শচীনকে অর্জুনের খোলা চিঠি

বাবা,

আমি খেলেছি দুটো আইপিএল ম্যাচ। ভালোই খেলেছি। একটা জিনিস খেয়াল করেছো, রবি শাস্ত্রী সারা ম্যাচ জুড়ে কীরকম টেন্ডুলকার নাম ধুয়ে জল খেলেন? ১৭ ওভারের আশেপাশে যখন কমেন্ট্রি বক্সে জোর আলোচনা হচ্ছে, অর্জুন কোন ওভারটায় বল করতে আসবে? অনেকেই বলছে দলের তরুণ বোলারকে লুকিয়ে না রেখে সামনে নিয়ে আসা উচিত।

তবেই না টেরাকোটা আগুনে পুড়ে শুদ্ধ হবে। এসবের মাঝে রবি শাস্ত্রী আচমকা বলে দিলেন, অর্জুন, ক্যাপ্টেনকে গিয়ে বলুক, আমার নামটা জানো তো? তেন্ডুলকর। তাহলেই কাপ্তেন সুড়সুড় করে বল দিয়ে দেবে। তখন ড্রেসিং রুমের ঝাপসা কাঁচের মধ্যে তোমার বিবর্ণ মুখের ছবিটা বড় স্ক্রীনে দেখাচ্ছিলো।

অন্য একজন ধারাভাষ্যকার বললেন, তুমি পেট্রিফাইড। যাতে তোমায় আমার বোলিঙের সময় না দেখায় তাই তুমি ডাগ আউট থেকে ড্রেসিং রুমে ফেরত গেছো। আগের দিন যেমন ড্রেসিংরুমের পাশেই কালো চশমা পরে দাঁড়িয়েছিলে। কিন্তু তাই বলে ব্রডকাস্টার দেখাবে না? তুমি আর আমি তো টিআরপি।

তারপর ম্যাচ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে সবাই আমায় জড়িয়ে ধরলো। নজর করে দেখবে, আমি ঠিক সপ্রতিভ নই, মানে আরেকটা নতুন প্লেয়ার উইকেট নিয়ে শেষ ওভারে ম্যাচ শেষ করলে যতটা সপ্রতিভ থাকতো, ততটা নই। সবাই আমার চুল নেড়ে দিচ্ছে, কিন্তু আমি খানিকটা অপ্রতিভ। কারণ, এর মধ্যে কোনটা কালকের ছবি হয়ে যাবে। সেই ছবির কী মানে হবে! আমায় সবসময় সতর্ক থাকতে হয়। আমি জানি আমি ম্যাগনিফাইং গ্লাসের নিচে… সবসময়।

তবে হ্যাঁ, কালকে আমি তোমার থেকেও ভালো একটা জিনিস করতে পেরেছি। আরে নাহ, বোলিং নয়। ওটা তো রবি শাস্ত্রীর বক্তব্য, তাও রাত আটটার পরে, মুলতানে দিনের শেষ ওভারের শেষ বলে, মইন আলিকে নাচিয়ে নাচিয়ে বোল্ড করেছিলে তুমি। এইসবের পাশে, শেষ ওভারে কুড়ি রান চেজ করতে গিয়ে টেল-এন্ডার উইকেট ছুঁড়ে দিলো। কোনো তুলনা হয়?

না হয় না। যারা ক্রিকেট জানে তারা জানে। তারা এটাও জানে, আমি আলাদা কী করেছি। শুনবে? আমি মেপে কথা বলেছি। কম কথা বলেছি। পোস্ট ম্যাচ ইন্টারভিউতে ওদের উচ্ছ্বাসে ভেসে যাই নি।

শচীনের কাছে কী টিপস পেতে তুমি? শেষ ওভার বল করতে যাওয়ার সময় কী মনে হচ্ছিলো তোমার? শচীন কোনো উইকেট পায় নি, আইপিএলে। তুমি বাবাকে টপকে গেলে, কেমন লাগছে?

কোনো প্রশ্নের উত্তরে আমি ব্যাট চালাই নি। মাথা নিচু করে ব্লক করে গেছি। ওরা পরের দিনের হেডলাইন চাইছিলো। ওদেরকে আমি সেটা দিই নি। অভিষেকে রঞ্জি অভিষেকের দিনেও দিই নি। আজকেও দিলাম না।

ঠিক এখানেই আমি এগিয়ে রইলাম। ক্রিকেটীয় দক্ষতায় হয়তো কোনোদিন পারবো না। কিন্তু এটা তো করতেই পারি।

 

ইতি,

অর্জুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link