খুশদিল শাহ, দৃশ্যপট পাল্টানোর নায়ক

এবারের বিপিএলের শুরুটা মোটেই ভাল হয়নি টুর্নামেন্টের সফলতম দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের। তারকা বহুল দল নিয়েও দলটি যেন আটকে যাচ্ছিল বারবার। তবে সময় গড়াতেই পুরনো রূপে ফিরছে ইমরুল কায়েসের দল। ঢাকার বিপক্ষে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে যেন নিজেদের সামর্থ্যের জানানই দিলেন কুমিল্লার ব্যাটাররা। বিশেষ করে খুশদিল শাহ রীতিমত ঝড় তুললেন সমুদ্র পাড়ের শহরে। তাঁর ২৪ বলে ৬৪ রানের ইনিংসে ১৮৪ রানের ভাল সংগ্রহ পেয়েছে দলটি। 

পাকিস্তানি খুশদিল দলের সাথে আছেন বিপিএলের শুরু থেকেই। কিন্তু কিছুতেই নিজের সেরাটা দেখাতে পারছিলেন না।স্বদেশী উসমান খান, মোহাম্মদ হারিস, শোয়েব মালিকরা যেখানে বাকি দলগুলোর জার্সিতে উজ্জ্বল সেখানে খুশদিল যেন খানিকটা নিষ্প্রভই ছিলেন। অবশেষে জ্বলে উঠলেন এই হার্ডহিটার, তাতেই যেন নিমিষে হারিয়ে গেল টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা ঢাকার বোলিং লাইন আপ। 

খুশদিল ব্যাটিংয়ে নামার সময়ও ধুঁকছে কুমিল্লার ব্যাটাররা। লিটন দাস শূন্যতেই ফিরেছেন, অন্যপ্রান্তে থাকা মোহাম্মদ রিজওয়ানও টিকে থাকতে সংগ্রাম করছেন। ১৩ ওভার পেড়িয়ে গেলেও রানরেট পেড়োয়নি সাড়ে ছয়ের কোটা। একে তো ব্যাটে রান পাচ্ছেন না, অন্যদিকে দল রান তুলতে পারছে না; সব মিলিয়ে ব্যাট করতে নামার আগে খুশদিল ছিলেন বেশ চাপে। কিন্তু তাঁর ব্যাটিংয়ে চাপের লেশমাত্র টের পাবার উপায় কই! 

প্রথম ওভারটা খানিকটা দেখেশুনে খেললেন। এরপর স্বদেশী আমির হামজাকে দিয়েই শুরুটা করলেন। ১৬তম ওভারে টানা তিন ছক্কায় তুললেন ২৯ রান। প্রথম দুই ছয় লং অনের উপর দিয়ে মারলেও তৃতীয় ছয়টাতে দেখালেন পেশিশক্তির ব্যবহার। খাটো লেংথের বলটা সজোরে আছড়ে ফেললেন মিড উইকেটের উপর দিয়ে। ঝড়টা অব্যাহত রইলো মুক্তার আলীর পরের ওভারেও। সে ওভারে ২০ রান তুলেই ক্রমেই কুমিল্লার বোলারদের এনে দিতে লাগলেন লড়াই করার পুঁজি। অন্যপ্রান্তে, তাঁকে যোগ দিয়েছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান, সিঙ্গেলস নিয়ে মেরে খেলার পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন খুশদিলকে।

মোহাম্মদ ইমরানকে চার মেরে মাত্র ১৮ বলে পৌঁছে যান ফিফটিতে। এবারের আসরে এটাই দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড। পঞ্চাশ পেরোনোর পরও খুশদিল ঝড় থামেনি, রীতিমত স্টিম রোলার চালিয়েছেন ঢাকার বোলারদের উপর দিয়ে। তাঁর ব্যাটিংয়ের সামনে অসহায় লাগছিল প্রতিপক্ষের অধিনায়ক নাসির হোসেনকে। দলের মূল অস্ত্র তাসকিন আহমেদের পূর্ণ চার ওভার শেষ হয়ে গেছে আগেই। ফলে তাকেও আনতে পারছিলেন না। ইমরান, আমির হামজা, মুক্তার কিংবা সৌম্য কেউই বাদ যান নি খুশদিলের হাত থেকে। 

অবশেষে সৌম্যর মিডিয়াম পেসে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন খুশদিল। ততক্ষণে অবশ্য ঢাকার সর্বনাশ যা হবার হয়ে গেসে, তাঁর ২৪ বলে সাত চার আর পাঁচ ছয়ে সাজানো ৬৪ রানের ইনিংসে ১৮৪ রানে ইনিংস শেষ করে কুমিল্লা।

অথচ নিজেদের ইনিংসের শুরুতে রান তুলতে ভালোই বেগ পেতে হয়ে কুমিল্লার ব্যাটারদের। তাসকিন কিংবা আমির হামজাদের তোপে মনে হচ্ছিল দেড়শ রানের কোটা পেরোতে পারবে না কুমিল্লার দলটি। কিন্তু খুশদিলের এক ইনিংসের বদলে গেছে দৃশ্যপট। ব্যাকফুটে থাকা কুমিল্লাই প্রথম ইনিংস শেষে ম্যাচ চালকের আসনে। চট্টলার ধীর হয়ে আসা পিচে ১৮৪ রানের লক্ষ্য পেরোনো ঢাকার জন্য পাহাড় ডিঙ্গোনোই বটে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link