যেভাবে কেন-গ্রিলিশকে কিনছে সিটি!

কোভিড-১৯ এর প্রভাব পরেছে সারা বিশ্বেই। ফুটবল ক্লাবগুলো দেড় বছরের কাছাকাছি বুগেছে, কোনো দর্শক নেই মাঠে, আয়ের বিশাল একটা অংশ কাটা পরে গিয়েছে। ট্রান্সফার মার্কেটেও বেশ চুপচাপ। বড় অর্থ খরচ করবার বেলায় কেউ নেই। না ভুল বললাম, বড় অর্থ খরচ করবার কেউ ছিল না।

আগষ্ট মাস আসতে না আসতেই ঘুরে গিয়েছে অর্থনীতির অবস্থা। এখনও দলবদলের মৌসুম শেষ হওয়ার এক মাস বাকি, আর তার আগেই তিনটি ৫০ মিলিয়ন পার করা ট্রান্সফার শেষ হয়ে গিয়েছে।

এখনও তো সিটি-চেলসি মার্কেটে নামা বাকিই। তবে সবদিক থেকে যে দলের নাম জোড়েশোরে শোনা যাচ্ছে সেটা অন্য কেউ নয়, ম্যানচেস্টার সিটি। ট্রান্সফার মার্কেটে বন্যা বইয়ে দেওয়ার মতন ঘটনার সামনে তারা।

ট্রান্সফার মার্কেটে আগুন ধরানো নতুন কিছু নয়। এর আগেও মার্কেটে আগুন ধরেছে। রিয়াল মাদ্রিদ ধরিয়েছে। ২০০৯ সালে ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ দ্বিতীয় মেয়াদে রিয়াল মাদ্রিদে এসেই বদলে দেন ট্রান্সফার মার্কেটের হালচাল। প্রথমে রেকর্ড ভাঙ্গেন কাকাকে দিয়ে।

সে রেকর্ড মাত্র ৩ দিন রাখার সুযোগ হয়েছিল। সে রেকর্ডও চুরমার করে দেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে ভিড়িয়ে। ম্যানচেস্টার সিটির শেখ মনসুর সম্ভবত আরেকজন ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ হতে চাইছেন।

এমনিতেই ট্রান্সফার মার্কেটে সিটির সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার মতন দল খুব কমই আছে। টাকার দিক দিয়েই হোক আর খেলা। সিটি কারো দিকে হাত বাড়ালে তার না করে দেওয়ার সম্ভাবনা একেবারে নেই বললেই চলে। কারণটা স্পষ্ট, অন্য যেকোনো দল থেকে বেশি দামে যেমন তারা খেলোয়াড় কিনতে পারবে, তেমনি খেলোয়াড়দের উচ্চ বেতনও দিতে পারবে। বর্তমান ফুটবলে যেটা অন্যান্য দলে সম্ভব হয় না।

ইংলিশ লিগে মনোপলি চালানোর প্রশ্নটাও তাই আসছে সেখান থেকেই। গত কয়েক মৌসুম ধরে ইংলিশ লিগের সেরা পারফরমারদের মধ্যে উপরের দিকে নাম আসে হ্যারি কেন আর জ্যাক গ্রিলিশের। টটেনহ্যামকে বছরের পর বছর সেরা পারফরম্যান্স দিয়ে যাচ্ছেন কেইন।

অন্যদিকে জ্যাক গ্রিলিশ হচ্ছেন অ্যাস্টন ভিলার সেরা তারকা। অ্যাস্টন ভিলার সাফল্যের পেছনে এককভাবে যদি কাউকে দাঁড় করানো যায় সেটা অবশ্যই গ্রিলিশ। প্রিমিয়ার লিগের সেরা তারকারা সেরা দলে খেলবে, এমনটাই তো স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। কিন্তু এক মৌসুমে সেরা দুই তারকাকে একত্রে ভেড়ানো সিটির পক্ষে সম্ভব হচ্ছে কী করে?

বলা বাহুল্য দু’জনই হতে চলেছেন ইংলিশ লিগের সর্বোচ্চ দামী খেলোয়াড়। গ্রিলিশের জন্য ১০০ মিলিয়ন ট্যাগ তো দিয়েই রেখেছে ভিলা। অন্যদিকে কেইনকে ভেড়াতে চাইলেও কম করে হলেও ১২০ মিলিয়ন তো লাগবেই। পগবার ৯০ মিলিয়ন পাউন্ড সেদিক দিয়ে এখন কমই মনে হবে। এক উইন্ডোতে ২০০ মিলিয়নের উপর খরচ করতে পারার কারণ একটাই, তাদের মালিক ও ক্রমাগত সাফল্য।

ম্যানচেস্টার সিটির এই সাফল্যের লাইনে আসা বেশিদিনের নয়। এক যুগ আগেও হাতেগুণে কয়েকজন নাম জানতো এই দলের। সেখান থেকে শেখ মনসুরের হাত ধরে অনেক টাকা যেমন পেয়েছে, তেমনই নিত্যনতুন কোচ এনে, খেলোয়াড় এনে নিজেদের সমৃদ্ধ করেছেন। পেপ গার্দিওলা গত মৌসুমে জিতেছেন ২ শিরোপা। প্রথমবারের মতন উঠেছেন চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে। ফলাফল হিসেবে মিলেছে বিশাল অঙ্কের প্রাইজমানি।

সেই সাথে রয়েছে ইংলিশ লিগের কাভারেজ। ইংলিশ লিগের জনপ্রিয়তার কারণে সব জায়গাতেই বেশ চড়ামূল্যে বিক্রি করা হয় টিভি রাইটস। এবং সেই রাইটসের বিনিময়ও হয় নিয়মাফিক। যে কারণে প্রতি মৌসুমেই ভালো পরিমাণ অর্থ পায় ক্লাব। এই মৌসুম প্রিমিয়ার লিগ জেতায় তাদের আয়ের পরিমাণটাও একটু বেশিই।

শুধু তাই নয়, এই মৌসুমে খেলোয়াড় বিক্রি থেকেও ভালো পরিমান আয় করেছে তারা। বরুশিয়া ডর্টমুন্ড থেকে ইউনাইটেড সাঞ্চোকে কিনলেও সেই টাকা থেকে ১০ মিলিয়ন পকেটে পুরেছে সিটি। অ্যাঞ্জেলিনো, জ্যাক হ্যারিসন, লুকাস মেচাকে বিক্রি করে পেয়েছে ৩৫ মিলিয়নের কাছাকাছি।

ট্রান্সফার উইন্ডো বন্ধ হওয়ার আগে আগেই বিক্রি হয়ে যাবেন এই মৌসুমে ধারে কাটানো খেলোয়াড়েরা। য্যবদল থেকে উঠে আসা খেলোয়াড়দেরও বিক্রির তালিকায় রেখেছে সিটি। তবে কেন-গ্রিলিশ কেনার জন্য অবশ্যই তা যথেষ্ট নয়। ২০০ মিলিয়ন খরচ করা শেখ মনসুরের জন্য ব্যাপার নয়, কিন্তু ফিফার কাছে নিজেদের দেনা-পাওনা ঠিক দেখানোর জন্য হলেও খেলোয়াড় তো কিছু ছাড়তেই হবে। সে জায়গাতেই নিজেদের সেরা খেলোয়াড়দেরও ছাড়তে হতে পারে তাদের।

ক্লাব থেকে বের হয়ে যাওয়ার দ্বারপ্রান্তে রয়েছেন বার্নাদো সিলভা। বেশ কয়েক বছর ধরেই সিটিকে নিজের সেরা সার্ভিস দিচ্ছেন তিনি। যে কারণেই হয়তো নতুন ক্লাবে নতুন করে নিজেকে প্রমাণ করার কথা ভাবছেন। যদিও তার দিকে আগ্রহ কম, কিন্তু কাউকে ছাড়তে হলে তালিকার প্রথমেই থাকবেন তিনি।

তালিকার পরের দিকের নামগুলো সিটিতে খুব একটা সুযোগ পান না। আয়মেরিক লাপোর্তে নিয়মিত হলেও রিয়াদ মাহরেজের মতন খেলোয়াড় বেশিরভাগ সময়ই বেঞ্চে কাটান। আসছে আফ্রিকান ন্যাশন কাপ, আলজেরিয়াকে জেতাতে হলে নিয়মিত খেলা আর ফর্মে ফেরা দুটোই প্রয়োজন তার। অন্যদিকে লাপোর্তে স্পেনের হয়ে ইউরো খেলে নাম কামিয়েছেন স্পেনেও। স্প্যানিশ ফলগুলোর আগ্রহও আছে তার দিকে। সম্ভব হলে তাকে বিক্রি করেও ফান্ড জোগাতে পারে সিটি।

দিনশেষে ব্রিটিশ ট্রান্সফার মার্কেটে আগুন লাগাতে চলেছে সিটি আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই। কেইন ইতোমধ্যে ট্রেনিং মিস দিয়েছেন, গ্রিলিশের জন্য অফিসিয়াল অফার চলে যাচ্ছে। ভেতরে ভেতরে সিটির টাকার উৎস সকলে জানলেও লোক দেখানো অফিসিয়াল শিট ব্যালেন্স করছে তাঁরা।

গত মৌসুমে আগুয়েরোকে ছাড়ার সময় কাঁদতে কাঁদতে গার্দিওলা বলেছিলেন, তাকে রিপ্লেস করার মতন অবস্থা তাদের এখন আর নেই। মৌসুম শুরু হতে না হতেই ২০০ মিলিয়ন নিয়ে প্রিমিয়ার লিগ-চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার জন্য তৈরি গার্দিওলা। এত খরচ করেও কি সিটির ইউরোপ জয়ের আক্ষেপ মেটাতে পারবেন তিনি?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link