যখন তিনি স্বরূপে থাকেন, তখনই যেন ব্যাটিং সৌন্দর্য্যের ঠিকঠাক সংজ্ঞায়নের সচিত্র প্রতিচ্ছবি হয়ে ধরা দেয়। লিটন দাসের ব্যাটিং টাই যেন এমন। কভার ড্রাইভ থেকে শুরু কর স্ট্রেইট ড্রাইভ, পুল শট, নান্দনিকতা খুঁজে নেওয়া যায় সব কিছুতেই। বন্দর নগরী চট্টগ্রামের সাগর যখন উথাল পাতাল, তখন লিটন দাসও শুরু করেছিলেন ঝড়। সেই ঝড় একটা সময় থেমেছে। কিন্তু যখন থামালেন, তখন যেন তাঁর প্রস্থান হলো নিঃসঙ্গ নাবিক হয়ে।
কুমিল্লার জার্সি গায়ে এক নিঃসঙ্গ নাবিক হয়ে ভাঙা তরীর হাল ধরে থেকেছিলেন। তাতে দলের জয় দৃষ্টিসীমার মাঝে চলে এসেছিল ঠিকই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর ধরা দেয়নি। সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে তাই আক্ষেপ হয়ে রইল লিটনের ৫৮ বলে ৮৫ রানের ইনিংস। যা স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে এ ব্যাটারের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংস।
লক্ষ্যটা ছিল ১৭৮। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের জন্য যা সহজসাধ্যই ছিল বটে। অন্তত দলে আন্দ্রে রাসেল, জনসন চার্লসদের সংযুক্তিতে এমন লক্ষ্য টপকে যাওয়ার দিকেই চোখ রেখেছিল দলটি। তবে তারকায় খচিত দলটাতে এ দিন যেন ভর করেছিল ব্যর্থতার ছোঁয়া। লিটন বাদে ব্যাট হাতে জ্বলে উঠতে পারেননি কেউ-ই।
তবে একা হাতে লিটনের লড়াইয়ে দৃশ্যায়নটা নিশ্চয়ই ভোলার ছিল না। ইমরুল কায়েসকে নিয়ে ইনিংস শুরু করেছিল। জুটি ভেঙ্গেছিল দ্বিতীয় ওভারেই। এরপর তাওহীদ হৃদয়ের সাথে জুটি গড়েছিলেন। হৃদয় শুরুটাও করেছিলেন দুর্দান্ত। কিন্তু নিজের ইনিংসকে আর দীর্ঘ করতে পারেননি তিনি। এরপরই দলের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন লিটন।
তবে ইনিংসে মাঝের ওভারগুলোতে লাগাম টেনে ধরে সিলেট। জনসন চার্লস-মঈন আলিরা ব্যর্থ হলে রিকোয়ার্ড রান রেট বাড়তে থাকে। লিটন দাস রাসেল চেষ্টা করেছিলেন বটে। কিন্তু সেই সমীকরণ মেলাতে পারেননি। তাই ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলেও শেষ পর্যন্ত হারের তিক্ত স্বাদ নিতে হয় তাঁকে। তবে তানজিম হাসান সাকিবের বলে বোল্ড হওয়ার আগে এ ব্যাটারই প্রতিপক্ষের জন্য গোটা ইনিংসে দুর্ভেদ্য দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
৮৫ রানের ইনিংস খেলার পথে লিটন হাঁকিয়েছেন ৭ টা চার ও ৩ টা ছক্কা। ক্যারিয়ারে এর চেয়েও বিধ্বংসী ইনিংস হয়তো তিনি খেলেছেন। তবে ১৪০ স্ট্রাইকরেটে খেলা এই ইনিংসটাই এখন তাঁর ক্যারিয়ার সেরা। লিটন নিশ্চয়ই খুব শীঘ্রই এই ইনিংসকে ছাপিয়ে যেতে চাইবেন। একই সাথে, নিজেকে ‘ছাপিয়ে’ যাওয়ার দিনেই হতে চাইবেন ম্যাচজয়ীদের একজন।