‘নস্টালজিয়া’ জুড়ে মাশরাফির বসবাস

ঘোর অন্ধকার। ইতিহাসের অন্যতম বাজে সময়ের মধ্যেই দিয়েই হয়ত যাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট। আর ঠিক এই সময়ে এসে আবারও যেন পেছন ফিরে তাকাচ্ছে সবাই। ফেলে আসা দিনগুলো থেকে খুঁজে নিচ্ছে আনন্দের মুহূর্তগুলো। এখানেই আবার শুরু হয়েছে নতুন বিবাদ।

বাংলাদেশের ফেলে আসা সুন্দর দিনগুলোর একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। তার অধীনেই সফলতার সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে শুরু করেছিল বাংলাদেশ দল। ঠিক তখন থেকেই বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন একটু একটু করে বুনতে শুরু করেছিল সমর্থকেরা। তাইতো বাংলাদেশের দুর্দিনে মাশরাফিকে আবারও প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন সকলে।

সেখানেই মূলত বিভক্তির উৎপত্তি। ভিন্ন মতের প্রসারও ঘটেছে সর্বত্র। কেউ কেউ মনে করছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা স্রেফ আবেগ পুঁজি করে নিজের একটা জায়গা বানিয়েছিলেন। দুই হাঁটুর সাত অস্ত্রপচার নিয়ে তিনি হয়েছিলেন দলের বোঝা। আসলেই কি বিষয়টি তেমন? মাশরাফি কি আদোতে কিছুই করেননি?

উত্তরটা হচ্ছে, তিনি আলবৎ করেছেন। দলের হয়ে হয়ত চোখ ধাঁধানো কোন পারফরমেন্স তিনি নিয়ম করে দিতে পারেননি। কিন্তু দলকে একটা দল হিসেবে খেলাতে পেরেছিলেন। এমনকি সাদা বলের ক্রিকেট ইতিহাসে তিনিই বাংলাদেশের সফলতম অধিনায়ক।

ওয়ানডেতে তার অধীনেই সর্বাধিক ম্যাচ জয়ের রেকর্ড রয়েছে বাংলাদেশের। ৫০টি ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ ৮৮ ম্যাচের মধ্যে। প্রায় ৫৬ শতাংশ ম্যাচে জয়ের দেখা পেয়েছে টাইগাররা। এখানে হয়ত নিন্দুকেরা খর্বশক্তির দলের তথ্য টেনে নিয়ে আসতে চাইবেন, মাশরাফির সফলতাকে খাটো করে দেখবার জন্য।

তবে মাশরাফির নেতৃত্বে বাংলাদেশ দল খেলেছিল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে। সেখানে নিশ্চয়ই খর্ব শক্তির দলের বিপক্ষে লড়েনি বাংলাদেশ। তাছাড়া মাশরাফি ওয়ানডে বিশ্বকাপের কোয়াটারফাইনালের পথ দেখিয়েছিলেন টাইগারদের। সে পথটাও নিশ্চয়ই সোজা নয়।

সেটুকুই সম্ভবত সফলতার শেষ নয়। দুই দুই বার বাংলাদেশ দল খেলেছে এশিয়া কাপের ফাইনাল। যদিও শিরোপা থেকে গেছে অধরা। ওয়ানডে ফরম্যাটে পাকিস্তানের কাছে হারতে হয়েছিল ২ রানের ব্যবধানে। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের এশিয়া কাপে ভারত হারিয়েছিল আট উইকেটের ব্যবধানে।

বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রেক্ষাপটে সে সবকে এড়িয়ে যাওয়া কি আদোতে সম্ভব? কোনভাবেই হয়ত সম্ভব না। টি-টোয়েন্টিতে যেই দুর্দশা, সেখানেও সফলতায় মাশরাফি ছিলেন উপরের দিকেই। ৩৫.৭১ শতাংশ ম্যাচ জিতেছিল বাংলাদেশ।

তাই তো মাশরাফিকে ঘিরে নস্টালজিয়া হওয়া মোটেও অমূলক নয়। মাশরাফি সত্যিকার অর্থেই এক সুতোয় গেঁথে রেখেছিলেন দলকে। তার আমলে দলের অন্দরমহলে কলহ থাকলেও তা প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। গেল বছর জুনে তামিম অবসর নেওয়ার পরও বিসিবির সাথে মধ্যস্থতা করেছেন মাশরাফি। ঠিক তেমনি করে দলের অধিনায়ক থাকাকালীন দ্বন্দ্বের সমাপ্তি ঘটিয়েছিলেন।

অধিনায়ক মাশরাফির আমলে একসাথে বসে চুটিয়ে আড্ডা দিয়েছেন দলের খেলোয়াড়রা। নাচ, গানের আসরও বসত নিয়ম করে। দলের ভেতরকার বন্ধন ছিল প্রয়োজনের থেকেও ভাল। তাইতো অসাধ্য সাধনের দিকেই ছিল সকলের নজর।

এখন তো নাকি ড্রেসিংরুমে ঠিকঠাক কথাও বলেন না খেলোয়াড়রা। দিনশেষে দলগত খেলা ক্রিকেটে সৌহাদ্য আর মেলবন্ধন না থাকলে ম্যাচ জেতা যায় না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link