ছোট বেলায় ব্যাটিং পেতেন না।
মানে, একটু বড়দের সাথে খেলতেন তো। ফিল্ডিং খাটতে হতো, বোলিংও করতে পারতেন; কিন্তু প্রায়শ ব্যাটিংটা পেতেন না। সেই সময় দাঁতে দাঁত চেপে মনে মনে বলতেন, ‘একদিন ব্যাটিং করেই সবাইকে দেখিয়ে দেবো।’
তাই দিচ্ছেন। সেই যুব ক্রিকেট থেকে শুরু করে এই ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ; সেই ছেলেটির ব্যাটে এখন রানের বন্যা। একটু একটু করে চাঁদপুরের সেই ছেলেটি হয়ে উঠেছেন ক্রিকেটের জয়। হ্যাঁ, মাহমুদুল হাসান জয়।
চাঁদপুর থেকে ঢাকার ক্রিকেটে পৌছানো ক্রিকেটারের সংখ্যা খুব বেশি না।
তারপরও চাঁদপুরে থেকেই ক্রিকেটের নেশায় পড়ে গিয়েছিলেন জয়। সারাদিন বাসার বকাঝকা উপেক্ষা করে ক্রিকেট খেলে বেড়াতেন এ পাড়ায়, ও পাড়ায়। শেষমেশ এক আঙ্কেলের পরামর্শে জয়ের বাবা তাকে বিকেএসপিতে দিয়ে দিলেন-ক্রিকেটই যখন খেলবে ভালোভাবেই খেলুক।
কাজটা যে অসাধারণ হয়েছিলো, সে প্রমাণ জয় দিয়েছেন। বিকেএসপি থেকেই একের পর এক বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে খেলতে শুরু করেন। অনূর্ধ্ব-১৯ দলে থাকতেই নামটা ছড়িয়ে পড়ে তার। যুব স্তরে তৌহিদ হৃদয়ের পরই বাংলাদেশের সবচেয়ে নিয়মিত রান স্কোরার ছিলেন জয়। বিশ্বকাপে সেই ছায়া থেকেও বের হয়ে আসেন।
বাংলাদেশের যুব বিশ্বকাপ জয়ের পথে দলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন জয়। এর মধ্যে মহাগুরুত্বপূর্ন এক সেঞ্চুরিও ছিলো। বিশ্বকাপ জিতে ফেরার পর যেখানেই খেলতে নেমেছেন, রানের ফুলঝুরি ছোটাচ্ছেন। আয়ারল্যান্ড উলভসের বিপক্ষে ৫ ম্যাচে ২৮৫ রান নিয়ে দু দলের মধ্যে সর্বোচ্চ স্কোরার; ২টি ফিফটি ও একটি সেঞ্চুরি। এর আগে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপেও রান পেলেন।
এবার এলো ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টি। প্রথম পর্ব শেষের আগের দিনও সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন। মিজানুর রহমান শেষ দিনে সেঞ্চুরি করে জয়কে টপকে গেছেন। তারপরও ৫২.৪২ গড়ে ১১ ম্যাচে ৩৬৭ রান নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছেন জয়। দল ওল্ড ডিওএইচএস রেলিগেশন লিগ খেলবে। তাই বাকি দুই ম্যাচে মিজানুরকে টপকে যাওয়ার সুযোগ আছে তার সামনে। সেটা না পারলেও জয়ের ধারাবাহিকতা নিয়ে সন্দেহ করার কারণ নেই।
জয় এই ধারাবাহিকতাটাকেই সম্পদ বানাতে চান। তিনি বলছিলেন, ‘আমি চেষ্টা করি, প্রতি ম্যাচে যাতে রান করতে পারি। আমার লক্ষ্যই কনসিসটেন্ট হওয়া। সে জন্য সবচেয়ে জরুরী হলো আগের ম্যাচের কথা ভুলে যাওয়া। আগের ম্যাচে ভালো বা খারাপ যাই করি, সেটা মাথায় থাকলে পরের ম্যাচে রান করা কঠিন হয়। আমি ম্যাচ একটা শেষ হলেই সেটার স্কোর ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করি।’
এটুকু কথা অন্তত স্বাক্ষ্য দেয় যে, বয়সের তুলনায় বেশ পরিণত হয়ে উঠেছেন এই তরুন।
তার পরিণতি বোধ বোঝা গেলো এই প্রিমিয়ার লিগ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে। নিজের পারফরম্যান্সে এতো কিছুর পরও খুব সন্তুষ্ট না। বলছিলেন, ‘গত কয়েকটা ইনিংস বিশ রান পার করেও বড় করতে পারিনি। রান পাচ্ছি, সেট হচ্ছি; কিন্তু ক্যারি করতে পারছি না। এটা একটা চিন্তার ব্যাপার। তবে কাজ করছি এ নিয়ে। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট হলেও বড় ইনিংস খেলতে হবে। আশা করি, শেষ দুই ম্যাচে সেটা করতে পারবো।’
জয়ের সে আশা সত্যি হলে বাংলাদেশের ক্রিকেটই উপকৃত হবে।
বাংলাদেশের ক্রিকেট অবশ্য এখন এই জয়-হৃদয়দের দিকেই চেয়ে আছে।
বাংলাদেশের সিনিয়র ক্রিকেটারদের শেষটা দেখা যাচ্ছে। মাঝের প্রজন্মটা জ্বলে উঠতে পারছে না। এর মধ্যে আশার আলো জ্বালছেন জয়, হৃদয় বা শামীমরা। জয়ও জানেন তাদের নিয়ে এই স্বপ্নের কথাটা। একটা বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন, আরেকটা বড় বিশ্বকাপ তাদের কাছে চাওয়া রয়েছে।
তবে জয় এই স্বপ্ন নিয়ে ভাবতে চান না। কথায় মনে হলো, এই ভাবনাটার চাপ নিতে চান না। বেশ শক্ত হয়ে বললেন, ‘সে তো অনেক দূরের ব্যাপার। আমরা একটা যুব বিশ্বকাপ জিতেছি, ফলে আমাদের ওপর প্রত্যাশা থাকবেই। কিন্তু সেটা নিয়ে ভাবলে চলবে না। আমাদের দলের সব খেলোয়াড়কেই এখনও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। নিজেদের আরও প্রমাণ করতে হবে। আমার এখন লক্ষ্য হলো, যেখানে যে দলের বিপক্ষে খেলি, রান করতে হবে। সেটা করলে বাকীটা সময় বলে দেবে।’
ব্যাটের মত মাথাটাও বেশ পরিণত মনে হচ্ছে।