সময় বদলে যায়। সেই সঙ্গে বদলে যায় কত কিছুই। সম্পর্কের ব্যাপারটাও খানিকটা এমনই। দারুণ বন্ধুত্বের পথ বদলে এগিয়ে যায় বন্ধুরতায়। বাইশ গজের ক্রিকেটেও এমন ইতিহাস অনেক। যেখানে উষ্ণ সম্পর্ক এক সময় রূপ নেয় অদ্ভুত রকমের শীতলতায়।
বাংলাদেশের ক্রিকেট সাকিব-তামিমের অন্তরঙ্গতা এখন অতীত। কেন অতীত সেটি অজানা। তবে দুজনের আদি বন্ধুত্বের পথটা এখন বেঁকে গিয়েছে। সম্পর্কের অবনমনের এই ব্যাপার অবশ্য বিস্ময়ে ডোবার মতো কিছু নয়। বরং এই ব্যাপারগুলো এগিয়ে যায় প্রকৃতির নিয়মেই।
সাকিব এবারের বিশ্বকাপে অধিনায়কত্বের আর্মব্যান্ড পরে মাঠে নামবেন। যদিও বাইশ গজের ক্রিকেট অবশ্য আর্মব্যান্ডের চল নেই। মূলত রূপক অর্থেই সেটি বলা। কিন্তু তার বিপরীতে তামিমের বিশ্বকাপ দলে জায়গাই হয়নি। সে সব কিছুর নেপথ্যে জলঘোলা কাহিনী অবশ্য একপাশে রাখা যাক।
সাকিব-তামিম বৈরিতার সাদৃশ্যতা ক্রিকেট ইতিহাসে নেহায়েতই নগণ্য নয়। ক্রিকেট ইতিহাসে দুই সতীর্থের মধ্যে একটা বৈরিতার গল্প এখনো নাড়া দেয়। যদিও তাদের মধ্যে এখন সেই সম্পর্কের শীতলতা নেই বললেই চলে। মাঝে মধ্যেই দু’জন একে অপরকে প্রশংসায় ভাসান। সেই দুই সতীর্থ হলেন কপিল দেব ও সুনীল গাভাস্কার।
দুজনই ভারতের প্রথম বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য। তবে কপিল দেবের মাহাত্ম্য হলো- তিনি সেই ৮৩ বিশ্বকাপ জয়ের অধিনায়ক। সুনীল গাভাস্কার অবশ্য একটুও পিছিয়ে নেই। তাঁর সৌজন্যেই যে টেস্ট ক্রিকেট প্রথম কোনো ব্যাটারের কাছ থেকে ১০ হাজার রানের মাইলফলকের সাক্ষী হয়েছিল।
যা হোক ফেরা যাক, এ দুই কিংবদন্তি ক্রিকেটারের মধ্যে সম্পর্কের বৈরিতার গল্পে। ১৯৮০ সালের মাদ্রাজ টেস্ট। সে টেস্টে পাকিস্তানকে ১০ উইকেটে হারিয়ে দেয় ভারত। ভারতের জেতা সেই ম্যাচে সুনীল গাভাস্কার আর কপিল দেব- দুজনেই দেখিয়েছিলেন দাপুটে পারফরম্যান্স। প্রথম ইনিংসে ১৬৬ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংস ২৯ রানের অপরাজিত থাকেন গাভাস্কার। আর দুই ইনিংসে ১১ উইকেটের পাশাপাশি ৮৪ রানের একটি ইনিংস খেলেছিলেন কপিল দেব।
কিন্তু সে ম্যাচের দুই সেরা পারফর্মারই ম্যাচ চলাকালীন বিতণ্ডায় জড়িয়েছিলেন। ঐ ম্যাচে মূলত কিছু ক্ষণের জন্য একসঙ্গে ব্যাট করেছিলেন কপিল আর গাভাস্কার। আর সেই সময়ই ঘটে বাক বিতণ্ডার ঘটনা। ইমরানের বলে একটা সিঙ্গলের কলে কপিল সাড়া না দেওয়ায় ক্ষেপে যান গাভাস্কার। পরে ইমরান খানের বলে আউট হয়ে যান গাভাস্কার। মূলত এরপরই নিজের আউটের জন্য কপিলকে দায়ী করে বেশ আক্রমণাত্মক ভাষায় কথা বলতে বলতে মাঠ ছাড়েন গাভাস্কার।
এখানেই শেষ নয়। একবার প্রেস কনফারেন্সের ভরা মজলিশে কপিলকে নিয়ে গাভাস্কার বলে বসেন, কপিল আর কোন দিন হাফ সেঞ্চুরি করতে পারবে না। কারণ সেই সময় ব্যাটে হাতে তাঁর ফর্ম খারাপ যাচ্ছিল। পরের ইনিংসেই কপিল হাফ সেঞ্চুরি করে গাভাস্কারকে ভুল প্রমাণিত করেছিলেন কপিল দেব।
যদিও পরবর্তীতে গাভাস্কার দাবি করেছিলেন, এটি মূলত কপিলকে শক্ত জোগানোর জন্যই তিনি বলেছিলেন। কিন্তু ঐ ঘটনায় গাভাস্কারের মন্তব্য মোটেই ভালভাবে নেননি কপিল দেব।
কপিল-গাভাস্কারের বৈরিতার নমুনা মিলেছে এরপরেও। যার সূত্রপাত ঘটেছিল ৮৩ বিশ্বকাপের পরে। যদিও কানাঘুষা শোনা যায়, বিশ্বকাপ চলাকালীনই এ দুই ক্রিকেটারের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটেছিল। যা হোক, ১৯৮৪ সালের দিল্লী টেস্টে তখন ভারতের অধিনায়ক ছিলেন সুনীল গাভাস্কার।
তো সে টেস্টে দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাটিং করে নিজের উইকেট ছুঁড়ে আসার জন্যে পরের টেস্টে বাদ পড়ে যান কপিল দেব। মজার ব্যাপার হলো, সেই টেস্টে দুই ইনিংস মিলিয়ে সর্বোচ্চ রান এসেছিল কপিলের ব্যাট থেকেই।
তারপরও পরের টেস্টে বাদ পড়ার কারণে তখন গুঞ্জন ওঠে, গাভাস্কার মূলত কপিলের অর্জনের ঈর্ষান্বিত বলেই একাদশ থেকে বাদ দিয়েছে। যদি গাভাস্কার দাবি করেন, কপিলের বাদ পড়াতে তাঁর কোনো হাত ছিল না।
যদিও এ দুই ক্রিকেটারের সম্পর্ক এখন বেশ ভাল। সুনীল গাভাস্কার তো একবার বলেই ছিলেন, ভারতে শচীন আছে, ধোনি আছে। কিন্তু কপিলের মতো কেউ আর আসবে না। সব মিলিয়ে খেলোয়াড়ি জীবনে এ দুই ক্রিকেটারের বৈরিতা এখন অতীত।
বাংলাদেশে সাকিব-তামিম দ্বৈরথ তো একদম ওপেন সিক্রেট। ২০২৩ বিশ্বকাপে দল নির্বাচনের আবহাওয়ায় সেটি এখন প্রায় প্রকাশ্য হওয়ার পথে।
তবে এক সময়কার দারুণ বন্ধুত্বে কীভাবে চিড় ধরলো, সেটিই যেন বহুদিন ধরে একটা প্রশ্ন হয়ে থেকে গিয়েছে। এই প্রশ্নের উত্তর যেন অনির্দিষ্টকালের জন্যই হয়ে থাকবে অজানা।