়ারে। এখান থেকেই শুরু হয় গ্রায়েম হিকের যাত্রা। ২০০৮ সালে ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর আগ পর্যন্ত খেলেছেন কাউন্টি ক্রিকেটে। টেস্ট ক্রিকেটের আক্ষেপ হলেও – এটা সত্যি যে স্বীকৃত ক্রিকেটে তাঁর চেয়ে বেশি রান করতে পেরেছেন মাত্র একজন।

গ্রায়েম হিক ছিলেন মূলত একজন ব্যাটসম্যান। তিনি একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন দশকে করেছেন ত্রি-শতক। ব্যাটসম্যান পরিচয়ের বাইরেও ছিলেন একজন পার্ট টাইম অফ স্পিনার। কাউন্টি ক্রিকেট এবং ঘরোয়া ক্রিকেটে দুর্দান্ত পারফর্ম করলেও কখনো নিজের পারফর্মেন্স জাতীয় দলে নিয়ে আসতে পারেননি তিনি।

শচীন টেন্ডুলকার এবং গ্রাহাম গুচের পর একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে বিশ হাজার রান করেন তিনি। এছাড়াও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও বেশ সমৃদ্ধ পরিসংখ্যান। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে করেছেন চল্লিশ হাজারের উপর রান, যার বেশিরভাগ রান করেছেন তিন নাম্বার পজিশনে ব্যাটিং করে। এছাড়াও ২৫তম ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি করেন গ্রায়েম হিক।

এত সমৃদ্ধ ইতিহাসের পরও নিজের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারকে বেশিদূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি তিনি। তার টেস্ট এবং প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যায়, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কতটা পিছিয়ে ছিলেন গ্রায়েম হিক।

গ্রায়েম হিকের জন্ম ২৩ মে, ১৯৬৬ সালে জিম্বাবুয়ের হারারেতে। এখানেই ক্রিকেটে হাতে খড়ি গ্রায়েম হিকের। প্রথমে হকি খেলার দিকে নজর ছিল গ্রায়েম হিকের, কিন্তু সেখান থেকে সরে ক্রিকেটে মনযোগী হন গ্রায়েম হিক। ক্রিকেটের শুরুর দিকে ছিলেন একজন বোলার।

কিন্তু, স্কুল ক্রিকেটে নিয়মিত বড় রান করতে শুরু করার পর থেকে মনযোগ দেন ব্যাটিংয়ে। স্কুল ক্রিকেটে তাঁর ব্যাটিং গড় ছিল ১৮৫। এরপর ১৯৮০ সালে মেনিঞ্জাইটিস রোগে আক্রান্ত হয়ে ক্রিকেট থেকে কিছুটা দূরে ছিলেন তিনি। এরপর ফিরে স্কুল দলে জুনিয়র দলের অধিনায়ক হন গ্রায়েম হিক। একই সাথে সুযোগ পান স্কুলের সিনিয়র দলে।

মাত্র ১৬ বছর বয়সে ১৯৮৩-৮৪ সালে অস্ট্রেলিয়া ‘এ’ দলের বিপক্ষে জিম্বাবুয়ে মাইনর দলের হয়ে খেলেছিলেন গ্রায়েম হিক। কিন্তু এই সিরিজে বলার মত কোনো সাফল্য ছিল না গ্রায়েম হিকের। দ্বিতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি ক্রিকেটার ডিন জোনসকে বল হাতে আউট করেন তিনি। এরপর একই বছর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট এবং লিস্ট ক্রিকেটে দুর্দান্ত পারফর্ম করেন তিনি।

১৯৮৪ সালে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট ইউনিয়ন থেকে ক্রিকেটে বৃত্তি নিয়ে পাড়ি জমান ইংল্যান্ডে। এখানে এসেই নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করেন গ্রায়েম হিক। এরপর আর জিম্বাবুয়ে দলের হয়ে খেলার জন্য জিম্বাবুয়েতে ফিরে যাননি তিনি। ১৯৮৪ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত কাউন্টি ক্রিকেটে দুর্দান্ত পারফর্ম করেন গ্রায়েম হিক।

এরপরেই নজরে আসেন ইংলিশ নির্বাচকদের। একই সময়ে ইংল্যান্ড দলে সুযোগ পান মার্ক রামপ্রকাশ এবং তিনি। আর মজার ব্যাপার হল, তিনি এবং মার্ক রামপ্রকাশ দু’জনই কাউন্টিতে প্রচুর রান করার পরও জাতীয় দলে যাওয়া আসার মধ্যেই ছিলেন।

১৯৯১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে ওয়ানডেতে অভিষেক হয় গ্রায়েম হিকের। অভিষেক ম্যাচে নিজকে চেনাতে পারেননি তিনি। শুধু অভিষেক ম্যাচ নয়, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার জুড়েই নিজেকে নিয়ে যুদ্ধ করেছেন গ্রায়েম হিক। এক মাস পর টেস্টে অভিষেক হয়। কিন্তু এখানেও ব্যর্থতার পরিচয় দেন তিনি। অভিষেক টেস্টে দুই ইনিংসেই ছয় রান করে আউট হন গ্রায়েম হিক।

অথচ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হবার আগেই কতই আশা ভরসা ছিল তাঁকে নিয়ে। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেকে সেইভাবে কখনোই মেলে ধরতে পারেননি তিনি। শেষ পর্যন্ত ১০ বছরে মাত্র ৬৫ টেস্ট খেলে ২০০০-০১ মৌসুমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানান তিনি।

৬৫ টেস্ট এবং ১২০ ওয়ানডে গ্রায়েম হিক রান করেছেন যথাক্রমে ৩৩৮৩ এবং ৩৮৪৬ রান। টেস্টে তাঁর ব্যাটিং গড় ছিল ৩১.৩২। অপরদিকে, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তাঁর গড় ছিল ৫০-এর উপরে। তার লিস্ট এ ক্যারিয়ার এবং ওয়ানডে ক্যারিয়ারের পার্থক্য করলেও সেই প্রতিফলনও দেখা যায়।

ঘরোয়া ক্রিকেটে সফল এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যর্থ এমন ক্রিকেটারের সংখ্যা নেহাতই কম নয়। কিন্তু গ্রায়েম হিকের মত প্রতিভা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেকে মেলে ধরতে না পারলে সেটা আসলেই বিস্ময়কর ঠেকে। কাউন্টি ক্রিকেটের প্রতিদ্বন্দ্বীতা এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রায় একই।

তারপরও ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের কাছে বিস্ময়কর যে, গ্রায়েম হিক কেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রস্ফুটিত হতে পারলেন না। সেটা হয়তো কখনোই জানা যাবে না। কিন্তু ক্রিকেট বিশ্ব হয়তো এই রকম কিংবদন্তীকে আর কখনোই হারাতে চাইবে না।

লেখক পরিচিতি

খেলাকে ভালোবেসে কি-বোর্ডেই ঝড় তুলি!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link