স্মৃতির পাতায় অ্যাডিলেড কাব্য

বাংলা টাইগার্স নকড দ্য ইংলিশ লায়ন্স আউট অব দ্য ওয়ার্ল্ড কাপ – নাসের হুসেইনের কণ্ঠ-নিঃসৃত অমৃত বাক্যটা বোধহয় লাল-সবুজের কোন ভক্তেরই ভোলার কথা নয়। ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপে সেদিন কি এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে গিয়েছিল, কি অবিস্মরণীয় একটা অধ্যায় যোগ হয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেটের রূপকথায়। এখনো পুরনো স্মৃতি ঘাঁটতে গেলেই সবার আগে সেটার কথা বলতে হয়।

নয়ই মার্চ – ঋতুর হিসেবে তখন শীত পেরিয়ে বসন্তকাল। না ঠান্ডা, না উষ্ণ এমন সময়ে সমর্থকরা সবাই টিভিসেটের সামনে বসেছিল কোন আশা ছাড়াই। ফর্ম যেমনই হোক, দলটা ইংল্যান্ড; জয়ের চেয়ে তাই ভাল খেলতে পারার দিকেই বোধহয় মনোযোগ বেশি ছিল।

কিন্তু মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আর মুশফিকুর রহিমের জুটি অন্য একটা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তাঁদের অনবদ্য ব্যাটিংয়ে মনে হচ্ছিলো আজ বুঝি ইতিহাস গড়বে টাইগাররা। খানিক পরে রিয়াদ প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে সেঞ্চুরি পূর্ণ করার মধ্য দিয়ে ইতিহাস গড়েন অবশ্য। অন্যদিকে, মুশি ইতিহাসের অংশ হতে না পারলেও আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ড্রেসিংরুমে লড়াইয়ের জ্বালানি এনে দিয়েছিলেন।

২৭৬ রানের লক্ষ্য, খানিকটা চ্যালেঞ্জিং হলেও কঠিন হওয়ার কথা নয়। তাই ইয়ান বেল কিংবা জশ বাটলাররা যখন অনায়াসে রান করছিলেন তখন বিমর্ষ হয়েই বসে থাকতে হয়েছিল ভক্তদের। কিন্তু অধিনায়ক ম্যাশ হাল ছাড়তে নারাজ; পেসারদের ব্যবহার করে একের পর এক উইকেট তুলে নিয়েছিলেন তিনি। ক্রিস জর্ডান যেভাবে রান আউট হয়েছেন, তাতে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল ভাগ্য আজ বাংলাদেশের পক্ষেই।

এরপর আর না বললেও হবে; রুবেল হোসেনের দুনিয়া কাঁপানো দুইটি ইয়র্কার, নাসের হুসেইনের মহাকাব্যিক কিছু মুহূর্ত আর মাশরাফির মাটিতে লুটিয়ে পড়া – বাংলাদেশীরা তখন পৃথিবী জয়ের স্বাদ নিতে ব্যস্ত।

দুঃসহ যন্ত্রণা কাটিয়ে ইংল্যান্ড যদিও নতুন শুরু পেয়েছে; পরের বিশ্বকাপেই ট্রফি জিতেছে তাঁরা। অথচ বাংলাদেশ প্রায় এক দশক পরেও একই জায়গায় আছে; বরং বলা যায় পিছিয়েছে আরো খানিকটা। সেজন্য অ্যাডিলেড কাব্যকে ঘিরে আনন্দের পাশাপাশি আক্ষেপও আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link