লড়াইটা ভোলেননি নাসির

একজন কার্যকর ক্রিকেটার হওয়ার জন্য যা যা প্রয়োজন – সবই তো ছিল রংপুরের ছেলে নাসিরের মধ্যে। মিডল অর্ডারে ব্যাটিং করতেন। বিপদে দেয়াল তুলে দাঁড়াতেন, খাদের কিনারা থেকে টেনে তুলে দলকে বিজয়ের নিশানা দেখাতেন। বলা হত, তিনিই নাকি বাংলাদেশের সেরা ফিনিশার, বাংলাদেশের মাইকেল বেভান।

ব্যক্তিগত জীবনের সাথে মাঠের ক্রিকেটটা গুলিয়ে ফেলেছিলেন নাসির। একটু একটু করে কক্ষপথ থেকে অনেকটা দূরে সরে গিয়েছিলেন। অথচ বাংলাদেশ তাঁকে নিয়ে কত বড় স্বপ্নই না দেখেছিল। বাংলাদেশের তো আরেকজন অলরাউন্ডার ছিল, নাসির হোসেন।

একজন কার্যকর ক্রিকেটার হওয়ার জন্য যা যা প্রয়োজন – সবই তো ছিল রংপুরের ছেলে নাসিরের মধ্যে। মিডল অর্ডারে ব্যাটিং করতেন। বিপদে দেয়াল তুলে দাঁড়াতেন, খাদের কিনারা থেকে টেনে তুলে দলকে বিজয়ের নিশানা দেখাতেন। বলা হত, তিনিই নাকি বাংলাদেশের সেরা ফিনিশার, বাংলাদেশের মাইকেল বেভান।

বোলিংয়ে কার্যকর ছিলেন, গুরুত্বপূর্ণ সব সময়ে উইকেট এনে দিতে মুশফিক-মাশরাফিরা বারবারই ডাকতেন নাসিরকে। নাসির সেই ভরসার প্রতিদান দেননি – এমন নজীর খুব একটা খুঁজে পাওয়া যায় না।

তবে মাঝের সময়টায় এসব অনেকটা রূপকথার গল্পের মতই শোনাত। নাসির হোসেন বুঝি শেষ। গত কয়েক বছর, কোন ধরনের ক্রিকেটেই পারফর্ম করতে পারছিলেন না। বারবার খবরের শিরোনাম হয়েছেন শুধুই তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের কারণে।

তবে এবারের বিপিএলে ভিন্ন গল্পও লিখছেন নাসির। তাঁর দল ঢাকা খুব একটা ভাল অবস্থানে নেই। তবে অধিনায়ক নাসির প্রায়ই খবরের শিরোনাম হচ্ছেন তাঁর পারফর্মেন্স দিয়ে। এই যেমন আজও হেরেছে তাঁর দল। তবে মাঠের ক্রিকেটে নজর কেড়েছেন নাসির।

বল হাতে ১৬ রান দিয়ে নিয়েছিলেন এক উইকেট। এরপর ব্যাট হাতে আবার পুরনো সেই নাসিরকে দেখা গেল। দলের বিপদে ঢাল হয়ে দাঁড়ালেন। দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যাওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করলেন। ঢাকার হয়ে সাথে কেউ সঙ্গ দিলে হয়তো আজও জয়ের নায়ক হতে পারতেন তিনি।

তবুও নাসির নিজের কাজটা করে গিয়েছেন। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন দলকে। আজ কুমিল্লার শক্তিশালী বোলিং লাইন আপের বিপক্ষে খেলেছেন ৪৫ বলে ৬৬ রানের ইনিংস। ব্যাটিং করেছেন প্রায় দেড়শ স্ট্রাইক রেটে। অপরাজিত থেকেই নিজের ইনিংস শেষ করা নাসির অবশ্য দলকে জেতাতে পারেননি।

শুধু আজকের ম্যাচেই না। নাসির পারফর্মেন্স করছেন প্রায় প্রতি ম্যাচেই। আগেরবার ইনজুরির কারণে দল না পাওয়া নাসির এবার যেন নিজের সেরাটাই দিচ্ছেন। এই আসরে যে পাঁচ ম্যাচ খেলেছেন তাঁর প্রতিটাতেই রান পেয়েছেন।

ব্যাট হাতে প্রথম ম্যাচে খুলনার বিপক্ষে ৩৬ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস। এরপর সিলেটের বিপক্ষে করেছেন ৪০ রান। পরের দুই ম্যাচে ৩০ ও ৩৯ রানের ইনিংসের পর আজ আবার ৬৬ রানের অপরাজিত ইনিংস। সব মিলিয়ে এই আসরে পাঁচ ম্যাচে ৭০.৩৩ গড়ে করেছেন ২১১ রান।

ব্যাট হাতে নিয়মিত রান করার পাশাপাশি বল হাতেও সেই পুরনো দিনের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছেন নাসির। উইকেটের প্রয়োজন হলেই যে নাসিরকে বোলিংয়ে আনা হত। আর ঠিকই সেই সময় উইকেট এনে দিতে নাসির।

এবারের বিপিএলেও বোলার নাসির তাই করছেন। ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে নিজেকে বোলিংয়ে আনছেন। উইকেটও পাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত চার ম্যাচে বোলিং করে তুলে নিয়েছেন পাঁচ উইকেট। আর ফিল্ডার নাসিরকে নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ তো কখনোই ছিল না।

এই নাসির নতুন করে দর্শকমনে আক্ষেপের জন্ম দিচ্ছেন। কেন যে তিনি ব্যক্তিগত জীবনের সাথে ক্রিকেটটাকে গুলিয়ে ফেলেছিলেন। না হলে ক্রিকেট মাঠে ব্যাড বয় তো কতই এসেছিল। তবে তাঁরা যখন বাউন্ডারি রোপটার ভিতরে পা দিতেন তখন তাঁরা শুধুই ক্রিকেটার।

নিজের ব্যক্তিগত জীবন যারা মাঠের বাইরে রেখে আসতে পেরেছেন তাঁরা ব্যাডবয় হয়েও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পারফর্ম করেছেন। তাঁদের ব্যক্তিগত জীবন, সামাজিক জীবন কিংবা দর্শন কোনকিছুই মাঠের ক্রিকেটে প্রভাব ফেলেনি। তবে মাঠ আর মাঠের জীবনটা মিলে মিশে গেলেই সব গেল! সে ভুলটাই করেছিলেন নাসির হোসেন। ভুল শুধরাতে কি বড্ড দেরি হয়ে গেল!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...