মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের আড়ালের নায়ক

টুর্নামেন্ট শুরুর আগে কেউই হয়তো ভাবেনি এশিয়া কাপের এবারের চ্যাম্পিয়ন দলটির নাম হবে শ্রীলঙ্কা। এমনকি সুপার ফোরে জায়গা করে নেয়ার পরেও শিরোপার দৌড়ে সবার শেষে রাখা হয়েছিল দলটিকে। কিন্তু সবাই বিস্মিত করে ঠিকই মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট নিজেদের করে নিয়েছে দ্বীপরাষ্ট্রটি। স্রেফ ভাগ্যের জোরে নয়; টানা পাঁচ ম্যাচ জিতে আধিপত্য বিস্তার করেই এমন কীর্তি গড়েছে তারা।

পুরো আসর জুড়েই নজর কেড়েছে শ্রীলঙ্কার ‘টিম’ হয়ে ওঠা। উইকেট সংগ্রাহক বোলার, সবচেয়ে বেশি রান, ইকনোমিক্যাল বোলিং কিংবা সর্বোচ্চ স্ট্রাইক রেট – কোন বিভাগেই নাম্বার ওয়ান হয়নি শ্রীলঙ্কার কোন ক্রিকেটার। এত কিছুর পরেও দলটি সবার সেরা হয়েছে কারণ তারা দল হিসেবে খেলতে পেরেছে।

তবে কয়েকজন খেলোয়াড়ের নাম আলাদা করে বলতেই হয়। এর মাঝে টুর্নামেন্ট সেরা ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা এবং ম্যান অব দ্য ফাইনাল ভানুকা রাজপাকসের নাম সবার মুখে মুখে। এই দুইজন ছাড়াও আরো কয়েকজন রয়েছেন যাদের অবদানের স্বীকৃতি আলাদাভাবে মেলেনি।

  • দাসুন শানাকা

দাসুন শানাকাকে কখনো ভবিষ্যৎ অধিনায়ক হিসেবে ভাবা হয়নি। কিন্তু গত বছর তৎকালীন প্রেক্ষাপটে এক রকম বাধ্য হয়েই অধিনায়কের দায়িত্ব দেয়া হয় তাকে। নেতৃত্বভার পাওয়ার পর থেকেই অবশ্য এই অলরাউন্ডার মুগ্ধ করেন ভক্ত-সমর্থকদের। দলের বাজে পারফরম্যান্স, ক্রিকেট বোর্ডে বিশৃঙ্খলা – এসবের মাঝেও নীরবে নিজের কাজ করে গিয়েছেন তিনি। ধীরে ধীরে ভারসাম্যপূর্ণ দল গড়ে তুলেছেন, সতীর্থদের সাহস যুগিয়েছেন। এবং সর্বোপরি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

এবারের এশিয়া কাপেও প্রথম ম্যাচ ছাড়া বাকি ম্যাচগুলোতে শানাকার অধিনায়কত্ব ছিল দেখার মত। তাঁর ফিল্ড সেটআপ, বোলিং চেঞ্জ, একাদশ নির্বাচন সবকিছু ছিল নিঁখুত। এই যেমন ফাইনালের আগে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা এবং প্রমোদ মাধুশানকে সুযোগ দেয়াটা দাসুন শানাকার অন্যতম সেরা সিদ্ধান্ত ছিল। ফাইনালে ডি সিলভা চাপের মুখেও দারুণ ব্যাটিং করেছিলেন; অন্যদিকে মাধুশান বল হাতে চার উইকেট তুলে নেন।

বোলাররা যখন বাউন্ডারি হজম করে কিংবা ফিল্ডাররা মিস ফিল্ডিং করে, তখন সমর্থন দেয়া প্রথম খেলোয়াড় দাসুন শানাকা। একইভাবে সতীর্থদের কেউ ভাল করলে সবার আগে অভিনন্দন জানান তিনিই। অধিনায়কত্ব করাটা শানাকার কাছে আনন্দের, আর তাঁর এই দুর্দান্ত অধিনায়কত্বেই শ্রীলঙ্কা জিতেছে নিজেদের ষষ্ঠ এশিয়া কাপ।

  • দিলশান মাদুশানকা

গত এক দশক ধরেই অনেক উদীয়মান ফাস্ট বোলার তৈরি হয়েছে শ্রীলঙ্কায়। কিন্তু তাদের কেউই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেদের প্রতিভার ছাপ রাখতে পারেনি। তবে গল্পটা ভিন্ন দিলশান মাধুশানকার ক্ষেত্রে, এশিয়া কাপের মত বড় মঞ্চে ঠিকই নিজের সেরাটা দিয়েছেন এই পেসার৷ গতি সুইং আর বাউন্সারের সাথে মাধুশানকার আগ্রাসন ছিল নজরকাড়া।

এই লঙ্কান বোলার বিরাট কোহলির উইকেট পেয়েছেন, দুই ম্যাচেই চাপে রেখেছেন বাবর আজমকে, একইসাথে প্রশংসা কুড়িয়েছেন ওয়াসিম আকরামের মত কিংবদন্তির।

  • প্রমোদ মাদুশান

স্পিন নির্ভর দেশে প্রমোদ মাদুশান বেড়ে উঠেছিলেন মিডিয়াম পেসার হিসেবে। পরবর্তীতে হয়ে ওঠেন পুরোদস্তুর এক ফাস্ট বোলার। তবু প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ঠিকঠাক সুযোগ পাওয়া হয়নি তাঁর, কিন্তু ঘরোয়া টি-টোয়েন্টিতে সুযোগ পেতেই তাঁর সামর্থ্য নজরে আসে নির্বাচকদের।

অপ্রত্যাশিত কিছুর আশায় অনভিজ্ঞ এই ডানহাতিকে এশিয়া কাপে সুযোগ দেন দাসুন শানাকা। অধিনায়কের ভরসার প্রতিদান দিতে ভুল হয়নি তাঁর, ফাইনালে বাবর আজম এবং ফখর জামান সহ মোট চারজন ব্যাটারকে প্যাভিলিয়নের পথ দেখিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।

  • পাথুম নিশাঙ্কা ও কুশাল মেন্ডিস 

পাথুম নিশাঙ্কা এবং কুশাল মেন্ডিস – নাম দুইটি শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে বেশ পরিচিত। একদিকে অধারাবাহিকতার কারণে সমালোচনায় ছিলেন কুশল মেন্ডিস, অন্যদিকে নিশাঙ্কার স্ট্রাইক রেট ছিল হাস্যরসের বিষয়। কিন্তু অধিনায়ক দাসুন শানাকা পরিকল্পনা করেছেন এই দুইজনকে নিয়েই।

অ্যাংকরিং রোলে ছিলেন নিশাঙ্কা এবং উড়ন্ত সূচনা এনে দেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে মেন্ডিসকে। ভারত এবং পাকিস্তানের বিপক্ষে দুই অর্ধশতকের পাশাপাশি আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৩৫ রানের কার্যকরী এক ইনিংস খেলা নিশাঙ্কা নিজের কাজে সফল হয়েছেন। একইভাবে প্রায় প্রতি ম্যাচে ঝড়ো শুরু এনে দিয়েছেন কুশল মেন্ডিস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link