টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এক কথায় ব্রাত্য ছিলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক থাকাকালীন সময় থেকেই মিরাজের উপর বাড়তি নজর ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেট কর্তা থেকে শুরু করে সাধারণ দর্শকদের। যথারীতি নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ রেখে তিনি নিজেকে আবিষ্কার করলেন জাতীয় দলের জার্সিতে। অভিষেক টেস্ট ম্যাচটা তো ছিল এক কথায় অবিস্মরনীয়। নিজেকে সময়ের সাথে টাইগারদের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত করেছেন মেহেদি হাসান মিরাজ।
তবে সেটা ওয়ানডে আর টেস্টে। মূলত একজন বোলার হিসেবেই বিবেচিত হতে শুরু করেন তিনি। তাঁর ব্যাটিং সত্ত্বাটা ক্রমশ যেন বিলীন হয়ে যেতে থাকে। তবে মিরাজ রীতিমত একজন যোদ্ধা, তিনি প্রতিবাদি। সুযোগ পেলেই তিনি চিৎকার করে জানান দেন তিনি পুরোদস্তুর একজন অলরাউন্ডার। তবুও একটা মত বাংলাদেশ ক্রিকেটের চারিপাশে ঘুরপাক খেয়েছে মিরাজ নাকি টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের সাথে মানানসই নয়।
২০১৬ সাল থেকে মিরাজ খেলছেন জাতীয় দলের হয়ে। তবে এই দীর্ঘ সময়ে তিনি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন কেবল ১৬টি। তবে ২০১৮ সালের পর দীর্ঘ এক বিরতিতে চলে যান মিরাজ। টি-টোয়েন্টি দলের আশেপাশেও যেন তাঁর পদচিহ্ন পাওয়া দুষ্কর ছিল। হঠাৎ করেই পরিবর্তনের পালে লাগে হাওয়া। দীর্ঘ বছর চারেকের বিরতির পর আবারও জাতীয় টি-টোয়েন্টি দলের ত্রিসীমানায় মিরাজ। কিছুদিন আগে শেষ হওয়া এশিয়া কাপের দলের সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি।
আর আবারও প্রতিবাদী কন্ঠস্বরটা বলিষ্ঠ হয়ে ওঠে। তিনি আবারও প্রমাণ করেন, মিরাজ শুধু বোলার নয়, সে পুরোদস্তুর অলরাউন্ডার। এশিয়া কাপে ভিন্ন এক রোলে তিনি। বেশ বড় এক চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশের বাঁচা-মরার লড়াইয়ে কঠিন এক দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে তিনি নেমে পড়েন ওপেনিং করতে।
খানিক সফলতার দেখাও পান। মেকশিফট ওপেনার হিসেবে তিনিই এখন পর্যন্ত সফল। তাঁর সঙ্গী হিসেবে হুট করে জাতীয় দলের ঠিকানা নতুন করে খুঁজে পাওয়া সাব্বির রহমান এখনও নিজের রোলে মানিয়ে নিতে পারেননি। তবে সেদিক থেকে ব্যতিক্রম মিরাজ।
তিনি এই বছর তিনটি ম্যাচ ইতোমধ্যেই খেলে ফেলেছেন। এশিয়া কাপের এক ম্যাচ ও আরব আমিরাতে বিপক্ষে দুই ম্যাচ। এই তিন ম্যাচে তিনি রান করেছেন ৯৬ রান। এই সময় তাঁর স্ট্রাইকরেট ছিল ১২৪ এর আশেপাশে। তিনি খুব বেশি রান করেছেন কিংবা খুব দ্রুত রান করেছেন বিষয়টা তা নয়। দল তাঁর কাছ থেকে যা চেয়েছে তিনি সেটাই করবার চেষ্টা করেছেন। আরব আমিরাতের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচের পর তিনি সেটাই বলেছিলেন।
তিনি বলেন, ‘ওপেনার হিসেবে আমার কাছে হয়তো অনেক বড় রান আশা করা হয় না। আমি যদি ছোট ছোট ইমপ্যাক্ট ইনিংস খেলতে পারি, তাহলে দলের জন্য ভালো হবে। সেভাবেই নিজেকে তৈরি করছি।’
তিনি তাই ইনিংসের শুরুটা করে দিচ্ছেন। একটা স্থিতিশীল শুরু। যাতে করে পরবর্তীতে ব্যাট করতে নামা ব্যাটাররা একটু স্বস্তি নিয়ে খেলতে পারে। মিরাজ সে কাজটা করে দিচ্ছেন। হঠাৎ করে একেবারে দৃশ্যপটের বাইরে থেকে হাজির হয়ে নিজের সামর্থ্যের আবারও প্রমাণ রাখছেন তিনি।
নিজেকে নতুন রোলে মানিয়ে নিচ্ছেন মিরাজ। বাংলাদেশের নতুন দিনের পরিকল্পনার সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টারও কমতি নেই। বাংলাদেশের মেকশিফট ওপেনারের নিভু নিভু পরিকল্পনার প্রদীপটা জ্বালিয়ে রাখছেন মিরাজ। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে তিনি হয়ত বেশ দারুণ কিছু ইনিংস উপহার দিতে পারবেন।
বুদ্ধিদীপ্ত মিরাজ পাওয়ার প্লের ব্যবহারটা দারুণভাবে করতে পারেন। সে প্রত্যাশাই হয়ত করবে টাইগার টিম ম্যানেজমেন্ট। তাছাড়া বোলার মিরাজের কার্য্যকারিতা নিশ্চয়ই আর নতুন করে বলবার কিছু নেই। কোন এক পরিকল্পনার সফলতা নিশ্চয়ই টাইগার টিম ম্যানেজমেন্টকে খানিকটা আত্মবিশ্বাস জোগাবে।