ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) স্বপ্নের মতো এক অভিষেকে নিজের আগমনী প্রতিভার জানান দিয়েছিলেন। তাঁর গুগলি বুঝতে না পেরে সাজঘরে ফিরেছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি, আম্বাতি রাইডুরা। মাঝে অবশ্য একপ্রকার হারিয়েই গিয়েছিলেন দৃশ্যপট থেকে। কিন্তু এবারের আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের হয়ে নিজের পুরনো রূপে ফিরে আসার বার্তা দিচ্ছেন মায়াঙ্ক মারকান্দে।
আইপিএলে আলো ছড়ানোর পর জাতীয় দলে ডাক পেতেও সময় লাগেনি। ২০১৯ সালেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জাতীয় দলের জার্সিতে অভিষেক ঘটে মার্কান্ডের। স্বয়ং রশিদ খান প্রশংসায় ভাসান তাঁকে। কিন্তু জীবন তো আর রূপকথা নয়। হঠাৎ করেই যেন আড়ালে চলে যান মারকান্দে। জাতীয় দল তো বটেই আইপিএলে একাদশে সুযোগ পেতেই হিমশিম খাচ্ছিলেন। দল পাল্টেছেন বিস্তর, কিন্তু ভাগ্য ফেরেনি। ২০১৯ থেকে ২০২২, এই চার মৌসুমে তিনবার দল বদলে ম্যাচ খেলেছেন মোটে ছয়টি।
২৫ বছর বয়সী এই লেগ স্পিনার বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমার জন্য হতাশার ছিল সময়টা। আইপিএলে দারুণ সময় পার করেছিলাম, জাতীয় দলেও অভিষেক হয়ে যায় দ্রুতই। কিন্তু এরপরই হুট করে নিজেকে একাদশের বাইরে আবিষ্কার করলাম। সবসময় সুযোগের অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে। আমার জন্য সম্পূর্ণ নতুন এক অভিজ্ঞতা ছিল সেই সময়টা। আমি সবসময় নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করেছি এবং চেয়েছি প্রথম সুযোগেই যেন নিজের সামর্থ্যের জানান দিতে পারি।’
এবারের মৌসুমে তাঁকে দলে ভেড়ায় সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ। নতুন দলের হয়েই যেন নিজেকে ধীরে ধীরে ফিরে পাচ্ছেন এই তারকা। শুরুর দুই ম্যাচে একাদশে ছিলেন না তিনি, হায়দ্রাবাদও পায়নি জয়ের দেখা। তৃতীয় ম্যাচে একাদশে ফিরেই চার উইকেট শিকার করে দলকে জয় এনে দেন মারকান্দে। এখনো পর্যন্ত তিন ম্যাচে ছয় উইকেট শিকার করে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি এই লেগ স্পিনার।
তাঁর বোলিংয়ের আমূল পরিবর্তনে রয়েছে ঘরোয়া ক্রিকেটে তাঁর দল পাঞ্জাবের টিম ম্যানেজমেন্টের ভূমিকা। পাঞ্জাব অধিনায়ক মানদ্বীপ সিং এবং কোচ আবিষ্কার সালভির পাশাপাশি ছোটবেলার মেন্টর মুনিশ বালির পরামর্শে নিজের বোলিংয়ের খোলনালচ বদলে ফেলেছেন এই তারকা। ক্যারিয়ারের শুরুর দিনগুলোতে মারকান্দে সবসময় অফস্পিনারদের মতো অ্যাঙ্গেল তৈরি করতে চাইতেন যাতে তাঁর গুগলি আরো দুর্বোধ্য হয়ে উঠে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তাঁর অস্ত্র নির্বিষ হয়ে উঠে ব্যাটসম্যানদের কাছে।
লাল বলের ক্রিকেটে পাঞ্জাবের হয়ে খেলার সময়েই ব্যাপারটা ধরতে পারেন মারকান্দে। বুঝতে পারেন কেবল গুগলি নয়, তাঁকে বোলিংয়ে আরো বৈচিত্র্য আনতে হবে। সেই অনুযায়ী কঠোর পরিশ্রমে আয়ত্ত্বে আনেন লেগস্পিন এবং ফ্লাইটের মতো অস্ত্র। তিনি বলেন, ‘রঞ্জি ট্রফি আপনাকে ধৈর্য্য ধরতে শেখাবে। সারা মৌসুমজুড়ে আপনাকে বিভিন্ন ধরনের পিচে বল করতে হবে, বিশেষ করে মরা পিচে। সারাদিন জুড়ে ত্রিশ ওভার বল করার পর আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন কোথায় উন্নতি প্রয়োজন।’
তিনি আরো বলেন, ‘আইপিএলে মাঠের বাইরের থাকাকালীন সময়ে আমি চিন্তা করতাম আমার বোলিংয়ে কোথায় উন্নতি আনতে হবে। কোন কোন জায়গাতে আরো কাজ করতে হবে। এরপর ঘরোয়া মৌসুমটা ভালো কাটানোর পর আমি আত্নবিশ্বাস ফিরে পাই। ভালো জায়গায় বল করতে পারছি, আমি সেই ছন্দটা ধরে রাখতে চাই।’
নিজের ছোটবেলার কোচের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন মারকান্দে। তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালে সবকিছু দ্রুত ঘটছিলো। তরুণ বয়সেই সাফল্যের চূড়ায় উঠলেও মাটিতে আছড়ে পড়তে সময় লাগেনি। আমি ছোটবেলার কোচ বালি স্যার আমাকে সবসময় উৎসাহ দিয়েছেন। তাঁর কারণেই আমি পেসার থেকে লেগস্পিনার হয়েছি। অনূর্ধ্ব-১৪ ক্রিকেট খেলার সময় আমি পেসার ছিলাম। কিন্তু তিনি আমার বোলিংয়ের ভিডিও দেখে লেগস্পিনার হওয়ার পরামর্শ দেন।’
২৫ বছর বয়সী এই তারকা তাঁর ঘরোয়া ক্রিকেটের অধিনায়ক এবং কোচকেও ধন্যবাদ জানান নিয়মিত সুযোগ দেবার জন্য। মারকান্দে বলেন, ‘আমার অধিনায়ক মানদ্বীপ সিংয়ের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। তিনি আমার সাথে নিয়মিত কথা বলতেন, খারাপ সময়ে পাশে থেকেছেন, প্রতিনিয়ত উৎসাহ দিতেন ভালো করার। এছাড়া আমাদের কোচ আবিষ্কার সালভি আমার পুরো চিন্তাশক্তিতে বদল এনেছেন। খেলার প্রতি আমার দৃষ্টিভক্তিই বদলে দিয়েছেন তিনি।’
কেবলমাত্র ভারতীয় ক্রিকেট নয়, নিজের বোলিং প্রতিভা দিয়ে গোটা ক্রিকেট বিশ্বের নজর কেড়েছেন মারকান্দে। পাকিস্তানি তারকা রশিদ লতিফ তাঁর ইউটিউব চ্যানেলে বলেন, “মায়াঙ্ক মারকান্দে নামটা মনে রাখবেন। তাঁর বলে গতি আছে, হাওয়ায় বলকে ভাসাতে জানে। রবি বিষ্ণোই ভালো, কিন্তু মারকান্দের মতো কারুকাজ জানে না। সে রশিদ খান ঘরানার বোলার, তাঁর গুগলি ব্যাটসম্যানদের ভালোই বেকায়দায় ফেলে। আগামী দুই বছরের মাঝে সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মাতাবে।’