ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে ব্রাজিলের ফুটবল। এমন একটা উক্তি চারিদিকে ছড়িয়ে গেছে বটে। কোন কোন অংশ সত্য। ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে না হোক, বাজে সময় তো অবশ্যই পার করছে। এর দায় কার? এমন প্রশ্ন করা হলে, কেউ হয়ত ব্রাজিলের ফুটবল বোর্ডকে দায়ী করবেন, আবার কেউ হয় কোচের দায় খুঁজবেন। কেউ কেউ কোন নির্দিষ্ট খেলোয়াড়ের উপর দায় চাপিয়ে দিতে চাইবেন।
তবে এই যে ব্রাজিলের খারাপ সময় যাচ্ছে, এই দায় কি কোনভাবেই ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তিদের নয়? ষোলআনা না হোক ৮ আনা কিংবা তর্কের খাতিরে ৪ আনা দায়ভার তো রয়েছে ব্রাজিলের কিংবদন্তিদের। বিষয়টি আরেকটু সহজ করা প্রয়োজন বোধহয়।
বিশ্বজুড়ে ব্রাজিলের কোটি কোটি ভক্ত-সমর্থক। তারা তো আর এমনি এমনি দলটাকে সমর্থন দিয়ে যান না। নানন্দিক ফুটবলের সত্যিকার অর্থেই ধারক ছিল ব্রাজিল। কিন্তু পরবর্তীতে বাহক আর হয়ে উঠতে পারছে না। এর দায় নিকট অতীতে ব্রাজিল ফুটবলকে মাতিয়ে রাখা খেলোয়াড়দের। এই দায় ব্রাজিলের কিংবদন্তিদের।
তুখোড় সব খেলোয়াড়দের আখড়া ছিল ব্রাজিল। এখনও নেই সেটা বলবার উপায় নেই। তবে প্রত্যেকেই নিজ নিজ ক্লাবের হয়ে দারুণ করছেন ক্যারিয়ারে। বিপত্তি বাঁধে জাতীয় দলে এসে। জাতীয় দলে এসে প্রত্যেকেই খেই হারিয়ে ফেলছেন। সেখানে কোচের দায় তো রয়েছেই। ব্রাজিলিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের একটা গোড়ামি রয়েছে, তারা দেশীয় কোচ ছাড়া বাইরের কোচদের নিয়োগ দিতে চাননা।
সে কারণেও ভিন্ন ধাঁচের কোচ এসে ব্রাজিল দলের সাথে সম্পৃক্ত হতে পারছেন না। এদিক থেকে রোনালদিনহোরা হতে পারতেন আদর্শ। তারা এগিয়ে আসতে পারতেন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে। তবে তার আগে তাদের মনোনিবেশ করতে হতো ফুটবল কোচিংয়ে। ইউরোপে রোনালদিনহোরা চাইলেই তো কোচিং দীক্ষা নেওয়ার সুযোগ পেতে পারতেন।
কিন্তু তারা নেন না। তারা আয়েশি জীবনকেই প্রাধান্য দেন। চিরপ্রতিদ্বন্দী আর্জন্টিনার সাবেক কিংবদন্তি হ্যাবিয়ার মার্শ্চেরানো বয়সভিত্তিক দলে কোচিং করাচ্ছেন নিয়মিত। অন্যদিকে সম-সাময়িক ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি রাইট ব্যাক দানি আলভেজ হাজত বাস করেছেন, নারী কেলেঙ্কারিতে। অন্যদিকে রোনালদিনহো, রোনালদোরা নানানরকম পার্টিতে নিয়মিত উপস্থিত থাকেন। কিন্তু কখনোই তাদেরকে ব্রাজিলের তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করতে দেখা যায় না।
সেটাও বরং ব্রাজিলের এমন অধঃপতনের কারণ। তাছাড়া এই যে খেলোয়াড়ী জীবন শেষ হওয়া মাত্রই আয়েশি-বিলাসি জীবন যাপনের প্রভাবক হিসেবে কাজ করে দারিদ্র। ব্রাজিল দলে খেলা অধিকাংশ ফুটবলারই অভাব-অনটনের মধ্যে বড় হয়ে পরবর্তীতে হয়েছেন ‘সুপারস্টার’।
খেলোয়াড়ি জীবনে অর্থের ঝনঝনানি তাদেরকে আলস্যের দিকে ধাবিত করে। তারা আর কষ্ট করতে চান না শেষ বেলায়। নেশা, নারী কিংবা জুয়াতে মত্ত্ব হয়েই বাকিটা জীবন পার করে দিতে চান।
এ কারণে জাতীয় ফুটবল দলের সাথে সম্পৃক্ত হতে দেখা যায় না সচারচর। আর তাতে করে তরুণদের মধ্য ছড়িয়ে পড়ছে না সেই লিগ্যাসি। তাছাড়া কিংবদন্তি ফুটবলাররা প্রতিনিয়ত বর্তমান খেলোয়াড়দের সমালোচনা করে যান মিডিয়ার সামনে। সেটা সম্ভবত প্রাসঙ্গিক থাকার জন্যে। কিন্তু তাদেরকে খেলোয়াড়দের সহয়তায় এগিয়ে আসতে দেখা যায় খুব কমই।
পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন কারণেই ব্রাজিলের এই করুণ দশা। এখান থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে ফেডারেশনের যেমন দূরদৃষ্টি বাড়াতে হবে, খেলোয়াড়দের নিজেদেরকে উজ্জীবিত করতে হবে, সেই সাথে কিংবদন্তিদের এগিয়ে আসতে হবে। তাদের মধ্যে থাকা ফুটবলীয় জ্ঞান কোন না কোনভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে নতুন প্রজন্মের মাঝে।