মাঠে-ময়দানে কোথাও নেই মাহি

ছোট শহরগুলোর একটা পরিচয় আছে। সেখানে মেট্রো নেই। পথে হাঁটা আছে। বাইকে চুল উড়িয়ে ইমপ্রেস করা আছে। নকল প্রেমের দেখনদারি নেই। এই ছোট ছোট শহর থেকে বড় স্বপ্ন দেখার অনেক বাঁধা আছে। পরিবার, বন্ধুবান্ধব – সবখানেই একটা সীমার পর যেন স্বপ্ন দেখা বারণ।

মানে আপনি রাতে শুয়ে মাধুরী দীক্ষিতকে বিয়ের পিঁড়িতে নিজের পাশে বসে থাকতে দেখতে পারেন না। পরিস্থিতি বারণ করেছে। সেরকমই একটা ছোট শহরে বসে থাকা এক সদ্য কিশোর কিন্তু সে বারণটা শোনেনি। দেখতে বারণ করা একটা স্বপ্ন সে দেখতে শুরু করেছিল। শচীন টেন্ডুলকার হবে। নীল জার্সি পরবে।

অলীক স্বপ্ন। দুঃসাধ্য। কিন্তু অসম্ভব নয়। জার্নিটা কঠিন। কিন্তু এফর্ট দিলে পৃথিবীতে সব ঘটবে। রাঁচির এই ছেলেটির বিশ্বাস ছিল। পরে দেশশুদ্ধ গোটা বিশ্ব যাকে চিনবে মহেন্দ্র সিং ধোনি নামে। ফিনিশার নামে। ছোট শহরের এক নওজওয়ান, যে দিন বদলের স্বপ্ন দেখায়। স্মিত হাসি হেসে।

২০০৩-২০২০। সতেরো বছর কেটে গেছে। লম্বা চুল ছোট হয়েছে। পাড়ার ছেলেরা এখন চাপদাড়ি রাখে আর দু’পাশে চুল ছেঁটে দেয়। সেই দাড়িতে এখন পাক ধরেছে। আমরা ভুলতে বসেছি। অস্ট্রেলিয়া সিরিজ দেখেও ভুলতে বসেছি। আলোচনায় বসেছি কাকে খেলানো উচিত।

ঋদ্ধি-পান্তের কচকচানিতে মনেই রাখিনি, আমরা এমন একটা ভারতবর্ষ দেখেছি যেখানে উইকেট কিপিং নিয়ে আলোচনা তো দূর প্রশ্নই উঠত না। মানছি, অনেকে সুযোগ পায়নি। যোগ্য হয়েও। তবু ধোনিকে উইকেট কিপার হিসেবে এসবে টানা যাচ্ছে না। সেখানে কয়েক যোজন মাইল এগিয়ে বসে রয়েছেন মাহি। অনেকের থেকে এগিয়ে। একা। ঠিক যেমন বাড়ির কুকুরদের সাথে খেলছেন এখন, একা।

চোখে জল চলে আসে এখন। এসব ভাবলেই। আমরা একখানা ভারত দেখেছিলাম বটে। লড়াকু বাঙালি তো দেখেইছি। ঐশ্বরিক মারাঠি আর শান্ত, স্থিতধী কর্ণাটকি দেখেছি। এমন হায়দ্রাবাদি দেখেছি যাকে ব্যাট না আঁকার তুলি দেওয়া হয়েছে বোঝা দায়।

কিন্তু, একটা জিনিস আমার মনে হয়, একটু ইউনিক। সেটা হল ধোনি। ভদ্রলোকের বহু দোষ রয়েছে। এমনকি একধাপ এগিয়ে আমিও গম্ভীরের মতোই মন্তব্য করব। ভদ্রলোকের একটি স্বভাব ছিল, যিনি ক্রিমটি খেতে বড় পছন্দ করতেন। তা সত্বেও একটি জিনিস এড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। যার নাম সময়।

শুরু করেছিলাম ২০০৩-২০২০ দিয়ে। ব্যাক টু দ্য পয়েন্ট। মাঝে কেটেছে ১৭টা বছর। আর এই ১৭ টা বছরের মাঝে একটাই নাম, যে কখনও টিম থেকে বাদ যায়নি। অথচ টিমের বহু কাজেও লেগেছে। এবং এই সতেরোটি বছরের মধ্যে ৯ বছর ভদ্রলোক ভারতের অধিনায়ক।

একটা স্বপ্নের স্কোয়াড ছিল আমাদের। তেজী অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলির নেতৃত্বে। যারা লড়তে জানত। আরেকটা স্বপ্নের স্কোয়াড তৈরী হচ্ছে আরেক তেজী অধিনায়ক বিরাট কোহলির নেতৃত্বে। যারা লড়তেও জানে বুক চিতিয়ে। এর মাঝে রয়েছে শুধু অমলিন হাসিটা। আর উইকেটের পিছনে থেকে যাওয়া কিছু স্মৃতি, কিছু সংলাপ, কিছু প্রলাপ।

লড়াকু দল আগেও ছিল। এখনও আছে। শুধু মাঝখান থেকে ১৭টা বছর সুনীতি-দুর্নীতি সমেত সার্ভিস দিয়ে ছোট শহরগুলোকে বড় স্বপ্ন দেখার জমি তৈরী করে দিয়ে বাড়ির কুকুরদের সাথে খেলতে চলে গেলেন মাহি। মাঠে-ময়দানে কোথাও তিনি নেই। অন্তরালে মাহি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link