ড্রেসিংরুম থেকে হেঁটে হেঁটে মাঠের ঠিক মাঝখানটায় পৌঁছুতে কত সময় লাগে; ঠিক কতটা পথ হাঁটতে হয় – এমন প্রশ্নে যার যেমন উত্তরই হোক, কামরান গুলাম সবার চেয়ে আলাদা কিছুই বলবেন নিশ্চয়ই। অভিষেক ম্যাচ, যার জায়গায় সুযোগ পেয়েছেন তিনি পাকিস্তান ক্রিকেটের বরপুত্র বাবর আজম – চাপ তখন কয়েক হাজার টন ওজন নিয়ে মাথার ওপর চেপে বসেছিল।
কিন্তু কি আশ্চর্য; এই ব্যাটারের চোখের তেজ তাতে হ্রাস পায়নি, দৃঢ় পদক্ষেপ একটা মুহূর্তের জন্য নড়বড়ে হয়নি। বুকভরা আত্মবিশ্বাস আর আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন নিয়ে তিনি অবলীলায় দাঁড়িয়ে গেলেন ইংলিশ বোলারদের বিপরীতে; অনায়াসে সৃষ্টি করলেন ইতিহাস। ১১৮ রানের দুর্দান্ত একটা ইনিংস এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে! বহুদিন পর চার নম্বরে সেঞ্চুরি দেখলো পাকিস্তান।
অন্য অনেক দিনের মতই টপ অর্ডারে বিপর্যয়, ১৯ রানে দুই উইকেট হারিয়ে ফেলে পাকিস্তান। কিন্তু বাবর নয়, এরপর মাঠে আসেন অভিষিক্ত কামরান। সব চাপ তখন বোধহয় তাঁর শক্তিতে রূপ নিয়েছিল, তাই তো ব্যাটে তৈরি হয়েছে অপূর্ব ঝলকানি।
সায়িম আইয়ুবকে নিয়ে এই ডানহাতি গড়েন ১৪৯ রানের জুটি, ৭৭ রান করে সায়িম ফিরলেও তিনি ঠিকই পৌঁছে যান তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারে। অত:পর মুলতানের মাটিতে কপাল ঠেকিয়ে স্রষ্টার কাছে কৃতজ্ঞতা জানান তিনি, ততক্ষণে পুরো গ্যালারি দাঁড়িয়ে গিয়েছিল তাঁর প্রতি মুগ্ধতা জানাতে।
‘স্ট্যান্ডি অভেশন’ পাওয়ারই যোগ্য এই নব্য তারকা; যে নান্দনিক ব্যাটিংয়ে নিদর্শন তিনি দেখিয়েছেন সেটা বহুদিন মনে রাখবে ক্রিকেটপ্রেমীরা, মনে রাখতে বাধ্য হবে।
টেস্ট ক্রিকেটে চার নম্বর পজিশন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, দলের সেরা ব্যাটারকেই তাই খেলানো হয় এখানে। এখন পর্যন্ত মাত্র দশজন ব্যাটারকে অভিষেক ম্যাচে এখানে খেলিয়েছে পাকিস্তান, এদের মধ্যে কেবল সেলিম মালিক পেরেছিলেন শতক হাঁকাতে। বহুদিনের অপেক্ষা শেষে এই রেকর্ডে এবার একজন সঙ্গী পেলেন তিনি।
ক্যারিয়ারে কামরান কতদূর যাবেন, সেটা তো সময়ের হাতে। তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে রানবন্যায় ভেসে যাওয়ার পর এমন স্বপ্নীল সূচনা না পেলে ক্রিকেট বিধাতা নিজেই ঋণী থেকে যেতেন।