ক্রিকেটের তিন সংস্করণের মাঝে টি-টোয়েন্টিতেই রেকর্ডটা সবচেয়ে বাজে বাংলাদেশের। প্রায় দেড় দশক পার হয়ে গেলেও এখনো টি- টোয়েন্টির ব্যাটিংয়ের ধাঁচটাই বুঝতে পারেননি ব্যাটসম্যানরা। ওডিআইতে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল কিংবা টেস্টে দারুণ কিছু জয় থাকলেও টি-টোয়েন্টিতে সাফল্য আজও অধরা।
অথচ, ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার ভিড়ে টি-টোয়েন্টিতে তিনি ছিলেন দারুণ সফল, স্ট্রাইক রেটটাও ঈর্ষণীয় – ১৪৭। অথচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন মোটে সাত ম্যাচ, বাংলাদেশের অদ্ভুতুড়ে ক্রিকেট সংস্কৃতির ভিড়ে আর দলে ফিরতে পারেননি।
তিনি জুনায়েদ সিদ্দিকী, টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান হওয়ার সামর্থ্য ছিল যার। কিন্তু, হারিয়ে গেছেন কালের গর্ভে!
অথচ ঘরোয়া ক্রিকেট আর এ দল পেরিয়ে বয়স ২০ পেরোনোর আগেই জাতীয় দলে অভিষেক। সেটাও আবার বিশ্বকাপের মঞ্চে। কিন্তু পাকিস্তানের বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচের আগে জুনায়েদকে সেই রোমাঞ্চ স্পর্শ করতে পারলে তো। ভয়-চাপ সব কিছুকে উড়িয়ে দিয়ে খেললেন ৪৫ বলে ৭১ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস।
ছয় চার আর তিন ছক্কায় সাজানো সেই ইনিংসে উইকেটের চারপাশে মনোমুগ্ধকর সব স্ট্রোকের পসরা সাজিয়েছিলেন তিনি। বিশ্বকাপের দারুণ পারফর্ম করার সুবাদে তিন মাস পরেই নিউজিল্যান্ডগামী বাংলাদেশ টেস্ট দলে জায়গা পান তিনি।
সেখানেও টেস্ট অভিষেকেই ফিফটি হাঁকিয়ে জানান দেন হারিয়ে যেতে আসেননি। ডানেডিনে সেদিন কিউই পেসারদের সামলে খেলেছিলেন ৭৪ রানের ঝলমলে এক ইনিংস। পরের বছর কিউইরা বাংলাদেশ সফরে এলে আরও একবার জয়ের নায়ক তিনি। তাঁর ৮৫ রানে ভর করে একদিনের ক্রিকেটে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের ম্যাচ জেতার স্বাদ পায় বাংলাদেশ।
জুনায়েদের ব্যাটিংয়ের সবচেয়ে দারুণ দিকটি হলো তিনি ছিলেন আক্রমণাত্নক মানসিকতার। অন্যপ্রান্তে যিনিই বল করুক, তিনি ছিলেন অবিচল। আজ থেকে দশ বছর আগেও তাঁর স্ট্রাইকরেট ছিল দেড়শো ছুঁইছুঁই যা কিনা আজকের দিনের বিচারেও দুর্দান্ত।
২০০৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মাত্র দুই ম্যাচ খেলে ৫৪ রান করলেও, স্ট্রাইক রেট ছিল অবিশ্বাস্য। সেবার ব্যাট করেছিলেন ২০০ স্ট্রাইক রেটে। তাঁর সামনে সম্ভাবনা ছিল টি-টোয়েন্টিতে বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হওয়ার। কিন্তু পাঁচ বছরে মাত্র সাত ম্যাচ খেলেই শেষ হয়ে যায় তাঁর ক্যারিয়ার।
বাংলাদেশের চিরায়ত ক্রিকেট সংস্কৃতির শিকার তিনি, এক ফরম্যাটে খারাপ খেললে যেখানে বাদ পড়তে হয়, অন্য ফরম্যাট থেকেও।
স্বাভাবিকভাবেই আক্রমণাত্নক ব্যাটাররা সাধারণত রান করার ক্ষেত্রে ধারাবাহিক হন না। তবে যেদিন তাঁরা জ্বলে ওঠেন সেদিন ম্যাচ বের করে আনেন। জুনায়েদও তাঁর ব্যতিক্রম নন, নিয়মিত ভালো শুরু পেলেও ইনিংসকে বড় করতে পারতেন না ওডিআই এবং টেস্টে। এছাড়া ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলার সময় শর্ট বলের বিপক্ষে তাঁর ভয়াবহ দুর্বলতা প্রকাশ পেয়ে যায়।
বিশেষ করে স্টুয়ার্ট ব্রডের শর্ট বল সামলাতে গিয়ে বেশ বেগ পোহাতে হয়েছিল তাঁকে। তবে নানা সীমাবদ্ধতা থাকলেও টি-টোয়েন্টিতে আরো বেশ কয়েকটা সুযোগ তিনি পেতেই পারতেন।২০১০ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তাঁর বদলে দলে নেয়া হয় ইমরুল কায়েসকে, যিনি ছিলেন সেবারের বিশ্বকাপে চূড়ান্তরকম ব্যর্থ। ২০১২ সালের পর আর কোনো ফরম্যাটেই জাতীয় দলে ডাক পাননি তিনি।
জাতীয় দলে সাত টি-টোয়েন্টিতে ১৪৭ স্ট্রাইক রেটে ১৫৯ রানের পাশাপাশি ওডিআইতে ছাড়িয়েছিলেন হাজার রানের কোটা। অন্যদিকে, টেস্টে ১৯ ম্যাচে এক সেঞ্চুরিতে তাঁর সংগ্রহ ৯৬৯ রান। তবে আজকের দিনে যখন টি-টোয়েন্টিতে রান পান না ব্যাটসম্যানরা কিংবা ওপেনার সংকটে ভোগে বাংলাদেশ, তখনো মনের ঈশাণ কোণে জেগে ওঠে জুনায়েদের কথা, কে জানে হয়তো আরেকটু সুযোগ পেলে এখনো ব্যাট হাতে বিশ্বকে শাসন করতেন তিনি।