ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের পঞ্চম রাউন্ডে রান উৎসব হলেও ষষ্ঠ রাউন্ডের প্রথম তিন ম্যাচে দাপট দেখিয়েছেন বোলাররা। আর ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার দিনে বল হাতে আলো ছড়িয়েছেন সালাহউদ্দিন শাকিল। মুস্তাফিজুর রহমানের পর দ্বিতীয় বোলার হিসাবে এবারের আসরে পাঁচ উইকেট শিকার করেছেন এই পেসার।
কিন্তু ব্যাতিক্রম ছিলেন মাহমুদুল হাসান জয় ও মোহাম্মদ মিঠুন। দুই জনই ম্যাচ জয়ী ইনিংস খেলেছেন। তবে মাত্র ১২ বলে ৩৮ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেও দলকে জেতাতে পারেননি কামরুল ইসলাম রাব্বি। আর ভালো শুরু পেয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি সৌম্য সরকার, মুমিনুল হক, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। গত ম্যাচে রান পেলেও আজ ব্যাট হাতে ব্যর্থ ছিলেন তামিম ইকবাল।
ষষ্ঠ রাউন্ডের প্রথম তিন ম্যাচে জয় পেয়েছে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স, প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব ও শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব। পাঁচ জয়ে দশ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে রয়েছে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব ও আট পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাব।
মিরপুরে ওল্ড ডিওএইচএস স্পোর্টস ক্লাবকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স। তবে ১৩৭ রানের সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়েছিল না গাজী গ্রুপের। দলীয় ২৫ রানে আল ইসলামের প্রথম শিকার হয়ে ১০ বলে ২২ রান করে ফিরে যান মেহেদী হাসান।
এরপর দ্বিতীয় উইকেটে সৌম্য সরকার ও মুমিনুল হকের ৬৯ রানের জুটিতে ম্যাচ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয় গাজী গ্রুপ। কিন্তু উইকেটে থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি দুজনের কেউই। ৩৪ বলে ২৭ রান করে মুমিনুল ফিরে যাওয়ার পর ৩৫ বলে ৩৭ রান করে বিদায় নেন সৌম্য সরকার।
এরপর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ১৮ বলে ১৯ রান করে বিদায় নিলেও জয় পেতে সমস্য হয়নি গাজী গ্রুপের। ১৮ বলে ২৪ রান করে অপরাজিত থাকেন ইয়াসির আলী রাব্বি। ডিওএইচএসের পক্ষে দুটি উইকেট শিকার করেন রাকিবুল হাসান। এছাড়া একটি করে উইকেট পেয়েছেন আল ইসলাম ও হামিদুল ইসলাম।
এর আগে টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই দুই ওপেনারকে হারায় ডিওএইচএস স্পোর্টস ক্লাব। আগের ম্যাচ গুলোতে দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেওয়া আনিসুল হক ইমন ১ রান করে ও রাকিন আহমেদ ৮ রান করে ফিরে যান। এরপর এক প্রান্তে মাহমুদুল হাসান জয় নির্ভরতার সাথে ব্যাট করলেও অপর প্রান্তের ব্যাটসম্যানরা ছিলেন যাওয়া আসার মিছিলে।
টপ অর্ডারের ব্যর্থতায় মাত্র ৮২ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে ডিওএইচএস। গাজী গ্রুপের বোলাররা ডিওএইচএসের সব ব্যাটসম্যানদের চেপে ধরলেও থামাতে পারেনি মাহমুদুলকে। শেষ পর্যন্ত উইকেটে থেকে একাই লড়াই করে ৫৫ বলে ৮৫ রানের ইনিংস খেলে দলকে ১৩৬ রানের পুঁজি এনে দেন তিনি। গাজী গ্রুপের পক্ষে দুটি উইকেট শিকার করেন নাসুম আহমেদ।
দিনের আরেক ম্যাচে প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাবকে ৪ রানে হারিয়েছে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব। ১৫২ রানের বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রাইম ব্যাংকের বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ১০৪ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে প্রায় ছিটকেই গিয়েছিল প্রাইম দোলেশ্বর। তখনও জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিলে ১৫ বলে ৪৭ রান।
কিন্তু হঠাৎ ব্যাট হাতে অগ্নিমূর্তি ধারণ করেন পেসার কামরুল ইসলাম রাব্বি। ১২ বলে ৩৮ রানের এক ঝড়ো ইনিংস খেলেন তিনি। তবে শেষের সমীকরণ মেলাতে পারেননি এই পেসার। প্রাইম ব্যাংকের পক্ষে তিনটি উইকেট শিকার করেন মুস্তাফিজুর রহমান।
এর আগে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে মোহাম্মদ মিঠুনের হাফ সেঞ্চুরিতে ভর করে প্রাইম দোলেশ্বরকে ১৫২ রানের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয় প্রাইম ব্যাংক। ৫০ বলে ৫৫ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন মিঠুন। এছাড়া এনামুল হক বিজয় করেন ১৮ বলে ২৯ রান ও অলক কাপালী করেন ১৪ বলে ২৬ রান।
তবে ব্যাট হাতে ব্যর্থ ছিলেন তামিম ইকবাল। ৮ রান আসে এই ওপেনারের ব্যাট থেকে। প্রাইম দোলেশ্বরের পক্ষে দুটি উইকেট শিকার করেন কামরুল ইসলাম রাব্বি। এছাড়া একটি করে উইকেট পেয়েছেন এনামুল হক, রেজাউর রহমান, শামীম হোসেন ও তাইবুর রহমান।
বিকেএসপির চার নম্বর মাঠে দিনের অপর ম্যাচে পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাবকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব। পারটেক্সের দেওয়া মাত্র ১০৪ রান তাড়া করতে নেমে ১৬ বল হাতে রেখে ৪ উইকেট হারিয়ে জয়ের লক্ষ্যে পৌছে যায় শাইনপুকুর।
দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩২ বলে ৩০ রান করেন অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান ও ২৪ বলে ২৭ রান করে অপরাজিত থাকেন ইলিয়াস সানি। এছাড়া মোহাম্মদ আশরাফুলের ব্যাট থেকে আসে ১৭ রান ও নাসির হোসেন করেন ২২ রান। পারটেক্সের পক্ষে দুটি উইকেট শিকার করেন জয়নাল ইসলাম।
এর আগে টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই সালাউদ্দিন শাকিলের বোলিং তোপের মুখে পড়ে মাত্র ১০৪ রানে গুটিয়ে যায় পারটেক্স। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ২০ রান করেন আব্বাস মুসা। এছাড়া ১৯ রান করে করেন জহুরুল ইসলাম ও ধীমান ঘোষ। শাইনপুকুরের পক্ষে ৩.৩ ওভারে ১৬ রান দিয়ে ৫ উইকেট শিকার করেন সালাউদ্দিন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
- ওল্ড ডিওএইচইস-গাজী গ্রুপ
ওল্ড ডিওএইচএস স্পোর্টস ক্লাব: ১৩৬/৭ (ওভার: ২০; রাকিন- ৮, মাহমুদুল- ৮৫*, আল ইসলাম- ১৫*, প্রীতম- ১১) (নাসুম- ৪-০-১০-২)
গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স: ১৩৮/৪ (ওভার: ১৯.১; সৌম্য- ৩৭, মুমিনুল- ২৭, মাহমুদউল্লাহ- ১৮, রাব্বি- ২৪*) (রাকিবুল- ৪-০-২১-২)
ফলাফল: গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স ৬ উইকেটে জয়ী।
- প্রাইম ব্যাংক-প্রাইম দোলেশ্বর
প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব: ১৫১/৭ (ওভার: ২০; তামিম- ৮, এনামুল- ২৯, মিঠুন- ৫৫, কাপালী- ২৬, নাহিদুল- ২০) (কামরুল- ৪-১১-২২-২)
প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাব: ১৪৮/৯ (ওভার: ২০; সাইফ- ১৩, মার্শাল- ২২, রাব্বি- ২১, কামরুল- ৩৮*) (৪-০-২৫-৩, শরিফুল- ৪-০-১৫-২)
ফলাফল: প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব ৪ রানে জয়ী।
- পারটেক্স-শাইনপুকুর
পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাব: ১০৪/১০ (ওভার: ১৯.৩; মুসা- ২০, জহুরুল- ১৯, ধীমান- ১৯) (সালাউদ্দিন- ৩.৩-০-১৬-৩)
শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব: ১০৫/৪ (ওভার: ১৭.২; আশরাফুল- ১৭, নাসির- ২২, সোহান- ৩০, সানি- ২৭) (জয়নাল- ৩.২-০-২৬-২)
ফলাফল: শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব ৬ উইকেটে জয়ী।