পাল্লেকেলে স্টেডিয়াম। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের স্মৃতির পাতায় স্মরণীয় এক ইনিংসের সাক্ষী এই পাল্লেকেলে। ২০১৬ সালে এই মাঠেই দেখা পেয়েছিলেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে মেইডেন সেঞ্চুরির। পাল্লকেলেতে ঝড়, বৃষ্টির দেখা প্রায়ই মিলে। কিন্তু, সেদিন ব্যাট হাতে ঝড় তুলে সব লণ্ডভণ্ড করে দেন ম্যাক্সি। ৬৫ বলে ১৪৫ রানের বিধ্বংসী ইনিংসে লঙ্কানদের একাই মাত দিয়েছিলেন এই অজি তারকা।
প্রায় ছয় বছর পর এই পাল্লেকেলেতে খেললেন আরও এক ঝড়ো ইনিংস। এদিন অবশ্য বাগড়া বাঁধিয়েছিল বৃষ্টি। কিন্তু ম্যাক্সওয়েল ঝড়ের কাছে পাত্তা পায়নি কিছু। পাল্লেকেলে অধ্যায়ের পাতায় স্মরণীয় করে রাখলেন আরও এক ম্যাচজয়ী ইনিংসের। তবে, জয়মাল্যটা এবার রঙিন পোশাকের আরেক ফরম্যাটে।
৩০০ রানের বিশাল লক্ষ্যমাত্রা। এই রান টপকাতে হলে গড়তে হবে রেকর্ড। শ্রীলঙ্কার মাটিতে সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড করে জয় পেতে হবে অজিদের। একে তো বিশাল লক্ষ্যমাত্রা এর মধ্যে পাল্লেকেলেতে বৃষ্টি। ঘন্টা দেড়েকের মত বৃষ্টি, কার্টেল ওভার গড়ালো ম্যাচ। অজিদের জন্য নতুন লক্ষ্যমাত্রা ৪৪ ওভারে ২৮২। ‘কার্টেল ওভার’ লঙ্কানদের জন্য হয়ে গেল পোয়াবারো। চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে একটা সময় জয়ের সুভাস পাচ্ছিল অজিরা। হাতছানি ছিল রেকর্ড গড়ে জয়ের।
এরপরই হাসারাঙ্গা ম্যাজিকে বদলে গেল ম্যাচের চিত্র। চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে অজিরা। জয়ের সম্ভাবনা তখন একেবারেই ক্ষীন। স্বীকৃত ব্যাটার বলতে স্রেফ ম্যাক্সওয়েল। হ্যাঁ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। এই একটা নামই যথেষ্ট প্রতিপক্ষকে ধসিয়ে দিতে। সেটাই তিনি করে দেখিয়েছেন আরও একবার। পাল্লেকেলেতে ব্যাট হাতে তাণ্ডব চালিয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে রেকর্ড রান তাড়া করতে অস্ট্রেলিয়াকে শ্বাসরুদ্ধকর এক জয় এনে দিয়েছেন ম্যাক্সওয়েল।
কথায় আছে, ‘কপাল বিগুণ যার কপালে আগুন তার।’ ভাগ্য খারাপ থাকলে আসলে কোনো কিছুতেই সুফল আসে না। লঙ্কানদের ক্ষেত্রেও তাই। বৃষ্টি কিংবা হাসারাঙ্গার অসাধারণ এক স্পেল – কোনো কিছুই ফলাফল পক্ষে আনতে পারেনি লঙ্কানদের।
অনেকটা অসম্ভব, কঠিন এক পথ। তবে, ম্যাক্সওয়েলদের জন্য সব সম্ভব। অপরপ্রান্তে কে আছেন, প্রতিপক্ষ কে, বোলার কে, এসবের তোয়াক্কা কবেই বা করেছেন ম্যাক্সওয়েল? সুযোগ পেলেই নিজের আগ্রাসী রূপটা দেখাতে মোটেও কার্পণ্য করেন না তিনি। ব্যাট হাতে সব অসম্ভবকে সম্ভব করার মত সামর্থ্য তার আছে, আগেও করে দেখিয়েছেন।
২৩০ রানে তখন ৭ উইকেট। ৮ ওভারে প্রয়োজন ৫২ রানের। একপ্রান্তে অ্যাশটন অ্যাগার, আরেকপ্রান্তে ম্যাক্সওয়েল। এরপরই শুরু পালটা আক্রমণ। সেখান থেকে শেষ ৩ ওভারে ২৩ রান, হাতে ২ উইকেট। এরপর ৯ বল বাকি থাকতেই অজিরা জয়ের বন্দরে! দুনিথ ওয়েলাগে ও হাসারাঙ্গার উপর দাপট দেখিয়ে ম্যাক্সওয়েলের তাণ্ডব। ৫১ বলে ৬ ছক্কা ও ৬ চারে ৮০ রানের ঝড়ো এক ইনিংস। পাল্লেকেলেতে লঙ্কানদের স্বপ্ন গুড়িয়ে জয়ের নায়ক ম্যাক্সওয়েল। ৫২ রানের ৪৮ রান একাই নিলেন ম্যাক্সি!
সবশেষ ওয়ানডে খেলেছিলেন ২০২০ সালের ডিসেম্বরে। এরপর প্রায় দেড় বছর এই ফরম্যাটে পা মাড়াননি ম্যাক্সওয়েল। ভারতের বিপক্ষে খেলা সবশেষ সিরিজে ঘরের মাটিতে তিনি ব্যাট হাতে তাণ্ডব চালিয়েছিলেন। সবশেষ ৭ ওয়ানডেতে ১৪৭ স্ট্রাইক রেট আর ৮৬ গড়ে করেছেন ৪৩৩ রান, আছে ৪ ফিফটি ও ১ সেঞ্চুরি।
ব্যাট হাতে ছিলেন উড়ন্ত ফর্মে। সেই ফর্ম টেনে আনলেন ওয়ানডেতে প্রত্যাবর্তনের ম্যাচে। যেখানে শেষ করেছিলেন, সেখান থেকেই আবার শুরু করলেন। ম্যাক্সিসুলভ ইনিংসে মাত দিলেন লঙ্কানদের।