চোখের পলকে এক অগ্নিগোলক চলে গেল। গিয়ে জমা পড়লো উইকেটরক্ষকের দস্তানায়। কপালের কার্নিশ ঘেসে এক ফোঁটা ঘাম মাটি ছুঁয়ে নিলো। ঠিক এতটাই ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারেন একজন পেস বোলার। ক্রিকেটের একেবারে শুরুর লগ্ন থেকেই পেসারদের পদচারণায় মুখর বাইশ গজ। সেই ধারার তিন যুগের তিন বাহক ছিলেন কার্টলি অ্যামব্রোস, মাশরাফি বিন মর্তুজা ও তাসকিন আহমেদ।
তিন জন ভিন্ন সময়ের, ভিন্ন দেশের। তবে মেলবন্ধনের জায়গাটা সেই পেস বোলিং। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ক্রিকেট মাঠে ত্রাসের সৃষ্টি করেছিলেন কার্টিলি অ্যামব্রোস। বাইশ গজকে রণক্ষেত্রে পরিণত করবার সকল অস্ত্রই ছিল তাঁর ঝুলিতে। আগুন ঝড়ানো সেই বোলিং মাশরাফি সামনে দেখেছিলেন।সেই অভিব্যক্তি প্রকাশের সুযোগ হাতছাড়া করেননি তিনি।
এবারের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের ধারাভাষ্যকার হিসেবে এসেছেন কিংবদন্তি ক্যারিবিয়ান পেসার। তাঁর মত কিংবদন্তির সান্নিধ্য পাওয়ার সুযোগ সব সময় মেলে না। সেই সুযোগটা এবার কাজে লাগালেন মাশরাফি ও তাসকিন। অবশ্য মাশরাফির সোনালী দিনগুলো এখন অতীত। তিনি অবশ্য শেখার সুযোগ করে দিতে চাইলেন তাসকিন আহমেদকে।
নিজেকে আমুল বদলে ফেলেছেন তাসকিন আহমেদ। অভিষেকের লগ্ন থেকেই তাঁকে নিজের ছোট ভাইয়ের মত করে আগলে রাখেন মাশরাফি। সেই তাসকিন নিজের ভুল সংশোধন করে আরও মশগুল নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে। সেই তাসকিনকে ডেকে নিয়ে আড্ডা শুরু করে দিলেন মাশরাফি। নানান রকমের বিষয় নিয়ে আলোচনা হল। তবে সেই আলোচনার প্রধান বিষয় তাসকিন আহমেদ।
মিরপুর হোম অব ক্রিকেটে তাসকিন আহমেদ নিজের অশ্রুজলে ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছেন। তিনি সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে ফিরে এসেছেন। তবে তিনি এখনই বনে যাননি বিশ্বসেরা। সেই টোটকাই যেন নেওয়ার প্রচেষ্টা। মাশরাফি তাঁকে সেই ফ্লোরটা করে দিলেন, একটা সময় বিশ্ব ক্রিকেটে আতংক সৃষ্টি করা বোলারের সাথে কথা বলবার।
মাশরাফিই পরিচয় করিয়ে দিলেন তাসকিনকে। তিনি অ্যামব্রোসকে জানালেন বিগত কয়েক বছরে ঠিক কতটা বদলে ফেলেছেন তাসকিন নিজেকে। বিশ্বের নানানপ্রান্তে তাসকিন নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ রাখতে শুরু করেছেন। সে সব বিষয়ে আলোকপাত করেন মাশরাফি। এরপরই কার্টলি বলে বসেন, ‘সেরা ক্রিকেটার হতে হলে তোমাকে অবশ্যই যেকোন কন্ডিশনে টিকে থাকতে হবে এবং সারাবিশ্বেই পারফর্ম করতে হবে।’
মনযোগী ছাত্রের মত সেই সব কথা শুনে মাথায় গেঁথে নিলেন। তাসকিন প্রতি উত্তরে নিজের প্রক্রিয়ার কথাই জানান। তাছাড়া অ্যামব্রোসকে বলেন যে তিনি মাশরাফির কাছ থেকে কাটারটা শেখার চেষ্টাও করছেন। ঠিক তখনই মাশরাফি বলে উঠলেন, ‘ও এখন ১৪৫ এ বোলিং করছে। নিয়মিত ১৪৪,১৪৫ এ বল করে যাচ্ছে।’
অ্যামব্রোস মনে করিয়ে দেন সেসব তাসকিন করছে স্লো উইকেটে। পরক্ষণে অ্যামব্রোস আশা ব্যক্ত করেই বলে ওঠেন, ‘তার মানে ও যদি ভাল উইকেট পায় তবে সে আরও দ্রুতগতিতে বল করতে পারবে। সেই সাথে যদি বৈচিত্র্য থাকে তবে তো আরো ভাল।’
ঠিক এমন আলোচনায় মত্ত হয়ে ওঠেন তিন প্রজন্মের তিন গতি তারকা। তবে কার্টলি অ্যামব্রোস মনে করিয়ে দেন যে ফিটনেস ধরে রাখাটা প্রয়োজন। তবে একজন পেসার হতে হলে তাঁর সুদর্শন পেশির থেকে শক্তিশালী পেশি প্রয়োজন। বিশেষ করে পায়ের পেশির শক্তি নির্ধারণ করে দেবে বোলারের ভবিষ্যৎ।
তখন মাশরাফি অ্যামব্রোসের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘তুমি কি জানো আমি ওকে কি উপদেশ দিয়েছি? মাসল গিভস ইউ লেডি, লেগস গিভ ইউ মানি। চয়েজ ইজ ইয়োর্স।’ আলাপ আলোচনার অধিকাংশ জুড়েই ছিলেন তাসকিন।
তবে, মাশরাফি আলোচনার এক ফাঁকে নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন মাশরাফি। ধারাভাষ্যকার হয়ে ক্রিকেটের সাথেই যুক্ত থাকার পরিকল্পনা করছেন বাংলাদেশের সফলতম অধিনায়ক। সেই উদ্দেশ্যে নিজের ইংরেজি উচ্চারণ আর দক্ষতার উপর কাজও শুরু করে দিয়েছেন মাশরাফি।
এভাবেই আড্ডায় মজেছিলেন তিন গতি তারকা। হাস্যজ্জ্বল এক মুহূর্তে সুযোগটা করে দিয়েছে এবারের বিপিএল। ঠিক এই কারণেই বিশ্বব্যাপী ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। অব্যবস্থাপনার সকল কালো অধ্যায় থেকে বেড়িয়ে আসতে নিশ্চয়ই চাইবে বিপিএল। আরও এমন কিংবদন্তিদের কাছ থেকে শেখার সুযোগ করে দেবে দেশের তরুণদের।