লিঁওময় গল টেস্ট

উপমহাদেশের উইকেট স্পিন সহায়ক হবে সেটাই স্বাভাবিক। যদিও ভারত-পাকিস্তানে পেসারদের দাপটও দেখা যায়। তবে শ্রীলঙ্কার ডেরায় স্পিনারদের আধিপত্যই দেখা গেছে যুগ যুগ ধরে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের আগেই ভাল কিছু করার প্রত্যাশা ছিল অজি স্পিনার নাথান লিঁওর। তাসমান পাড়ে অজিদের ডেরায় যেখানে শত শত উইকেট নিজের নামে করেছেন – সেখানে লঙ্কানদের ডেরায় লিওর বলে দারুণ কিছু দেখার অপেক্ষায় ছিল ক্রিকেটপ্রেমীরা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টেস্টেই প্রথম দেখা গেল লিঁওর ভেলকি।

লিঁওর ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা মূহুর্তের সাক্ষী গল। ১১ বছর আগে এই গলেই টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক হয় এই তারকার। সেসময় শক্তিশালী শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অভিষেকেই শিকার করেছিলেন মাত্র ৩৪ রানে ৫ উইকেট। তরুণ লিঁওর দাপটে সেদিন সাঙ্গাকারা, ম্যাথুসরা দাঁড়াতেই পারেননি প্রথম ইনিংসে। অভিষেকেই শিকার করেছিলেন দুর্দান্ত এক ফাইফর।

সেই যে শুরু, এরপর এগারো বছরে তিনি বনে গেছে সাদা পোশাকে এ যুগের অন্যতম সেরা স্পিনার। নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য এক উচ্চতায়। টেস্ট ইতিহাসে ষষ্ঠ সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী তিনি। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হিসেবে টেস্টে দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন লিঁও।

সেই পুরনো রূপে যেন আবারও দেখা। ভেন্যু সেই গল, পারফরম্যান্সও আগের মতই দুর্দান্ত। ব্যবধানটা এগারো বছর। কিন্তু লিঁওর হাতের জাদু যেন পাল্টায়নি। সেই টার্ন আর বাউন্সটা এখনও আছে। বরং আগের চেয়ে সবকিছুতেই এখন তিনি বড্ড পরিপাটি। গল টেস্টের প্রথম দিনেই পিচে ভাঙন ধরেছে। তীক্ষ্ণ টার্নও ছিল স্পষ্ট। লিঁও সহ বাকি স্পিনারদের জন্য তো পোয়াবারো। সেই ফায়দা পুরোপুরি লুটে নেন লিঁও ও মিশেল সোয়েপসন। এই দুই তারকার টার্নের সামনে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি লঙ্কানরা।

লিঁওর দাপটে প্রথম টেস্টের প্রথম দিনেই গুড়িয়ে গেছে লঙ্কানদের প্রথম ইনিংস। অজি স্পিনারদের জাদুকরী স্পেলে প্রথম দিনেই মুখ থুবড়ে পড়ে লঙ্কান শিবির। ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বার গলে খেলতে নেমে তুলে নিয়েছেন পাঁচ উইকেট। ৯০ রানে শিকার করেন ফাইফর। সেই ধারাটা দ্বিতীয় ইনিংসেও ধরে রাখেন এই তারকা। লঙ্কানদের অল্প রানে বেঁধে ফেলতে শিকার করেন ৪ উইকেট। অল্পের জন্য অবশ্য দশ উইকেটের দেখা মিলেনি এই অজি তারকার।

ক্যারিয়ারে মোট পাঁচ উইকেট শিকার করেছেন বিশবার। এর বিশবার ফাইফরের নয়বার শিকার করেছেন এশিয়ার মাটিতে। এশিয়ার বাইরের ক্রিকেটার হিসেবে সবচেয়ে বেশি পাঁচ উইকেটশিকারির তালিকায় শেন ওয়ার্নের পাশে শীর্ষে নাম লিখিয়েছেন লিও। এশিয়ার মাটিতে ২২ টেস্টে ৯ বার পাঁচ উইকেট শিকার করেন ওয়ার্ন।

টেস্ট ক্রিকেটে এখন অবধি শিকার করেছেন ৪৩২ উইকেট। টেস্ট ইতিহাসে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারির তালিকায় রিচার্ড হ্যাডলিকে সরিয়ে ছয় নম্বরে অবস্থান করছেন এই অজি তারকা।

লঙ্কানদের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৯০ রানে ৫ উইকেট নেওয়ার পথে গড়েছেন আরও এক রেকর্ড। ক্যারিয়ারে ২০ ইনিংসে নিয়েছেন ফাইফর। এক ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সর্বোচ্চ পাঁচ উইকেট শিকারের তালিকায় তিনি আছেন চারে। ৩৭ বার পাঁচ উইকেট নিয়ে শীর্ষে আছেন প্রয়াত কিংবদন্তি অজি তারকা শেন ওয়ার্ন।

গল টেস্ট দিয়ে সাদা পোশাকের পথচলা। সেই গলে এখনও অব্যহত লিঁও দাপট। এই ছুঁটে চলা অব্যহত থাকুক। নিজেকে নিয়ে যাক উইকেটশিকারি অনন্য কোনো চূড়ায়। এগারো বছরের ক্যারিয়ারে তরুণ সম্ভাবনাময় তারকা থেকে সাদা পোশাকে অস্ট্রেলিয়ার বড় ভরসা নাথান লিঁও। লঙ্কান ডেরায়ও গল টেস্টটা যেন শুধু লিঁওময়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link