অপেক্ষার প্রহরটা অবশেষে শেষ হলো মাবিয়ার আক্তার সীমান্ত’র। তবে সেটি তার জন্য হয়ে রইল হতাশা আর কষ্টের। চেষ্টা করেও অলিম্পিকে অংশগ্রহনের জন্য নিজেকে প্রমাণ করতে পারেননি। টোকিও অলিম্পিকে অংশগ্রহনের জন্য সব ধরনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেও ওয়াইল্ড কার্ড না পাওয়ায় আপাতত জাপানে যাওয়া হচ্ছেনা। আরও একবারের মতো হতাশা নিয়েই থাকতে হচ্ছে দেশসেরা এই ভারোত্তোলককে।
তাঁর এই অপেক্ষাটা ছিল এক মাসেরও বেশি সময় ধরে। সম্প্রতি খেলোয়াড় এন্ট্রির সময়সীমা শেষ হলে পরিস্কার হয়ে যায় সবকিছু। কারণ এই সময়ের মধ্যে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির (আইওসি) কাছ থেকে নাম আসেনি সীমান্ত’র। সে কারণে আরো একবারের মতো হতাশা নিয়ে ২০২৪ সালের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তবে সে সময় পর্যন্ত তিনি বর্তমানের মতো ফর্মে থাকবেন কিনা সেই সংশয়ও রয়েছে। তবে পারফরম্যান্সের গ্রাফটা উন্নতির দিতে থাকলেও ঠিক কি কারণে সীমান্তকে ওয়াইল্ড কার্ড দেওয়া হয়নি বিষয়টি পরিস্কার নয়। কারণ বাংলাদেশ ভারোত্তোলন ফেডারেশনের সহ সভাপতি উইং কামান্ডার (অব.) মহিউদ্দিন আহমেদ শুরু থেকেই বিষয়টি নিয়ে আইওসির সাথে দেন দরবার করে আসছিলেন।
কারণ তিনি নিজেও অলিম্পিকে যাচ্ছেন বিচারক হিসেবে। সে হিসেবে কিভাবে অলিম্পিকে একজন খেলোয়াড় কোয়ালিফাই করবেন সেটি তার নখদর্পনে। তিনি নিজেও এখন পর্যন্ত অন্ধাকারেই রয়েছেন বলে জানা গেছে। পারফরম্যান্স বিবেচনায় সীমান্ত’র ওয়াইল্ড কার্ড না পাওয়াটা তাই দুঃখজনকই মনে হচ্ছে।
অলিম্পিকে যেতে না পারার বিষয়টিকে চরম হতাশাজনক বলছেন মাবিয়া আক্তার সীমান্ত, ’অলিম্পিকে খেলার আশায় নিজেকে করোনা ও লকডাউনের মধ্যে পুরোপুরি প্রস্তুত রেখেছিলাম। ফেডারেশনও আমার হয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টাটাই করেছে। কিন্তু ভাগ্য খারাপ বলেই হয়তো টোকিও যাওয়া হচ্ছেনা’।
শেষদিনে ভারত্তোলনে ১০ টি ওয়াইল্ড কার্ডের নিষ্পত্তি হয়েছে। ফেডারেশনের সহ সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তিনটি নিয়েছে স্বাগতিক জাপান বাকি সাতটার জন্য বিশের অধিক দেশ প্রতিদ্বন্ধিতা করেছে। অলিম্পিকে অংশগ্রহনের স্বপ্ন দেখার পর থেকে আসলেই নানা সংকটের মুখোমুখি হয়েছেন সীমান্ত। এর আগে ২০১৪ যুব অলিম্পিকের আসরে সীমান্ত’র যাওয়ার কথা ছিল। সেখানে তার বদলে আরেক জন গেল। ২০১৬ সালের রিও অলিম্পিকের সময় সেরা ফর্মে থাকার পরও যেতে পারেননি তিনি। সে সময় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ও ভারোত্তোলন ফেডারেশনের দ্বন্ধের কথা সবারই জানা ছিল। সেই সমস্যার সাথে এবার যোগ হয়েছে করোনা ভাইরাস।
মাবিয়া আক্তার সীমান্ত’র জন্য টানা দুটি আসরে বড় দুটি সমস্যা সামনে চলে আসায় হতাশাটা বেড়েছে। তার ক্ষেতেও বারবারই এমনটি হওয়ায় কষ্ট পাওয়া ছাড়া আর কিছুই করার নেই তার। এদিকে সাঁতার, অ্যাথলেটিকস, শুটিংয়ের তুলনায় ভারোত্তোলনের ওয়াইল্ড কার্ড বেশ কষ্টসাধ্য বলেই মনে হচ্ছে। কারণ হিসেবে সীমান্তর মনে হয়েছে বিষয়টি, ‘একজন ভারোত্তোলক হিসেবে ওয়াইল্ড কার্ড দেবার ক্ষেত্রে অনেক কিছু বিবেচনা করে। জোন, ক্যাটাগরি, র্যাংকিংসহ অনেক কিছু। অন্য ডিসিপ্লিনগুলোর ক্ষেত্রে বিষয়টি এতটা কড়াকড়ি থাকেনা। ফেডারেশন চাইলে যে কাউকে ওয়াইল্ড কার্ড দিয়ে দিতে পারে। সত্যি কথা বলতে আমার ভাগ্যটাই খারাপ।’
এখন মানসিকভাবে বেশ কষ্টে রয়েছেন সীমান্ত। মনকে যে কোনভাবেই বোঝাতে পারছেন না। কাছের মানুষরা সান্তনা দিচ্ছেন এই বলে যে, বয়স ও পারফরম্যান্স ধরে রাখতে পারলে ২০২৪ অলিম্পিকে খেলার সুযোগ আসতে পারে তার জন্য। কিন্তু সীমান্ত যেন কিছুই শান্ত থাকতে পারছেন না। অলিম্পিকে যেতে না পারার হতাশাটা তার মধ্যে প্রবলভাবে কাজ করছে। টোকিও অলিম্পিকে খেলতে না পারায় ভারত্তোলনেও কিছুটা আগ্রহ হারাচ্ছেন সীমান্ত। তবে জাপানে যাওয়াদের জন্য শুভকামনা জানিয়েছেন তিনি।
টানা দুটি দক্ষিন এশিয়ান গেমসের স্বর্ণ জিতে নিজেকে প্রমাণও করছিলেন। জাপানে যেতে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (বিওএ) থেকে টিকিও নিশ্চিত করা হয়েছিল। এর আগে দুটি এসএ গেমসে সোনার পদক গলায় পড়ার সময় কেদেঁছিলেন, আর এবার কাদঁলেন অলিম্পিকে যেতে না পারার কষ্টে। রোমান সানা সরাসরি যেতে পারলেও দিয়া সিদ্দিকী, আবদুল্লাহ হেল বাকী, জহির রায়হান, আরিফুল ইসলাম ও জুনাইনা আহমেদ যাচ্ছেন ওয়াইল্ড কার্ড নিয়ে।
সীমান্ত’র ওয়াইল্ড না পাওয়ার বিষয়ে বিওএ মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা বলেছেন, ‘আমরা মাবিয়ার ওয়াইল্ড কার্ডের সর্বোচ্চ চেষ্টা করার পাশাপাশি শেষ পর্যন্ত অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আইওসি যেহেতু আমাদের কোনও নিশ্চয়তা দেয়নি, তাই আমরাও আর মাবিয়াকে অলিম্পিকে খেলা নিয়ে কোনও সম্ভাবনা দেখছি না।’ বছরে পাচেঁক আগে ফেডারেশনের দ্বন্ধের কারণে যেতে না পারায় খুব বেশি কষ্ট পাননি। এবার তো স্বপ্নেও ভাবেননি অলিম্পিকে যেতে না পারার বিষয়টি।
এদিকে গত জুন মাসে আন্তর্জাতিক ভারোত্তলন ফেডারেশন (আইডবি¬উএফ) টোকিও অলিম্পিকের ওয়াইল্ড কার্ডের আবেদনের যে তালিকা আইওসিকে পাঠিয়েছিল, সেখানে অবশ্য নাম ছিল মাবিয়া আক্তার সীমান্ত’র। ওই তালিকায় ২৮ জন ভারোত্তোলকের মধ্যে এশিয়ার ৪ জন ছিলেন। ওয়াইল্ড কার্ড দেওয়ার আগে নিয়ম করে বেশ কিছু শর্ত বিবেচনা করে আইওসি।
যার মধ্যে প্রথমত, ওই ভারোত্তোলকের ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ, এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ ও অলিম্পিকের বাছাইপর্ব অংশ নিতে হবে। এর বাইরে ওই সব প্রতিযোগিতায় সংশি¬ষ্ট ভারোত্তোলকের পারফরম্যান্সের গ্রাফে উন্নতি আছে কি না, এসবও বিবেচনায় নিয়েছে আইওসি। শর্তগুলোর সবই সীমান্ত’র পক্ষে থাকলেও শেষ পর্যন্ত অলিম্পিকের টিকিট মেলেনি।