কে হবেন ব্রাজিলের নতুন কোচ!

ফেভারিটের তকমা গায়ে জড়িয়ে বিশ্বকাপে হাজির হয়েছিল ব্রাজিল। ছয় বছর ধরে এই দলটিকে নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছিলেন কোচ তিতে। সব কিছু শেষে কাগজে-কলমে শক্তিশালী একটি দল নিয়েই কাতারে পৌঁছেছিলেন ব্রাজিলের সদ্য সাবেক কোচ। তবে শেষ অবধি একরাশ হতাশায় ডুবিয়ে বিদায় নিয়েছে সেলেসাওরা। ক্রোয়েশিয়ার কাছে টাইব্রেকারে হেরে হেক্সা মিশন অপূর্ণই থেকে গেল পাঁচ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের।

থিয়াগো সিলভা, ক্যাসেমিরো, ডানি আলভেজদের মত কিংবদন্তীতুল্য খেলোয়াড়দের শেষটায় হতাশাই সঙ্গী হল তাদের। এই হতাশা আর ব্যর্থতার দায় নিজ কাঁধে নিয়ে কোচের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন তিতে। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে তাঁর কৌশল এবং সিদ্ধান্ত ছিল বেশ প্রশ্নবিদ্ধ। যদিও বিশ্বকাপের আগেই মোটামুটি একটা ধারণা তিনি দিয়ে রেখেছিলেন দায়িত্ব ছেড়ে দেবার। খুব বেশি কালক্ষেপণ না করে কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ শেষ হওয়া মাত্রই নিজের পদত্যাগের ঘোষণা দেন তিতে। এতে করে ব্রাজিল ফুটবল এখন কোচ শূন্য।

এই পরিস্থিতিতে বেশকিছু নাম শোনা যাচ্ছে- যারা কিনা হতে পারেন ব্রাজিলের পরবর্তী কোচ। চিরায়ত নিয়ম মেনে ভিনদেশি কোচের হাতে দলকে তুলে দেওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ। তবুও বেশকিছু ভিনদেশি কোচের নামও যুক্ত হতে শোনা যাচ্ছে সিবিএফ-এর সাথে। তবে পছন্দের শীর্ষে থাকা পাঁচজন কোচ সম্পর্কে একটু আলোকপাত করবার প্রচেষ্টা।

  • অ্যাবেল ফেরেইরা (পর্তুগাল)

অ্যাবেল ফেরেইরা বর্তমানে ব্রাজিলিয়ান ক্লাব পালমেইরাসের কোচের দায়িত্ব পালন করছেন। তবে বিশ্বকাপের আগে থেকেই তিতের উত্তরসূরি হিসেবে তাঁর নামটা প্রবলভাবে শোনা যাচ্ছে। সম্ভবত প্রথা ভেঙে তিনি বনে যেতে পারেন ব্রাজিলের ভিনদেশি কোচ। ক্লাব পর্যায়ে বেশকিছু ক্লাবের সাথে যুক্ত ছিলেন পর্তুগিজ এই কোচ।

তবে সাফল্যের অধিকাংশ সময়টা তিনি কাটিয়েছেন পালমেইরাসের সাথে। ক্লাবটিকে দুইবার কোপা লিবার্তাদোরেস সহ ছয়টি শিরোপা জিতিয়েছেন। ব্রাজিলিয়ান লিগে কাজ করার সুবাদে তিনি সেলেসাওদের ফুটবল দর্শন সম্পর্কেও বেশ অবগত। তাইতো তিনি রয়েছেন সবচেয়ে এগিয়ে।

  • অ্যালেক্সি স্টিভাল কুকা (ব্রাজিল)

সাবেক ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। খেলোয়াড়ী জীবনের মত কোচিং ক্যারিয়ারও তাঁর কেটেছে ব্রাজিলেই। দেশীয় কোচদের মধ্যে তিতের উত্তরসূরি হিসেবে জোরেশোরেই শোনা যাচ্ছে তাঁর নাম।

কোচ হিসেবে ২০১৩ সালে তিনি কোপা লিবার্তাদোরেস ও ২০২১ সালে কোপা দো ব্রাজিল জেতেন। এখন তিনি আছেন ব্রাজিলের ক্লাব অ্যাটলেটিকো মিনেইরোর দায়িত্বে।

  • ফার্নান্দো ডিনিজ (ব্রাজিল)

টিকি-টাকা ফুটবল দর্শন নিজের ভেতর ধারণ করে থাকেন। তাছাড়া বলের দখল রেখে তিনি তাঁর শীর্ষদের খেলাতে বেশ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। তাইতো ব্রাজিলে তিনি প্রসিদ্ধ ব্রাজিলিয়ান পেপ গার্দিওলা নামে। সাও পাওলো, সান্তোস, ফ্লুমিনেস সহ ১৭টি ভিন্ন ক্লাবের ডাগআউটের দখল নিজের কাছে রেখেছিলেন ফার্ন্দানো ডিনিজ।

সাম্প্রতিক সময়ে সাও পাওলোকে ১৭ ম্যাচে অপরাজিত থাকার একটা ধারা অব্যাহত রাখতেও সহয়তা করেছেন ডিনিজ। বর্তমান সময়ের ব্রাজিলিয়ান দলটায় আক্রমণ ভাগে ভরপুর প্রতিভাবান খেলোয়াড় রয়েছে। এই আক্রমণাত্মক দলটাকে হয়ত ভালভাবেই নেতৃত্ব দিতে পারবেন ফার্নান্দো ডিনিজ।

  • রেনাতো গাউচো (ব্রাজিল) 

বর্তমানে চাকরিহীন অবস্থায় রয়েছেন রেনাতো গাউচো। গ্রিমিও এবং ফ্লেমেঙ্গোর মত ক্লাবের কোচের দায়িত্ব পালন করবার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। দলকে নিয়ে কোপা লিবার্তোদোরেস এবং রিকোপা সুদামেরিকানা জেতার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর।

তাঁর এই শিরোপা জয়ের অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই তিনি ব্রাজিল জাতীয় দলের ড্রয়িং বোর্ডে এঁকে বোঝাবেন তাঁর শীর্ষদের। তাছাড়া ব্রাজিলিয়ান নাগরিকত্ব তাঁকে এগিয়ে রাখছে।

  • ডরিভাল জুনিয়র (ব্রাজিল)

সম্ভবত ব্রাজিলিয়ানদের মধ্যে সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি হিসেবে ডরিভাল জুনিয়রের নামটি সামনে আসছে। ২৫টির মত ব্রাজিলিয়ান ক্লাবের সাথে যুক্ত ছিলেন ডরিভাল জুনিয়র। প্রায় প্রতিটা ক্লাবের হয়ে সম্ভাব্য সব ক’টি শিরোপা তিনি জিতেছেন।

তাছাড়া নেইমার ও রবিনহোদের মত খেলোয়াড়দেরও তিনি কোচিং করিয়েছেন সান্তোসে থাকাকালীন সময়ে। অতএব তিনি খুব ভাল করেই জানেন, কি করে প্রতিভাবান তারকা ফুটবলারদের সামাল দিতে হয়। সেদিক বিবেচনায় ডরিভাল জুনিয়র হয়ত বসে যেতে পারেন ব্রাজিলের কোচের আসনে।

  • টমাস টুখেল (জার্মানি)

টমাস টুখেলকে স্যাক করা হয়েছে ইংলিশ ক্লাব চেলসি থেকে। তাই তিনি বর্তমানে রয়েছে বেকার অবস্থানে। জার্মানির বিশ্বকাপ ভরাডুবির পর হ্যান্সি ফ্লিকের পরিবর্তে টমাস টুখেল দায়িত্ব পাওয়ার একটা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিলো। তবে জার্মান ফুটবল কর্তৃপক্ষ এখনই কোচ পরিবর্তনের চিন্তা করছে না। তাই ব্রাজিল খুব সম্ভবত নিজেদের চিরায়ত নিয়ম থেকে বেড়িয়ে এসে টুখেলকে নিয়োগ দিতে পারে। টুখেলের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাছাড়া ইউরোপের প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলের সাথে দারুণভাবে পরিচিত টুখেল।

ব্রাজিলের ইউরোপ জুজু কাটিয়ে ওঠার জন্য টুখেল হতে পারেন যোগ্য মাধ্যম। ব্রাজিলের বর্তমানের আগ্রাসী দলের জন্য, তিনি হতে পারেন এক আশীর্বাদ। তাইতো টুখেলের নামটা জোড়ালো ভাবেই সামনে আসছে। এখন ব্রাজিলিয়ান ফুটবল কনফেডারশন তাদের সংস্কৃতি থেকে বেড়িয়ে দলের সাফল্য়ের কথা চিন্তা করবে নাকি সেটাই দেখবার পালা। এর বাদে আলোচনায় আছেন আর্জেন্টিনার সাবেক কোচ হোর্হে সাম্পাওলিও।

ব্রাজিলিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন (সিবিএফ) আগেই জানিয়েছিল জানুয়ারির আগ পর্যন্ত তারা নতুন কোন কোচকে দায়িত্ব দিবে না। ফলে, বোঝাই যাচ্ছে এবার হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না পাঁচ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link