গত বছর থেকে চলমান নাটক শেষে কিলিয়ান এমবাপ্পে স্থায়ী হয়েছেন ফ্রান্সেই। বর্তমানে ফুটবলের দুনিয়ায় নি:সন্দেহে সবচেয়ে বড় আলোচনার বিষয় এই সুপারস্টার। দুর্দান্ত গতি, ড্রিবলিং, চমৎকার ফিনিশিংয়ের সক্ষমতা নিয়ে দৃশ্যপটে এসেছিলেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। সম্ভবনাময় এই ভবিষ্যৎ তারকাকে নিয়ে তাই এত কাড়াকাড়ি।
অতিরিক্ত অর্থের ঝনঝনানিময় এমবাপ্পের এমন সাইনিং ফুটবল দুনিয়ায় বেশ বড়সড় একটি প্রভাব ফেলেছে কিংবা ফেলতে যাচ্ছে। এমবকি বদলে যেতে পারে ভবিষ্যতে খেলোয়াড় ট্রান্সফারের নীতিমালাও।
এক্ষেত্রে প্রথমেই বলতে হয় প্যারিস সেন্ট জার্মেই-এর কথা। ফুটবলে প্রচলিত আছে একটি কথা – খেলোয়াড় ক্লাবের চেয়ে বড় নয়। কিন্তু কাতারি মালিকানায় থাকা ক্লাবটি এমবাপ্পের জন্য যা করেছে তাতে কথাটা মিথ্যা প্রমান হয়েছে। এমবাপ্পেকে নতুন চুক্তিতে রাখার জন্য অবিশ্বাস্য অংকের টাকার পাশাপাশি দলের নীতিনির্ধারণে তাঁর মতকে গুরুত্ব দেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। পিএসজির নতুন কোচ- স্পোর্টস ডিরেক্টর নিয়োগে এমবাপ্পে চাইলে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারবেন। ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্তগুলোতে ক্লাবের কোন খেলোয়াড়ের এমন প্রভাব নি:সন্দেহে ভাল উদাহরণ সৃষ্টি করবে না।
এছাড়া এমবাপ্পের চুক্তিতে কাড়িকাড়ি অর্থ খরচের দিকটি ফুটবলের ফাইন্যান্সিয়াল ফেয়ার প্লে-কে রীতিমতো বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দিয়েছে। শুধু কোভিডের সময় পিএসজি’র আর্থিক ক্ষতি হয়েছিল ৩৫০ মিলিয়ন ইউরো, এরপরও প্রায় বাৎসরিক ৬০ মিলিয়ন ইউরোর বেশি বেতনে এমবাপ্পের চুক্তি নবায়ন করেছে ক্লাবটি। এমবাপ্পে ছাড়াও নেইমার, মেসি ও অন্যদের বেতনের অংক দেখলেই বোঝা যায় নাসের আল খেলাইফি আর্থিক ভারসাম্য নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নন। কিন্তু ফুটবলের বৃহত্তর স্বার্থে উয়েফা’র উচিত এটির কার্যকর কোন সমাধান বের করা।
সাইনিং নিয়ে এমবাপ্পের নাটকীয় কান্ড আরো একবার বুঝিয়ে দিল ফুটবলের উপর টাকার প্রভাব। টাকা এখন আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। রিয়াল মাদ্রিদও এমবাপ্পের জন্য অনেক টাকা খরচ করতে প্রস্তুত ছিল তবে পিএসজির অফুরন্ত টাকার সঙ্গে তারা পেরে ওঠেনি। এবং এমন ঘটনার জের ধরে সামনে হয়তো নিউক্যাসেল কিংবা অন্য ধনকুবেরদের ক্লাবের সঙ্গে পেরে ওঠা কঠিন হবে। ইতিহাস, ঐতিহ্যে এগিয়ে থাকলেও হয়তো প্লেয়ার ট্রান্সফারে খুব একটা সফল হবে না রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনার মত ক্লাবগুলো।
তাছাড়া ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এবং কাতারের শেখদের নাক গলাতে হয়েছে এমবাপ্পে ইস্যুতে। ফুটবলে এর আগেও বৈশ্বিক রাজনীতি ছিল, তবে কখনোই এতটা প্রভাব বিস্তার করেনি। শুধু তাই নয়, ভবিষ্যতেও হয়তো এমন রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের পরিমান আরো বাড়তে পারে।
ফ্রেঞ্চ লিগের জন্য অবশ্য এমবাপ্পের থেকে যাওয়াটা আশীর্বাদ বটে। প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাপকাঠিতে লা লিগা, প্রিমিয়ার লিগ এমনকি বুন্দেসলিগা বা সিরি এ’র চেয়েও হয়তো পিছিয়ে আছে ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ান। কিন্তু মেসি-নেইমারদের উপস্থিতির পাশাপাশি এমবাপ্পের থেকে যাওয়া নিশ্চিতভাবেই লিগের মান আরো উপরে উঠবে। স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে স্পন্সর, টিভি স্বত্বের মত আয়ের উৎসগুলো।
অন্যদিকে এমবাপ্পের চুক্তি নবায়নের সিদ্ধান্তের পর ঠিক বিপরীত অবস্থায় আছে লা লিগা। ‘এমবাপ্পে টু রিয়াল মাদ্রিদ’ ট্রান্সফার ব্যর্থ হওয়া লা লিগার আর্থিক দিককে প্রভাবিত করেছে নেতিবাচকভাবে। এমনিতেই লা লিগায় মেসি-রোনালদো না থাকায় এই মুহূর্তে একজন পোস্টার বয়ের শূন্যতায় ভুগছে তারা।
সেই শূন্যতা পূরন করতে পারতেন আর্লিং হাল্যান্ড কিংবা কিলিয়ান এমবাপ্পে। কিন্তু দুজনের কেউই না আসায় হতাশ হতে হয়েছে স্প্যানিশ লিগকে। ইতোমধ্যে পিএসজির বিরুদ্ধে ফাইন্যান্সিয়াল ফেয়ার প্লে নিয়ে আইনি লড়াইয়ের ঘোষণাও দিয়েছেন লা লিগার সভাপতি জাভিয়ের তেভাস।
সবশেষে বলতে হয় ভার্বাল এগ্রিমেন্ট বা মৌখিক চুক্তির কথা। খেলোয়াড় ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে অনেক আগ থেকেই এই ধরনের চুক্তি চালু আছে। এমনকি এই মৌসুমে এন্টোনি রুডিগার চেলসি থেকে রিয়াল মাদ্রিদে এসেছেন মৌখিক চুক্তিতেই। গুঞ্জন রয়েছে কিলিয়ান এমবাপ্পেও লস ব্ল্যাঙ্কোসদের চুক্তি স্বাক্ষরের কথা দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই কথার বরখেলাপের পর এখন সামনে অনেকদিন থেকে হয়ে আসা ভার্বাল এগ্রিমেন্টের উপর ভরসা কমে যাবে নিশ্চিতভাবেই।